চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে সুপার কাপের শেষ চারে ওঠার পর এক মাসেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট কে হারাতে না পারার আফসোস ইস্টবেঙ্গল এফসি নিশ্চয়ই ভুলতে চায় সুপার কাপের খেতাব জিতে। তবে সে জন্য এখনও তাদের দু-দু’টি কঠিন ধাপ পেরোতে হবে। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে তাদের জিততে হবে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে এবং ফাইনালে উঠলে হয় এফসি গোয়া, নয় মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে জিততে হবে তাদের।

তবে ফাইনাল এখন দূরে। তার আগে সেমিফাইনালের হার্ডল পেরনোও সোজা হবে না লাল-হলুদ বাহিনীর পক্ষে। গ্রুপ পর্বে ডেম্পোর বিরুদ্ধে যে ভাবে ৮৯ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে জয় হাতছাড়া হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের, তা নিয়ে এমনিতেই অনেক আফসোস করতে হয় অস্কার ব্রুজোনের দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-কে চার গোলে হারিয়ে অবশ্য দল ছন্দে ফিরে আসে। তবে কলকাতা ডার্বিতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারিয়ে শেষ চারে উঠতে পারলে যতটা তৃপ্তি পেতে পারত তারা, ততটা পায়নি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলে সেই দুঃখের কিছুটা হলেও ভুলতে পারবে তারা। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই দাপুটে ও গোছানো ফুটবল খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। ডার্বিতে ড্র করলেই যে শেষ চারে যাবে তারা, তা জানা সত্ত্বেও শুরু থেকে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ও গোলরক্ষককে বেশ চাপে রেখেছিল তারা। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় ইস্টবেঙ্গলই দাপুটে ফুটবল খেলে। কিন্তু সঠিক ফিনিশিংয়ের অভাবে একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি তারা।

নক আউট পর্বের প্রস্তুতির জন্য সপ্তাহ খানেক আগেই দল নিয়ে গোয়ায় চলে এসেছেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই এই সিদ্ধান্ত তাদের। সুপার কাপ জেতার জন্য যে তারা মরিয়া, তা তাদের এই উদ্যোগেই স্পষ্ট। ভাল প্রস্তুতি সারার পর লাল-হলুদ শিবিরে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কোচের কথা শুনে অন্তত সে রকম মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।

কলকাতার এক ইউটিউব চ্যানেলকে অস্কার বলেন, “নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নামতে চাই না আমরা। সব সময় ইতিবাচক থাকতে চাই। মরশুমের শুরু থেকে আমরা ভাল খেলছিযদিও কিছু জায়গায় আমাদের সমস্যা হয়। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কম্বিনেশন তৈরি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সময় দেওয়াটা জরুরি ছিল এবং এখন সবাই বুঝতে পারছে যে আমরা কতটা তৈরি খেতাবের জন্য লড়াই করতে”।

তাদের প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি সেমিফাইনালের আগে এক মাস সময় পেয়ে যাওয়ায় নিজেদের দলটা বেশ ভাল করে গুছিয়ে নিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের মতোই পাঁচ বিদেশিকে নিয়ে দল নামাবে তারা। সম্প্রতি তারা ২৯ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান উইঙ্গার বেদে আমারাচি অসুজি-কে সই করিয়েছে, যিনি তাদের আক্রমণ বিভাগকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।

নসুঙ্গুসি এফিয়ং পাঞ্জাবের দলের আক্রমণে অন্যতম সেরা অস্ত্র। গত মরশুমে উজবেকিস্তানের সর্বোচ্চ স্তরের ক্লাব ফুটবলে সাতটি গোল করেন এই ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। এ ছাড়া বসনিয়ান মিডফিল্ডার সামির জেলস্কোভিচ তাঁর দলের মাঝমাঠে এক বড় ভরসা। যিনি পাঞ্জাব এফসি-র বেশিরভাগ আক্রমণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের রক্ষণে খাইমিনথা লুংডিমও বড় ভরসা। গ্রুপ লিগে পাঞ্জাব এফসি একটিও গোল খায়নি। তারা ছাড়া শুধু মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও বেঙ্গালুরু এফসি এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে।

