সুপার কাপ ডার্বির আগে ইস্টবেঙ্গলের বড় জয়, ড্র বাগান-বাহিনীর
দুই প্রধানেরই খাতায় এখন চার পয়েন্ট করে। তবে গোল পার্থক্যের বিচারে বাগান-বাহিনীর চেয়ে এগিয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেড।
সুপার কাপ শুরুর দিন পয়েন্ট খুইয়েছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। মঙ্গলবার পয়েন্ট খুইয়ে ফেলল তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট -ও। প্রথম দিন যাদের দুগোলে হারিয়ে তিন পয়েন্ট অর্জন করেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, সেই চেন্নাইন এফসি-কে এ দিন ৪-০-য় হারায় লাল-হলুদ বাহিনী। অন্যদিকে, যাদের বিরুদ্ধে প্রায় জেতা ম্যাচ ড্র রেখে মাঠ ছেড়েছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই গোয়ার ডেম্পো এসসি-র বিরুদ্ধে এ দিন গোলশূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়নরা।
মঙ্গলবারের এই দুই ম্যাচের পর সুপার কাপের গ্রুপ ‘এ’-র যা অবস্থা দাঁড়াল, তাতে কলকাতার দুই প্রধানেরই খাতায় এখন চার পয়েন্ট করে। তবে গোল পার্থক্যের বিচারে বাগান-বাহিনীর (২) চেয়ে এগিয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেড (৪)। তাই এক নম্বরে তারাই। শুক্রবার উত্তেজনায় ঠাসা কলকাতা ডার্বিতে যে দল জিতবে, তারাই খুলে ফেলবে সেমিফাইনালের দরজা। তবে লড়াইয়ে রয়েছে ডেম্পো এসসি-ও। শুক্রবার ডার্বিতে ড্র হলে ও ডেম্পো যদি চেন্নাইন এফসি-কে হারায়, তা হলে তাদেরও শেষ চারে ওঠার সম্ভাবনা থাকছে।
জয়ে ফেরার জন্য মরিয়া ফুটবল
এ দিন প্রথম ম্যাচের চেয়ে অনেক ভাল ফুটবল খেলে ইস্টবেঙ্গল এসসি। প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন যিনি, সেই নাওরেম মহেশ সিং মঙ্গলবার দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পাস দিয়ে দলের জয়ে নেপথ্য নায়ক হয়ে ওঠেন। তাঁর নিখুঁত পারফরম্যান্সের সাহায্য নিয়ে চেন্নাইনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় ইস্টবেঙ্গল। দুই ম্যাচে ছ’গোল খেয়ে দ্বিতীয় হারের পরই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় চেন্নাইয়ের দল।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন কেভিন সিবিল। এর পর বিরতির আগেই মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে আরও দু’গোল করে ম্যাচের ফয়সালা করে দেন বিপিন সিং। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে পেনাল্টি থেকে দলের চতুর্থ গোলটি করেন জাপানি ফরোয়ার্ড হিরোশি ইবুসুকি।
ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে চেন্নাইন। দ্বিতীয় মিনিটেই ফারুখ চৌধুরির শট ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল-কে পরীক্ষার মুখে ফেলে। কিন্তু অস্কার ব্রুজোনের দল প্রথম আধ ঘণ্টার চাপ সামলে নিয়ে প্রথমার্ধের শেষ ১০ মিনিটে আঘাত হানে এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
৩৫ মিনিটের মাথায় মহেশের ফ্রি-কিকে হেড করে বল জালে পাঠান সিবিল। চেন্নাইনের গোলকিপার মহম্মদ নওয়াজ কাছের পোস্টে পরাজিত হন। প্রতিপক্ষের দুর্বল মার্কিংয়ের সুযোগ নিয়ে ডান দিক থেকে বাড়ানো মহেশের ক্রসে বল পেয়ে বিপিন গোলের মুখে ট্যাপ করে ৩৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও হাল ছেড়ে দেয়নি লাল-হলুদ ব্রিগেড। ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয় গোলের ছয় মিনিটের মধ্যেই মহেশ ডি-বক্সের ভেতর দারুণ একটি থ্রু বাড়ান। হামিদ আহাদাদ তাঁর বাঁ পাশে থাকা বিপিনের দিকে বল ঠেলে দেন। ডান পায়ে শট নেন বিপিন, যা নওয়াজের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে যায়।
ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই চেন্নাইনকে ধারহীন মনে হয় এ দিন। ফারুখ চৌধুরি ছাড়া তাঁর সতীর্থ কোনও খেলোয়াড়ের উল্লেখযোগ্য কোনো পারফরম্যান্স দেখা যায়নি। চেন্নাইন আরও সমস্যায় পড়ে প্রথম একাদশের দুই খেলোয়াড় — জিতেশ্বর সিং ও ইরফান ইয়াডওয়াড চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায়। এর পরই মন্দার রাও দেশাইয়ের বাধায় বক্সের মধ্যে এডমুন্ড লালরিন্দিকা পড়ে গেলে ইবুসুকি পেনাল্টি থেকে চতুর্থ গোলটি করেন।
এই জয়ে গ্রুপ-‘এ’ এর শীর্ষে উঠে আসে ইস্টবেঙ্গল। তিন দিন পর কলকাতা ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারাতে পারলে সেমিফাইনালে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনীর সামনে।
হতাশাজনক, গোলহীন ফুটবল
এ দিন সন্ধ্যার ম্যাচে ফাতোরদা স্টেডিয়ামে গোয়ার ক্লাবকে হারাতে পারলে বাগান ফের গ্রুপের শীর্ষে ফিরে যেতে পারত। ডেম্পোর বিরুদ্ধে জয়ের পর শুক্রবার কলকাতা ডার্বিতে ড্র করলেও পরের রাউন্ডে উঠে যেত সবুজ-মেরুন বাহিনী।
কিন্তু তাদের ভাগ্যে লেখা ছিল অন্য কিছু এবং ডেম্পো এসসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে সেই রাস্তা নিজেরাই বন্ধ করে দেয় তারা। কলকাতার দুই প্রধানই আপাতত চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের প্রথম দুই স্থানে থেকে সেমিফাইনালের দরজা খোলার অপেক্ষায় রয়েছে। শুক্রবার কলকাতা ডার্বিই কার্যত হয়ে উঠল কোয়ার্টার ফাইনাল।
এ দিন সারা ম্যাচে বাগান তারকারা ১৮টি শট নেন, যার মধ্যে তিনটি ছিল গোলের লক্ষ্যে। কিন্তু একটিতেও সফল হতে পারেনি তারা। আটটি কর্নারও আদায় করে নেয় তারা। সেগুলিতেও ব্যর্থ হয়। সেখানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডেম্পো এসসি সারা ম্যাচে মোট চারটি শট নেয়, যার মধ্যে দু’টি ছিল গোলে। তাদের একটি অবধারিত গোলের চেষ্টা একা হাতে বানচাল করেন গোলকিপার বিশাল কয়েথ। তিনি সফল না হলে হয়তো বিপদে পড়ে যেত আইএসএল চ্যাম্পিয়নরা। কলকাতার দল যেখানে আটটি কর্নার আদায় করে নিতে পেরেছে, সেখানে ডেম্পোর কর্নারের সংখ্যা ছিল শূন্য।
এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও প্রতিপক্ষের জমাটবদ্ধ রক্ষণ ভেদ করে গোলের মুখ খুলতে পারেনি। এ দিন চার বিদেশিকে রেখে প্রথম এগারো নামান বাগান-কোচ হোসে মোলিনা। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস-কে শুরু থেকে খেলান তিনি। জেমি ম্যাকলারেন-কে সম্ভবত বিশ্রাম দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে ম্যাকলারেনকে নামান এবং সহজ গোলের সুযোগও হাতছাড়া করেন তিনি। আশিস রাই, মনবীর সিং, পেট্রাটস-রাও গোলের সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হন। জালে বল জড়াতে পারেননি কেউই। মাঝমাঠের স্তম্ভ আপুইয়াকেও অনেক পরে নামানোয় মাঠ গোছাতেও অনেকটা সময় লেগে যায় বাগান বাহিনীর।
অবশ্যই প্রশংসনীয় ডেম্পোর দুর্ভেদ্য রক্ষণাত্মক ফুটবল এবং তাদের কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার গতি। তরুণ ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দলটি এ দিন বিশাল বাজেটের দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে চোখে আঙুল দিয়ে তাদের ফাঁক-ফোকরগুলি দেখিয়ে দেয়। কলকাতা ডার্বির আগেই যে নিজেদের দুর্বলতাগুলি বুঝে নিলেন কোচ মোলিনা, এক দিক থেকে হয়তো তাতে ভালই হয়েছে তাদের।
ডার্বির আগে ধাক্কা খেয়ে বরং শুক্রবারের কঠিন ম্যাচে সজাগ থাকবেন তাঁরা। ইস্টবেঙ্গলও ডার্বির আগে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিল অনেকটা। ফলে কলকাতা ডার্বির উত্তাপ চড়তে শুরু করে দিল মঙ্গলবার রাত থেকেই।













