কলকাতা ডার্বির গোলশূন্য ড্রয়ে সুপার কাপের শেষ চারে ইস্টবেঙ্গল
ড্র করলেই যে শেষ চারে যাবে, তা জানা সত্ত্বেও এ দিন শুরু থেকে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি।
সুপার কাপের কলকাতা ডার্বি শেষ হল গোলশূন্য ড্র-য়ে। তবে তাতে লাভ হল ইস্টবেঙ্গল এফসি-রই। কারণ, এই ড্রয়ের ফলে সেমিফাইনালে উঠে পড়ল লাল-হলুদ বাহিনী এবং টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল গত আইএসএল মরশুমের কাপ ও শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ।
শুক্রবার গোয়ার ফতোরদায় জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে নামার আগেই ইস্টবেঙ্গল গোলপার্থক্যে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে (৪-২-এ) এগিয়ে ছিল। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রুপ থেকে নক আউটে যাওয়ার রাস্তায় দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে গোলপার্থক্যে এগিয়ে থাকা দলকেই সেমিফাইনালে তোলা হবে। তাই শুক্রবারের এই ড্র শেষ চারের দরজা খোলার চাবি তুলে দিল অস্কার ব্রুজোনের দলের হাতে।
তারা ড্র করলেই যে শেষ চারে যাবে, তা জানা সত্ত্বেও এ দিন শুরু থেকে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের রক্ষণ ও গোলরক্ষককে বেশ চাপে রাখে তারা। অথচ, শেষ চারে উঠতে তাদের জয় চাইই, তা জেনেও শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় ইস্টবেঙ্গলই দাপুটে ফুটবল খেলে। অথচ ম্যাচের প্রায় ৬০ মিনিট পর্যন্ত তিন বিদেশি ফরোয়ার্ডকে সবুজ-মেরুন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়।
ম্যাচের শেষ দিকে এক এক করে তাঁরা মাঠে নেমেও গোলের মুখ খুলতে পারেননি তাঁরা। সারা ম্যাচে ন’টির মধ্যে মাত্র একটি শট গোলের লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে বাগান-বাহিনী। তাও তা প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি আইএসএল খেতাবজয়ীরা। ইস্টবেঙ্গল ১২টি-র মধ্যে চারটি শট গোলে রাখে। তাই ম্যাচের শেষে দলের এই গোল করার অক্ষমতার সমালোচনা শোনা যায় বাগান কোচ মোলিনার মুখে।
এ দিন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যেখানে প্রথম এগারোয় তিন বিদেশিকে রেখে শুরু করে, সেখানে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে ছিলেন পাঁচ বিদেশি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সবুজ-মেরুন আক্রমণে জেমি ম্যাকলারেন ছাড়া কেউই ছিলেন না। তাঁকে সাহায্য করার জন্য দলের দুই সেরা ভারতীয় ফরোয়ার্ড লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংকে নামান কোচ হোসে মোলিনা।
ইস্টবেঙ্গল তাদের আক্রমণ বিভাগকে বিদেশিতে ভরিয়ে রাখে। হামিদ আহদাদকে সামনে রেখে তাঁর সঙ্গে সল ক্রেসপো, মহম্মদ রশিদ, মিগেল ফিগেরাকে মোতায়েন রাখেন কোচ অস্কার ব্রুজোন ও সঙ্গে নাওরেম মহেশ সিং-এর আক্রমণাত্মক ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য।
দলের এই বিন্যাস দেখেই আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছিল শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তোলার পরিকল্পনা নিয়ে নামবে লাল-হলুদ ব্রিগেড। খেলা শুরুর পর সেটাই দেখা যায়। ম্যাচের শুরুর দিকে মোহনবাগান রক্ষণই বেশি চাপে ছিল। ২৪ মিনিটের মাথায় ফিগেরার ক্রসে বিপিন সিং-এর অসাধারণ হেড পোস্ট ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। এর চার মিনিট পরেই ক্রেসপোর লব প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে পড়লে মহেশ গোলের চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি।
#OscarBruzon leads the #RedandGoldBrigade to the AIFF Super Cup 2025-26 Semi-Finals! 🥳
— Indian Super League (@IndSuperLeague) October 31, 2025
Watch the #AIFFSuperCup 2025-26 live - Fatorda games on @JioHotstar & @StarSportsIndia Khel, and Bambolim games on @IndianFootball's YouTube channel! 📺#MBSGEBFC #IndianFootball #MBSG… pic.twitter.com/cmLIS4xWXK
প্রথমার্ধে মোহনবাগানের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলকে পাল্টা চাপে ফেলতে আক্রমণে বেঞ্চে বসে থাকা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, রবসন রবিনহো বা জেসন কামিংস-এর মধ্যে দু-একজনকে প্রয়োজন। ৪০ মিনিটের মাথায় কোলাসোর কাট ব্যাকে বল পেয়ে ডি-এর মধ্যে থেকে আপুইয়ার জোরালো শটই ছিল প্রথমার্ধে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের একমাত্র ইতিবাচক আক্রমণ। কিন্তু সেই শট আটকাতে অসুবিধা হয়নি প্রভসুখন গিল-এর।