বেঙ্গালুরুকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে ওঠার আগে তারা গোকুলাম এফসি ও মহমেডান এসসি-কে তিনটি করে গোল দেয়। ইস্টবেঙ্গলও অবশ্য গ্রুপ পর্বে ছ’টি গোলই করেছে। কিন্তু হজম করেছে দু’টি। তাই পাঞ্জাব এফসি-র মতো শক্তিশালী আক্রমণ বিভাগকে আরও তৎপরতার সঙ্গে সামলাতে হবে তাদের।

প্রতিপক্ষকে নিয়ে লাল-হলুদ কোচ বলেছেন, “ওদের নাইজেরিয়ান লেফট উইঙ্গার সম্পর্কে জানি। ওদের একজন ব্রাজিলিয়ান সেন্টার ব্যাক আছে। ওদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছি আমরা। ওরা সর্বশক্তি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খেলবে। ওরা যথেষ্ট সংঘবদ্ধ ও লড়াকু দল। প্রতিপক্ষদের ওরা যথেষ্ট বেগ দেয়। গ্রুপ পর্বেই সেই প্রমাণ দিয়েছে। ফলে আমরা খুবই কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে নামব। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা ওদের থেকে একটু হলেও এগিয়ে। আমরা যদি খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তা হলে আমাদের জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে”।

তবে অস্কারের চিন্তা তাঁর রক্ষণ নিয়ে। কারণ, নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার জয় জয় গুপ্তা কে সম্ভবত পাবেন না তিনি। সদ্য পায়ে চোট পেয়েছেন তিনি। ফলে সম্ভবত তাঁকে বাদ দিয়ে দল নামাতে হতে পারে অস্কারকে। তবে তাঁর দলের বিদেশিরা ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল, মিডফিল্ডার মিগেল ফেরেইরা, সল ক্রেসপো, মহম্মদ রশিদ এবং দুই স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুসুকি ও হামিদ আহদাদ—সবাই ভাল ফর্মে রয়েছেন। এটাই কোচ অস্কার ব্রুজোনের আত্মবিশ্বাসের প্রধান উৎস।

দলের ভারতীয় তারকারাও গ্রুপ পর্বে উজ্জীবিত ফুটবল খেলেছেন। রক্ষণে আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গা, মাঝমাঠে শৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ সিং, বিপিন সিং, পিভি বিষ্ণু এবং আক্রমণে এডমন্ড লালরিন্দিকা, ডেভিড লালনসাঙ্গা কোচকে ভরসা দেওয়ার জন্য এ বারও তৈরি। এই টুর্নামেন্টের জন্য একটা ভাল কম্বিনেশন ইস্টবেঙ্গল তৈরিই করে নিয়েছে বলা যায়। সম্প্রতি গোয়ায় এক প্রস্তুতি ম্যাচে ডেম্পো এসসি-কে ৪-১-এ হারায় তারা। তাই সমর্থকদের আশা, তাদের প্রিয় দল ফাইনালে উঠতে পারবে।

বৃহস্পতিবারই রাতের ম্যাচে অপর সেমিফাইনাল হতে চলেছে পশ্চিমী ডার্বি। এই ম্যাচে মুখোমুখি হবে আরব সাগরপাড়ের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এফসি গোয়া এবং মুম্বই সিটি এফসি। গ্রুপ পর্বে কেরালা ব্লাস্টার্স ও দিল্লি এফসি-কে হারিয়ে শেষ চারে ওঠে মুম্বইয়ের দল। তবে তারা রাজস্থান এফসি-র কাছে হেরে যায়। যার ফলে কষ্ট করেই শেষ চারে পৌঁছতে হয়েছে তাদের।

অন্যদিকে, এফসি গোয়া-ও গ্রুপ পর্বে দু’টি ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। জামশেদপুর এফসি ও ইন্টার কাশীকে হারায় তারা। তবে হেরে যায় নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে। তারা সম্প্রতি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে খেলায় ম্যাচের মধ্যে রয়েছে। এই ব্যাপারটা তাদের মুম্বইয়ের চেয়ে হয়তো কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে।

টুর্নামেন্ট- এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬

ম্যাচ- ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম পাঞ্জাব এফসি (প্রথম সেমিফাইনাল)

কিক-অফ- বিকেল ৪.০০

ম্যাচ- এফসি গোয়া বনাম মুম্বই সিটি এফসি (দ্বিতীয় সেমিফাইনাল)

কিক-অফ- রাত ৮.০০

ভেনু- পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা

লাইভ স্ট্রিমিং- জিও হটস্টার

টিভি সম্প্রচার- স্টার স্পোর্টস খেল