সুপার কাপ ২০২৫-২৬-এর শুরুতেই মাঠে কলকাতার দুই প্রধান
দুই প্রধানের কোচেরই যে আসল লক্ষ্য ৩১ অক্টোবর কলকাতা ডার্বি, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হয়তো ওই ম্যাচের ওপরই নির্ভর করবে, কারা সুপার কাপের সেমিফাইনালে উঠবে।
সুপার কাপের শুরুর দিনেই মাঠে নেমে পড়ছে কলকাতার দুই প্রধানমোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ওইস্টবেঙ্গল এফসি। গোয়ায় শনিবার থেকে বসছে সুপার কাপের আসর। সেই আসরের প্রথম দিনই মাঠে নামছে গত ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) চ্যাম্পিয়নরা ও কলকাতার লাল-হলুদ বাহিনী। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম প্রতিপক্ষ ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাব ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি। অর্থাৎ, সুপার কাপের প্রথম দিন থেকেই জমে উঠতে পারে টুর্নামেন্ট।
মোট ১৬টি দলকে নিয়ে হচ্ছে এ বারের সুপার কাপ। যার মধ্যে ১২টি দলই ইন্ডিয়ান সুপার লিগের। বাকি চারটি দল আই লিগের। এই ১৬ দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপে থাকছে চারটি করে দল। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ যোগ্যতা অর্জনকারী দু’টি দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও এফসি গোয়াকে দুই বাছাই দলের তকমা দেওয়া হয়েছে। এই দুই দল রয়েছে যথাক্রমে ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপে।
প্রতি গ্রুপের এক নম্বর দল সেমিফাইনালে উঠবে। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নরা ২০২৬-২৭ মরশুমে এএফসি চ্যাাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্লে অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
𝗧𝗵𝗲 #𝗔𝗜𝗙𝗙𝗦𝘂𝗽𝗲𝗿𝗖𝘂𝗽 𝟮𝟬𝟮𝟱-𝟮𝟲 𝗸𝗶𝗰𝗸𝘀 𝗼𝗳𝗳 𝘁𝗼𝗺𝗼𝗿𝗿𝗼𝘄 𝗶𝗻 𝗚𝗼𝗮! 🏆
— Indian Football (@IndianFootball) October 24, 2025
16 clubs will battle it out in the group stage for 4⃣ semi-final spots ⚡️
Live stream 📺
Fatorda matches: @JioHotstar & @StarSportsIndia Khel
Bambolim matches:… pic.twitter.com/pNIyQxswdF
এ বারের এই নক আউট প্রতিযোগিতায় বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল গ্রুপ পর্বেই হতে চলেছে কলকাতা ডার্বি। কারণ, দুই প্রধান রয়েছে একই গ্রুপে। ‘এ’ গ্রুপে কলকাতার দুই ক্লাবের সঙ্গে রয়েছে চেন্নাইন এফসি ও ডেম্পো এসসি, রিয়েল কাশ্মীর নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় যাদের এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কলকাতার আর এক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মহমেডান এসসি রয়েছে গ্রুপ ‘সি’-তে।
বাকি তিনটি গ্রুপে কোন কোন দল রয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক:
গ্রুপ ‘বি’: এফসি গোয়া, জামশেদপুর এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, ইন্টার কাশী এফসি,
গ্রুপ ‘সি’: বেঙ্গালুরু এফসি, মহমেডান এসসি, পাঞ্জাব এফসি, গোকুলম কেরালা এফসি,
গ্রুপ ‘ডি’: মুম্বই সিটি এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, হায়দরাবাদ এফসি, রাজস্থান ইউনাইটেড এফসি।
‘সহজ’ সূচনা লাল-হলুদ বাহিনীর
শনিবার বিকেলে জিএমসি অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে ডেম্পোর বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে সুপার কাপ অভিযান শুরু করতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত মরশুমে আই লিগে ছয় নম্বরে থাকা ডেম্পোর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই খাতায় কলমে খুব একটা কঠিন হবে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে গোয়ায় পৌঁছেছে লাল-হলুদ বাহিনী।
টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী ছ’জন বিদেশিকে প্রথম এগারোয় রাখতে পারে যে কোনও দল। ইস্টবেঙ্গল দলেও ছয় বিদেশি রয়েছেন। কিন্তু ডেম্পো শিবিরে কোনও বিদেশি নেই। গত মরশুম পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এ মরশুমে এখন পর্যন্ত কোনও বিদেশিকে নেয়নি তারা। তাই পুরোপুরি দেশীয় ফুটবলারদের নিয়েই এই টুর্নামেন্টে মাঠে নামছে তারা।
অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মাঠে নামার জন্য তৈরি তাদের ছয় বিদেশি। ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল, মিডফিল্ডার মিগেল ফিগেরা,সল ক্রেসপো, মহম্মদ রশিদ এবং দুই স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুসুকি ও হামিদ আহদাদ। তবে প্রথম ম্যাচেই এই ছ’জনকে একসঙ্গে খেলতে নাও দেখা যেতে পারে। ডেম্পো যেহেতু খুব একটা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নয়, তাই দলের দেশীয় খেলোয়াড়দের মাঠে বেশি সময় দিতে পারেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন।
