আইএসএলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ের মাধ্যমে সুপার কাপ ফাইনালে উঠল ইস্টবেঙ্গল এফসি বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে পাঞ্জাবের দলকে ৩-১-এ হারিয়ে এই নিয়ে তৃতীয়বার তারা সুপার কাপের ফাইনালে উঠল। রবিবার তারা ফাইনালে দ্বিতীয়বার সুপার কাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামবে .... বিরুদ্ধে। এ দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় এফসি গোয়া তারাও এই নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য সুপার কাপ ফাইনালে উঠল।

মারগাওয়ের পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এ দিন দল মাঠে নামার আগে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেছিলেন, দল অনেক বেশি খিদে ও আগ্রাসন নিয়ে মাঠে নামবে। এ দিন তাদের পারফরম্যান্সেও কোচের সেই কথার প্রতিফলন দেখা যায়। আগাগোড়া দাপুটে ফুটবল খেলে এদিন জয় অর্জন করে নেয় তারা।

তবে এই আনন্দের মাঝেও লাল-হলুদ শিবিরকে হতাশ করল কোচের লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া। এ দিন প্রথমে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেছিলেন রেফারি অশ্বিন। কিন্তু তাতেও সংযত হতে পারেননি তিনি। এর পরেও আগ্রাসী আচরণ করায় তাঁকে লাল কার্ড দেখানো হয়। ফলে ফাইনালে মাঠে থাকতে পারবেন না তিনি।

এই নিয়ে তৃতীয়বার সুপার কাপের ফাইনালে উঠল ইস্টবেঙ্গল। ২০১৮-য় তারা ফাইনালে উঠেও বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ১-৪-এ হেরে যায়। ২০২৪-এ ওডিশা এফসি-কে ৩-২-এ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এ বার তাদের সামনে দ্বিতীয়বার সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ।

এ দিন ম্যাচের শুরুতেই মার্কিন মিডফিল্ডার মহম্মদ রশিদ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। তবে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন পাঞ্জাবের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার দানিয়েল রামিরেজ। তবে প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে গোল করে ফের ব্যবধান তৈরি করেন ইস্টবেঙ্গলের ইতালিয়ান ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি এই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন লাল-হলুদ অধিনায়ক সল ক্রেসপো শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই জেতে তারা।

ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথাতেই প্রতিপক্ষের গোলের মুখ খুলে ফেলতে সফল হন রশিদ। কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করে বক্সের বাইরে পাঠিয়ে দেন পাঞ্জাব ডিফেন্ডার পরমবীর। কিন্তু সেই ক্লিয়ারেন্সটি গিয়ে পড়ে রশিদের পায়ে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নীচু ও জোরালো শটে বল গোলের দিকে পাঠান, যা গোলকিপার মুহিত শাবিরকে পরাস্ত করে জালে জড়িয়ে যায়। শাবির হাত লাগালেও বল থামাতে পারেননি।

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন দানিয়েল রামিরেজ, সামির জেলস্কোভিচরা। ৩-৪-২-১ ছকে স্ট্রাইকার নসুনগুসি এফিয়ংয়ের ওপর ভরসা করে খেলছিলেন তাঁরা। প্রায় আধঘণ্টার খেলায় পাঞ্জাব যখন ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করে, তখনই বক্সের ভিতরে বিপিন সিং-এর হাতে বল লাগায় পেনাল্টি পেয়ে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ। রামিরেজ ঠাণ্ডা মাথায় প্রভসুখন গিলকে ভুল দিকে পাঠিয়ে স্কোরলাইন ১-১ করে দেন

সম্ভবত রেফারির পোনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অখুশি ছিল লাল-হলুদ শিবির। এই সময়ে রশিদ এবং ব্রুজোনকে সতর্ক করা হলেও লাল-হলুদ বাহিনী তাতে খুব একটা আমল দেয়নি। বরং সেই ক্ষোভকে শক্তিতে রূপান্তর করে প্রথমার্ধের শেষে আরেকটি জোরালো আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সফলও হয়। সংযুক্ত সময়ে মিগুয়েল ফেরেইরার কর্নার কিক থেকে হেড করে শাবিরকে পরাস্ত করে গোলের পথ খুঁজে নেন সেন্টার-ব্যাক কেভিন সিবিল

আক্রমণ শক্তি বাড়াতে ফরোয়ার্ড মহম্মদ সুহেল এবং নাইজেরিয়ান বেদে ওসুজিকে নামায় পাঞ্জাব এফসি এবং মাঝমাঠে নিখিল প্রভুর পাশে জেলস্কোভিচকে মোতায়েন করে। ওসুজির আগমনে পাঞ্জাবের আক্রমণে কিছুটা গতি আসে রামিরেজের সঙ্গে ভাল বোঝাপড়াও গড়ে ওঠে তাঁর। তবু ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না তাঁরা, বারবার আটক হয়ে যান ইস্টবেঙ্গলের সংগঠিত রক্ষণভাগে। যা সামলাচ্ছিলেন মূলত সিবিল ও আনোয়ার আলি।

রশিদ, ফেরেইরা এবং ক্রেসপো মাঝমাঠে খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখেন, যাতে পাঞ্জাব আক্রমণে গতি বাড়াতে না পারে শেষে ২০ মিনিটেরও কম সময় বাকি থাকতে, ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক ক্রেসপোই পাঞ্জাবের দূর্গে ফের চরম আঘাত হানেন।

হিরোশি ইবুসুকি সামনে বল ধরে তা ফেরেইরার পায়ে তুলে দেন। বক্সের ভেতর ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে বক্সের বাইরে ক্রেসপোর জন্য পাস সাজিয়ে দেন ফেরেইরা। স্প্যানিশ তারকা বলটিকে নিজের সামনে কিছুটা গড়িয়ে নিয়ে নীচু শক্তিশালী শটে পোস্টের কোণা দিয়ে গোলে পাঠান, যা দলকে দুই গোলে এগিয়ে দেয়। এর পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাঞ্জাবের দলটি।

এ দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে খেলা এফসি গোয়া ২-১-এ হারায় মুম্বই সিটি এফসি-কে। দু’বারের সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন এফসি গোয়া জোড়া গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর একটি গোল শোধ করে মুম্বই সিটি এফসি। প্রথমার্ধে গোয়ার দলের পক্ষে তিন মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল করেন ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ (২১) ও ডেভিড তিমর (২৩)। মুম্বইয়ের দলের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (৫৯)। এই নিয়ে টানা তিনবার সুপার কাপের সেমিফাইনালে উঠেও ছিটকে গেল মুম্বই সিটি এফসি।