এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব: নিয়মরক্ষার ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হার ভারতের
বাছাই পর্বে পাঁচটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনও জয় পেল না ভারত। এই নিয়ে তৃতীয় হারের মুখ দেখল তারা।
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হেরে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হচ্ছে ভারতীয় দলকে। দীর্ঘ ২২ বছর পর ঢাকার মাঠে নেমে তাদের কাছে ০-১-এ হারতে হল খালিদ জামিলের ভারতকে। মঙ্গলবার ঢাকার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে শেখ মোরসালিনের করা একমাত্র গোলে জিতে বাছাই পর্বের গ্রুপ ‘সি’-র টেবলে ভারতকে পিছনে ফেলে তিন নম্বরে রয়ে গেল বাংলাদেশ।
চলতি বাছাই পর্বে এই প্রথম জয় পেল তারা। অন্যদিকে, পাঁচটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনও জয় পেল না ভারত। এই নিয়ে তৃতীয় হারের মুখ দেখল তারা। দু’টিতে ড্র করেছে। বাংলাদেশের একটি জয় ও দু’টি করে হার ও ড্র। এর আগে ২০০৩-এ শেষবার ঢাকায় খেলেছিল ভারতীয় ফুটবল দল। সাফ গোল্ড কাপে সেই ম্যাচেও ভারতকে ২-১-এ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এ বারও তার পুণরাবৃত্তি ঘটাল তারা। চলতি বাছাই পর্বে গত মার্চে শিলংয়েও তাদের বিরুদ্ধে ড্র করে ভারত। এ বারও তাদের হারাতে পারল না।
রায়ান উইলিয়ামস-এর ভারতীয় দলের হয়ে খেলা নিয়ে অনেক হইচই হলেও এ দিন তিনি ঢাকার মাঠে নামতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ফুটবল সংস্থা ও ফিফা থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র সময়মতো এসে না পৌঁছনোয়। ফলে তাঁকে গ্যালারিতে রেখেই দল নামাতে হয় খালিদ জামিলকে। কিন্তু আক্রমণ বিভাগে খেলা ভারতীয় ফুটবলাররা সেই পুরনো রোগেই ভোগেন। গোলের সামনে গিয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি তাঁরা। নিজেদের গোলের সামনে তাঁদের সারাক্ষণই কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। এ দিন দুই তরুণ ফুটবলার প্রথম ভারতীয় জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পান। একজন ভাল খেলার চেষ্টা করলেও অন্যজন নিজেকে প্রমাণ করার যথেষ্ট সময় পাননি।
এ দিন শুরু থেকে ভারত বিপক্ষকে চাপে রাখলেও তাদের হাইলাইন ফুটবলের জন্য পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১১ মিনিটের মধ্যেই গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের প্রায় পুরো দল যখন আক্রমণে ওঠে, তখনই তাদের পা থেকে কাড়া বল মাঝমাঠ থেকে রকিব হোসেনের কাছে পাঠান তাঁর এক সতীর্থ। দ্রুত দৌড়ে সেই বল নিয়ে রকিব চলে আসেন ভারতের বক্সের বাঁ দিকে। সেখান থেকে গোলের সামনে ক্রস পাঠান। রকিবকে আটকাতে ব্যর্থ হন আকাশ মিশ্র। রকিবারে ক্রস অনুসরণ করে বক্সে ঢুকে পড়েন শেখ মোরসালিন। তাঁকে আটকাতে যান ম্যাকার্টন লুইস লিকসন। এগিয়ে আসেন গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুও। এই দু’জনকেই ধোঁকা দিয়ে গোলে বল ঠেলে দেন মোরসালিন। উল্লাসে ফেটে পড়ে ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা প্রায় ২৩ হাজার দর্শক।
গোল খাওয়ার পর ভারত যেমন তা শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেও বাড়তি আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল স্পষ্ট। ৩০ মিনিটের মাথায় লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে-র গোলমুখী শট অনবদ্য হেডে পোস্টের বাইরে পাঠিয়ে দেন হামজা চৌধুরি। হামজার হেড দলকে বিপদমুক্ত না করলে ভারত হয়তো তখনই সমতা এনে ফেলত। উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকায় দুই দলের খেলোয়াড়দের মেজাজ হারাতেও দেখা যায়। ৪৪ মিনিটের মাথায় হামজা বক্সের বাইরে থেকে এক জোরালো শট নেন, যা গতিপথ বদলে অল্পের জন্য গোলের বাইরে চলে যায়। তিনি সফল হলে বাংলাদেশ হয়তো ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিতে পারত।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠে নিখিল প্রভুর জায়গায় নাওরেম মহেশ সিংকে মাঠে নামান ভারতের কোচ খালিদ জামিল। শুরু থেকে বলের দখল বাড়িয়ে খেলায় নিয়ন্ত্রণ আনার প্রবণতা দেখা যায় ভারতের খেলায়। ৫০ মিনিটের মাথায় বাঁ উইং থেকে নেওয়া সুরেশ সিং ওয়াংজাম-এর ফ্রিকিকে হেড করে গোলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেন রাহুল ভেকে। কিন্তু অল্পের জন্য বল পোস্টের বাইরে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১৫ মিনিট গড়ানোর পরে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে দুই তরুণ ফুটবলার মহম্মদ শনন ও ব্রাইসন ফার্নান্ডেজকে নামায় ভারত। ম্যাচে গতি আনাই ছিল এই জোড়া বদলের উদ্দেশ্য। ভারতের জার্সি গায়ে প্রথম খেলার সুযোগ পাওয়া শনন মাঠে নেমে আক্রমণে গতি আনেন ঠিকই। কিন্তু ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতাই বারবার তাদের সমস্যা হয়ে ওঠে।
প্রথমে শননের গোলমুখী হেড ব্লক করেন হামজা ও পরের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর শট সোজা গোলকিপার মিতুল মারমার হাতে পৌঁছে যায়। ৬৮ মিনিটের মাথায় এক মাপা ক্রসে ব্রাইসনকে তিনি গোলের সুযোগও করে দেন। কিন্তু ব্রাইসনের হেড অবিশ্বাস্য ভাবে গোলের বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটেই রাহুলের লম্বা থ্রোয়ে একটি গোলমুখী ভলি মারেন শনন। কিন্তু এ বারও তা সেভ করেন মিতুল।
আক্রমণে তীব্রতা বাড়াতে ম্যাচের শেষ দিকে রহিম আলির জায়গায় এডমন্ড লালরিন্ডিকা-কে নামায় ভারত। মাঝমাঠে সামাল দেওয়ার জন্য নামানো হয় লালরেমতলুঙ্গা ফানাই-কেও। শননের মতো তিনিও ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামেন এ দিন। কিন্তু ম্যাচ যত শেষের দিকে গড়াতে থাকে, ততই বাংলাদেশের রক্ষণ ক্রমশ দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে। তারা তখন ভারতের প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মরিয়া। ম্যাচের শেষে ৬ মিনিটের বাড়তি সময় দেওয়া হলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ভারত।













