গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪-এর শুরুটা তারা করেছিল সুপার কাপের খেতাবজয় দিয়ে। এ বছরটা তারা ফের সেই সুপার কাপের খেতাব জিতেই শেষ করতে চায়। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের নেতৃত্বে পুরো ইস্টবেঙ্গল এফসি শিবির তাই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।

অন্যদিকে, তাদের প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের ভরপুর সমর্থন পাবে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও তাদের যথেষ্ট ভাল। তাই তাদের আত্মবিশ্বাসের স্তরও বেশ উঁচুতে। রবিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সুপার কাপ ফাইনালে এই দুই আত্মবিশ্বাসী শিবিরের মধ্যে এক হাড্ডাহাড্ডি খেতাবী লড়াই দেখার জন্য প্রস্তুত হোন।

সুপার কাপে বরাবরই ভাল খেলার নজির রেখেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। ২০১৮ থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বার সুপার কাপের ফাইনালে উঠল ইস্টবেঙ্গল। ২০১৮-য় তারা ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ১-৪-এ হেরে যায়। ২০২৪-এ ওডিশা এফসি-কে ৩-২-এ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এ বার তাদের সামনে দ্বিতীয়বার সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ।

অন্যদিকে, এফসি গোয়ার সুপার কাপের ইতিহাস আরও ভাল। যে দু’বার তারা ফাইনালে উঠেছে, সেই দু’বারই তারা খেতাব জিতেছে। এ বারের ফাইনালে সেই একশো শতাংশ সাফল্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঘরের মাঠে নামবেন ব্রাইসন ফার্নান্ডেজরা। ২০১৯-এ চেন্নাইন এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এ বছর মে মাসে, জামশেদপুর এফসি-কে ৩-০-য় হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় গোয়ার আইএসএল দল।

অর্থাৎ, সুপার কাপ দুই দলের কাছেই বেশ পয়া এবং এ বারও দুই দলের সামনেই তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। যদিও ঘরের মাঠে খেলতে হচ্ছে বলে কিছুটা এগিয়ে থেকেই নামবে এফসি গোয়া। পুরো গ্যালারির সমর্থন পাবে তারা। তবে আইএসএলে প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে যেমন অনেকবারই খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের বেশিরভাগ ফুটবলারের, তাই এই নিয়ে খুব একটা ভাবছে না তারা।

বরং ইস্টবেঙ্গল শিবির বেশি উদ্বিগ্ন কোচ অস্কার ব্রুজোনের অনুপস্থিতি নিয়ে। সেমিফাইনালে তিনি লাল কার্ড দেখায় ফাইনালে দলের ডাগ আউটে থাকতে পারবেন না। ফলে দল পরিচালনার কাজ পুরোটাই করতে হবে সহকারী কোচ বিনো জর্জকে।

অক্টোবরের শেষে গ্রুপ পর্বে ডেম্পোর বিরুদ্ধে যে ভাবে ৮৯ মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে জয় হাতছাড়া হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের, তা নিয়ে এমনিতেই অনেক আফসোস করতে হয় অস্কার ব্রুজোনের দলকে। দ্বিতীয় ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-কে চার গোলে হারিয়ে অবশ্য দল ছন্দে ফিরে আসে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট কে হারাতে না পারার আফসোস তারা নিশ্চয়ই ভুলতে চাইবে সুপার কাপ জিতে।

বুধবার সেমিফাইনালে আগাগোড়া দাপুটে ফুটবল খেলে জয় অর্জন করে নেয় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের শুরুতেই মার্কিন মিডফিল্ডার মহম্মদ রশিদ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন পাঞ্জাবের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার দানিয়েল রামিরেজ। তবে প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে গোল করে ফের ব্যবধান তৈরি করেন ইস্টবেঙ্গলের ইতালিয়ান ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি এই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন লাল-হলুদ অধিনায়ক সল ক্রেসপো। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই জেতে তারা।