শুক্রবার অবশ্য তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আইএসএলের দলগুলো ছাড়াও আই লিগের ভাল দলগুলো এই টুর্নামেন্টে খেলে। তাই সুপার কাপ যথেষ্ট কঠিন টুর্নামেন্ট। কোনও ম্যাচকেই হালকা ভাবে নেওয়ার উপায় নেই। আমরা ভাল খেলছি। যারা নতুন এসেছে, তারাও দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। পুরোপুরি মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তবে তারা ভাল খেলবে, এমনই আশা ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে”।
বিদেশিরা ছাড়া রক্ষণেআনোয়ার আলি,লালচুঙনুঙ্গা,জয় গুপ্তা, মাঝমাঠেশৌভিক চক্রবর্তী,নাওরেম মহেশ সিং,বিপিন সিং,পিভি বিষ্ণু এবং আক্রমণেএডমন্ড লালরিন্দিকা,ডেভিড লালনসাঙ্গা কোচকে ভরসা দিতে পারেন।
চেনা শত্রু সবুজ-মেরুনের
সুপার কাপের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের সামনে খাতায় কলমে যতটা সহজ প্রতিপক্ষ, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সামনে ততটা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। তারা অভিযান শুরু করছেচেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে। তবে তারাও সর্বভারতীয় দল নিয়ে এই টুর্নামেন্টে এসেছে। সদ্য ক্লিফোর্ড মিরান্ডা তাদের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। এক সময় মোহনবাগানের সহকারী কোচের ভূমিকা পালন করা ক্লিফোর্ড অবশ্যই চাইবেন তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে লড়াকু ফুটবল দেখাতে।
দলের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা সাংবাদিকদের বলেন, “সদ্য আইএফএ শিল্ড জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে কয়েকটা জায়গায় আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। দলের রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে আরও ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য বরাবরের মতোই একই। যথাসাধ্য কম গোল খাও ও বেশি গোল দাও”।
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মোলিনার ধারণা, “ওদের ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। তারা বিদেশি না হতে পারে। তবে লড়াকু। আমাদের সেরা পারফরম্যান্সই দেখাতে হবে”।
ইস্টবেঙ্গলের মতো সবুজ-মেরুন বাহিনীরও ছয় বিদেশি তৈরি। ডিফেন্ডারমাইকেল অলড্রেড,আলবার্তো রড্রিগেজ, ফরোয়ার্ডজেমি ম্যাকলারেন,জেসন কামিংস,দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, রবসন দা সিলভা, যারা আবার মাঝমাঠেও খেলার জন্য প্রস্তুত—এঁরাই মোলিনাকে ভরসা জোগাবেন।
এ ছাড়াআপুইয়া,বিশাল কয়েথ,অনিরুদ্ধ থাপা,লিস্টন কোলাসো,শুভাশিস বোস,সাহাল আব্দুল সামাদ, মেহতাব সিং,মনবীর সিং-রাও সবুজ-মেরুন বাহিনীর পুরনো সৈনিক, যাঁদের নিয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দে দল চালিয়েছেন মোলিনা। তাই দলের ফুটবলারদের নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। বলেন, “ডুরান্ড কাপে আমরা তেমন ভাল খেলতে পারিনি। তবে সম্প্রতি আইএফএ শিল্ডে ভাল খেলেছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ বার একই লক্ষ্য নিয়ে সুপার কাপেও এসেছি”।
তবে দুই প্রধানের কোচেরই যে আসল লক্ষ্য ৩১ অক্টোবর কলকাতা ডার্বি, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হয়তো ওই ম্যাচের ওপরই নির্ভর করবে, কারা সুপার কাপের সেমিফাইনালে উঠবে। যেহেতু গ্রুপ থেকে একটি দল শেষ চারে যাবে, তাই দুই প্রধানের মধ্যে এক পক্ষ যে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবে, তা নিশ্চিত। তাই সেই ম্যাচের প্রস্তুতি তার আগের দুই ম্যাচেই ভাল করে সেরে নিতে চান দুই কোচ।
টুর্নামেন্ট- এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬
ম্যাচ- ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম ডেম্পো এসসি
ভেনু- জিএমসি স্টেডিয়াম, বাম্বোলিম
কিক-অফ- বিকেল ৪.৩০
লাইভ স্ট্রিমিং- ইন্ডিয়ান ফুটবল ইউটিউব চ্যানেল
ম্যাচ- মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বনাম চেন্নাইন এফসি
ভেনু- নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা
কিক-অফ- সন্ধ্যা ৭.৩০
সরাসরি সম্প্রচার- জিও হটস্টার, স্টার স্পোর্টস খেল













