সুপার কাপ শুরুর দিন কলকাতার দুই প্রধানই তাদের সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারল না। শনিবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট জয় পেলেও এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল ইস্টবেঙ্গল এফসি কে।

এ দিন বিকেলে বৃষ্টিস্নাত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এফসি- বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত ভাল ফুটবল খেলে আই লিগের দল গোয়ার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ডেম্পো এসসি শেষ মুহূর্তের গোলে তারা ম্যাচ ২-২-এ শেষ করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয়।

সন্ধ্যার ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট তাদের চেনা প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি-কে ২-০-য় হারিয়ে নক আউট পর্বের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায়। দুই গোলই করেন তাদের অস্ট্রেলীয় তারকা স্ট্রাইকার জেমি ম্যাকলারেন লিগ টেবলে তিন পয়েন্ট নিয়ে তারাই আপাতত গ্রুপ ‘এ’-তে শীর্ষে।

শেষ মুহূর্তে জয় হাতছাড়া

এ দিন বাম্বোলিমের জিএমসি অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল ৮৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পরেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ডেম্পো এসসি- বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করে। ম্যাচের ২৭ মিনিটের মাথায় গোল করে অবশ্য প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল ডেম্পো। মহম্মদ আলির এই এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধ করেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা মিডফিল্ডার নাওরেম মহেশ সিং এবং ৫৭ মিনিটের মাথায় মিগগুয়েল ফেরেরার অসাধারণ গোলে এগিয়েও যায় তারা। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান বজায় রাখতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। ৮৯ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে সোজা জালে বল জড়িয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে কার্যত চলে আসা তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়ে এক পয়েন্ট করে ভাগ করে নেন লকশিমানরাও রাণে।

এ দিন বিদেশিহীন ডেম্পোর বিরুদ্ধে পাঁচ বিদেশি নিয়ে খেলা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল এসসি। সামনে দুই ফরোয়ার্ড জাপানের হিরোশি ইবুসুকি ও মরক্কোর হামিদ আহদাদকে রেখে ৪-৪-২-এ দল সাজান ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন।

খাতায়-কলমে শক্তিশালী দল নিয়ে নামলেও ২৭ মিনিটের মাথায় গোল খায় কলকাতার দল। প্রতিপক্ষের সেটপিস থেকে উড়ে আসা বলের দখল নিতে গোলকিপার দেবজিৎ ঘোষ এগিয়ে এলেও সফল হননি তিনি। বল ছিটকে আসে ডিফেন্ডার মহম্মদ আলির পায়ে। ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে কোনও ভুল করেননি তিনি। গোল শোধ করার একাধিক সুযোগ পেয়েও সেগুলি একের পর এক হাতছাড়া করেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধের সুবর্ণ সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। খেলা শুরুর বাঁশি বাজার মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের মধ্যেই তারা সমতা ফেরায়। বক্সের বাঁ দিক থেকে আসা একটি শট ডেম্পোর গোলরক্ষক আশিস সিবি-র হাত থেকে ছিটকে আসে। ফিরতি বলটি পান মহেশ, যিনি নিচু শটে বলটি জালে জড়িয়ে দেন

৫৭তম মিনিটে দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী। মিগুয়েল ফেরেইরা টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সেরা গোলটি করেন। বক্সের বাঁ দিক থেকে বাইলাইনের প্রায় সমান্তরাল শটে বল জালে জড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান পরিবর্ত মিডফিল্ডার এই অবিশ্বাস্য গোলের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়রা।

কিন্তু প্রথমার্ধের মতোই, আধিপত্য বজায় রাখা সত্ত্বেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় কলকাতার দল। মহেশ অবিশ্বাস্য গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন—তাঁর চমৎকার কার্লিং শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে লকশিমানরাও বক্সের কোণ থেকে নিখুঁত শট নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের আশায় জল ঢেলে দেন এবং দলকে এনে দেন এক পয়েন্ট।

আধিপত্যের ম্যাচে জেমির জোড়া!

সন্ধ্যায় ফতোরদার ম্যাচেও বৃষ্টি ছিল দুই দলের ফুটবলারদের সঙ্গী। বিশেষ করে প্রথমার্ধে। ফলে ম্যাচে গতি ছিল কম। মাটি ঘেঁষা পাস জমা জলে প্রায়ই আটকে যাচ্ছিল। বিরতির পর বৃষ্টি কিছুটা কমলে খেলায় গতি একটু বাড়ে। এ রকম প্রাকৃতিক বাধা সত্ত্বেও আইএসএল চ্যাম্পিয়নদের হাতেই ছিল ম্যাচের রাশ।

ম্যাচের ৩৮ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসো- অনবদ্য ব্যাক হিল থেকে বল পেয়ে জোরালো শটে সোজা জালে জড়িয়ে দেন ম্যাকলারেন। বক্সের সামনে দুই মার্কার তাঁকে ঘিরে ধরলে কোলাসো বাঁ দিক দিয়ে ওভারল্যাপে উঠে আসা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে ব্যাক হিল করে বল বাড়ান কোলাসো। তখন ম্যাকলারেন কার্যত অরক্ষিতই ছিলেন। তিনি প্রথম টাচেই গোলে শট নেন, যা আটকানোর উপায় ছিল না গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজের

এর আগেও একাধিক গোলের সুযোগ পায় কলকাতার দল। কিন্তু সেগুলি কাজে লাগাতে পারেনি তারা। তবে এই গোলের মিনিট তিনেক আগেই চেন্নাইনের মিডফিল্ডার জিতেশ্বর সিং-এর অবধারিত গোলের ঠিকানা লেখা শট যে দক্ষতায় আটকান বিশাল কয়েথ, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।

বিরতির পর গোল শোধের চেষ্টা শুরু করে চেন্নাইন এফসি কিন্তু মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের রক্ষণে বারবার আটকে যায় তারা। তবে কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের এলাকায় সবুজ-মেরুন জার্সির খেলোয়াড়দের ঢোকা কার্যত কঠিন করে তুলেছিল ক্লিফোর্ড মিরান্ডার দল। এ জন্য তাদের কৃতিত্ব অবশ্যই প্রাপ্য। তবে বেশিক্ষণ কলকাতার প্রতিপক্ষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি তারা।

৬৭ মিনিটের মাথাতেই ফের হানা দেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর অ্যাটাকাররা। এ বার শুভাশিস বোস লম্বা কিকে বল পাঠান বাঁ দিকে মনবীর সিং-এর কাছে। মনবীরের ক্রস এসে পৌঁছয় বক্সের মাঝখানে ম্যাকলারেনের কাছে। গোলে বল ঠেলতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি তিনি।

এই গোলের পর মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে আর আটকাতে পারেনি তাদের প্রতিপক্ষ। বরং ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ আসে সবুজ-মেরুন বাহিনীর সামনে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে ম্যাাকলারেনের পরিবর্তে নামা জেসন কামিংস-এর কার্লিং শটে তেমন জোর না থাকায় গোলকিপার তা সামলে নেন।

শেষ মুহূর্তে ব্যবধান কমানোরও সুযোগ তৈরি করেন চেন্নাইনের পরিবর্ত ডিফেন্ডার ক্লুজনার জন। তবে তাঁর দূরপাল্লার শট পোস্টের বাইরের অংশে লেগে বেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাকলারেনের জোড়া গোলেই লিগ টেবলের শীর্ষে উঠে পড়ে বাগান-বাহিনী। তাদের পরের ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে দু’পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়া ডেম্পোর বিরুদ্ধে।