সেমিফাইনালেই বোঝা যায় কলকাতার লাল-হলুদ বাহিনী বেশ ছন্দে রয়েছে। শনিবার ফাইনালের আগে সাংবাদিক বৈঠকে অধিনায়ক ক্রেসপো বলেন, “এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব কতটা, তা আমরা খুব ভাল করে জানি। তাই আমাদের ড্রেসিংরুমে সবাই ফাইনালে খেলার জন্য রোমাঞ্চিত। ক্লাবের পক্ষে এই খেতাব জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ম্যাচে আমরা ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছি। এই ম্যাচের জন্যও ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। কাল ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই ও ট্রফি জিততে চাই”।

কোচ বিনো জর্জ বলেন, “ডুরান্ড কাপে সেমিফাইনালে হারি, আইএফএ শিল্ডেও ফাইনালে উঠে হেরে যাই। এ বছর এই নিয়ে তৃতীয় ফাইনাল আমাদের। প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া খুবই ভাল দল। তবে আমরা এখানে লড়াই করে কাপ জিততেই এসেছি। এই লড়াইয়ের জন্য আমরা ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিপক্ষকে নিয়েও আমরা যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলব”।

কলকাতার দলের বিদেশিরা, ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল, মিডফিল্ডার মিগেল ফেরেইরা, সল ক্রেসপো, মহম্মদ রশিদ ও স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুসুকি—সবাই ভাল ফর্মে রয়েছেন। এটাই তাদের আত্মবিশ্বাসের প্রধান উৎস। অপর স্ট্রাইকার হামিদ আহদাদ চোট সারিয়ে ফেরার পথে। ফাইনালে তাঁর খেলার সম্ভাবনার কথাও জানালেন বিনো।

দলের ভারতীয় তারকারাও উজ্জীবিত ফুটবল খেলেছেন। রক্ষণে আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গা, মাঝমাঠে শৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ সিং, বিপিন সিং এবং আক্রমণে এডমন্ড লালরিন্দিকা, ডেভিড লালনসাঙ্গা দলকে ভরসা দেওয়ার জন্য এ বারও তৈরি। এই টুর্নামেন্টে একটা ভাল কম্বিনেশন ইস্টবেঙ্গল তৈরি করে নিয়েছে বলা যায়। সেমিফাইনালে তারই প্রতিফলন দেখা যায়।

অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলের মতো এফসি গোয়া-ও গ্রুপ পর্বে দু’টি ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। জামশেদপুর এফসি ও ইন্টার কাশীকে হারায় তারা। তবে হেরে যায় নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে। তারা সম্প্রতি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে খেলায় ম্যাচের মধ্যেই ছিল। তার ওপর সেমিফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কড়া চ্যালেঞ্জ সামলে তাদের ২-১-এ হারায়।

সেমিফাইনালে প্রথমার্ধে গোয়ার দলের আধিপত্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে প্রবল ভাবে ফিরে আসে মুম্বইয়ের দল। প্রচুর গোলের সুযোগও তৈরি করে তারা। এমনকী পেনাল্টি পেয়েও তা থেকে গোল করতে পারেনি তারা। এই অর্ধেই একটি গোল শোধ করতে পারে তারা। গোয়ার গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারি একাধিক অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান। গোয়ার রক্ষণ বিভাগ যে কতটা দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে পারে, তা সে দিনের ম্যাচেই বুঝিয়ে দেয় তারা। এই দুর্ভেদ্য রক্ষণেই চিড় ধরিয়ে সাফল্য অর্জন করতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে, যা মোটেই সোজা কাজ হবে না।

গত ম্যাচে কিক অফের আগেই লাল-কার্ড দেখে এই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া অধিনায়ক ইকের গুয়ারৎজেনার অনুপস্থিতি তাদের ভোগাতে পারে। তবে অধিনায়কের হঠাৎ অনুপস্থিতি সত্ত্বেও সেমিফাইনালে যে ভাবে অবস্থা সামলেছিলেন হাভিয়ে সিভেরিও, বোরহা হেরেরা, দেজান দ্রাজিচ, আকাশ সাঙ্গওয়ানরা, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। রবিবার তাদের সামলানোই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে মশাল বাহিনীর।

টুর্নামেন্ট- এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬

ম্যাচ- এফসি গোয়া বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি (ফাইনাল)

কিক-অফ- সন্ধ্যা ৭.৩০

ভেনু- পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা

লাইভ স্ট্রিমিং- জিও হটস্টার

টিভি সম্প্রচার- স্টার স্পোর্টস খেল