প্রথমার্ধে যেখানে মোহনবাগান মাত্র দুটি শট নিতে পারে, সেখানে ইস্টবেঙ্গল নেয় ছটি শট, যার মধ্যে দু’টি ছিল লক্ষ্যে। এ দিন ম্যাচ শুরুর মিনিট কুড়ি পর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মাঠের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। তবে বিরতির পর যখন খেলা শুরু হয়, তখন আর বৃষ্টি হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আপুইয়া দুর্দান্ত একটি পাস ইস্টবেঙ্গলের বক্সে পাঠান যাতে হেড দিয়ে গোলের চেষ্টা করেন কোলাসো, যা বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৫০তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে কোলাসোর ফ্রিকিক বক্সে উড়ে এলে তাতে মাথায় ছুঁইয়ে গোলের চেষ্টা করেন টম অলড্রেড। কিন্তু তাঁর হেডও বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এ দিন বিকেলের ম্যাচে ডেম্পো এসসি ও চেন্নাইন এফসি ড্র করায় এই ম্যাচে ড্র করলেই ভাল গোলপার্থক্যের জন্য সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ ছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। জয় অবধারিত ছিল সবুজ-মেরুন বাহিনীর জন্য। অথচ ইস্টবেঙ্গলকেই বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে মিনিট দশেক সবুজ-মেরুন বাহিনীর আক্রমণের পর ফের ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেয় ইস্টবেঙ্গল এবং প্রথমার্ধের মতো ফের তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে রাখতে শুরু করে। ৬০ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে থেকে নেওয়া আহদাদের শট অসাধারণ দক্ষতায় বারের ওপর দিয়ে বার করে দেন বিশাল কয়েথ।
ম্যাচের ৬২ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর সহাল আব্দুল সামাদের জায়গায় জেসন কামিংসকে মাঠে নামায় বাগান-বাহিনী। কিন্তু তাঁকে কড়া নজরে রাখেন কেভিন সিবিল। ফলে সরাসরি আক্রমণে উঠতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণ থেকে দুর্ভেদ্য ডিফেন্ডারদের টেনে বার করে এনে গোলের পথ ফাঁকা করার চেষ্টা করছিলেন।
ম্যাচের ৬৯ মিনিটের মাথায় ফের সেট পিস থেকে হেড করে গোলের চেষ্টা করেন অলড্রেড, তবে এ বারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। এই সময়েই সবুজ-মেরুন বাহিনীর জেতার তাগিদ ও লাল-হলুদের ড্র করার তাগিদ ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে। কারণ, তখন ম্যাচ শেষ হতে আর মিনিট কুড়ি বাকি।
ম্যাচের বয়স ৭৫ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর মনবীর, কোলাসো ও থাপাকে তুলে একসঙ্গে পেট্রাটস, রবসন ও দীপক টাঙরিকে নামান মোলিনা। মাঠে নেমেই গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান রবসন। পেট্রাটস ও কামিংস গোলে তৈরি করে দেন তাঁকে। বক্সের মধ্যে থেকে গোলে শটও নেন ব্রাজিলীয় তারকা। কিন্তু আনোয়ারর গায়ে লেগে তা বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বাগানের ত্রয়ী পরিবর্তনের মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিপিন ও আহদাদকে বসিয়ে দুই ফরোয়ার্ড পিভি বিষ্ণু ও হিরোশি ইবুসুকিকে নামান লাল-হলুদ কোচ। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে সল ক্রেসপো চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় শৌভিক চক্রবর্তী নামেন তাঁর জায়গায়। প্রতিপক্ষের অ্যাটাকারদের মাঝমাঠেই আটকানোর ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে মহেশের জায়গায় এডমন্ড লালরিন্দিকাকেও নামানো হয়।
জয়সূচক গোলের জন্য পাঁচ মিনিট বাড়তি সময় পায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এই সময় শেষ চেষ্টা করে দেখতে শুভাশিসের জায়গায় নামেন সুহেল ভাটকেও নামায় বাগান-বাহিনী। একেবারে শেষ মিনিটে একটি কর্নারও পায় তারা। কিন্তু তাও কাজে লাগাতে পারেননি জেমি ম্যাকলারেনরা।
দলকে সেমিফাইনালে তোলার পর ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন সম্প্রচারকারী সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে খেলার কথা বলেছিলাম ছেলেদের। শিল্ড, ডুরান্ডে যা সমস্যা হয়েছিল, সেগুলি শোধরাতে পেরেছি আমরা। গত বছর আমরা অনেক গোল খেয়েছি। এ বার আর সেটা হচ্ছে না। আমরা আজ মোহনবাগানকে ম্যাচের বেশিরভাগ সময়েই চাপে রেখেছিলাম। ওরা শুধু শেষ ১৫ মিনিটে আমাদের চাপে রাখতে পেরেছে”। সেমিফাইনালে গ্রুপ ‘সি’-র সেরা দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হোসে মোলিনা তাঁর দলের সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের রক্ষণ ভাল হয়েছে। তিন ম্যাচে গোল খাইনি। কিন্তু গোল করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই আমাদের। আজও আমরা সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু গোল করতে পারিনি। এই সমস্যা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আজ ভাল পারফরম্যান্স হয়নি আমাদের”।













