প্রিভিউ: ডুরান্ড কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দৌড় থামানোর লড়াই কলকাতা ডার্বিতে
রবিবার বাংলার ফুটবলে চিরকালীন সম্মানের লড়াইয়ে দুই দলই পূর্ণশক্তি নিয়ে নামবে, এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালেই নেমে পড়তে হচ্ছে গতবারের ফাইনালিস্ট মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-কে। রবিবার সন্ধ্যায় বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন তথা শহর কলকাতা মেতে উঠবে কলকাতা ডার্বির উত্তেজনা ও আনন্দে। তবে এক দলের আনন্দ এ রাতেই থেমে যাবে, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়ে। কারা সেই হতভাগ্য, তা রবিবার রাতের আগে জানার কোনও উপায় নেই। গতবার এই পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এ বার তার পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই চাইবে না তারা।
কলকাতার দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের ফুটবল-যুদ্ধ জাতীয় ক্লাব মরশুমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা, যা দেখতে মাঠে হাজির হয় ষাট হাজারেরও বেশি ফুটবলপ্রেমী এবং টিভি, মোবাইলের সামনে থাকে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। রবিবারও সে রকমই একটা দিন। জুলাইয়ে শুরু হওয়া জাতীয় ক্লাব মরশুমে এটিই প্রথম ইস্ট-মোহন দ্বৈরথ। তাই এই ম্যাচকে ঘিরে আকর্ষণ ও উত্তেজনা তুঙ্গে।
দুই দলই ভাল ফর্মে। গ্রুপ পর্বে কোনও দলকেই হারাতে পারেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ‘এ’ গ্রুপে থাকা ইস্টবেঙ্গল এফসি প্রথম ম্যাচে ৫-০-য় হারায় সাউথ ইউানাইটেডকে। সে দিন পূর্ণশক্তির দল না নামিয়েও এমনই দাপুটে ফুটবল খেলে তারা যে, আরও পাঁচ গোল করতে পারত। দ্বিতীয় ম্যাচে আই লিগের দল নামধারি এফসি-কে ১-০-য় হারায় তারা। সেই ম্যাচে নয়া জার্সিতে প্রথম মাঠে নেমে গোল করে দলকে জয় এনে দেন হামিদ। সে দিনও এক ঝাঁক গোলের সুযোগ নষ্ট করে তারা।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে অবশ্য সুযোগ নষ্টের পরিমান কমে যায় এবং বায়ূ সেনাবাহিনীকে ৬-১ গোলে হারায় তারা। সে দিনও হামিদ গোল করেন। এ ছাড়াও বিপিন, আনোয়ার, রশিদ, ক্রেসপো ও ডেভিড গোল করেন। তিন ম্যাচে ১২ গোল করে কোয়ার্টার ফাইনালে যে বেশ টগবগ করে ফুটবে লাল-হলুদ বাহিনী, এটাই স্বাভাবিক।
অন্য দিকে, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টেরও আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। তবে তার কারণ একটু আলাদা। এক, এ বারের ডুরান্ড কাপে তাদের রাখা হয়েছিল সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে, যেখানে কলকাতার দুই শক্তিশালী দল মহমেডান এসসি ও ডায়মন্ড হারবার এফসি ছিল তাদের সঙ্গে। তবে দুই বাধাই তারা পেরিয়েছে ভাল ভাবেই। দ্বিতীয়ত, তারা গতবারের ফাইনালিস্ট। এ বার মহমেডানকে ৩-১-এ ও ডায়মন্ড হারবার এফসি-কে ৫-১-এ হারায় তারা। মাঝখানে বিএসএফ-কে ৪-০-য় হারিয়ে সবুজ-মেরুন বাহিনীও ইস্টবেঙ্গলের মতো ১২ গোল করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসেছে। ফলে রবিবার কেউ কাউকে ছাড়বে বলে মনে হয় না।
চলতি মরশুমে দলে একাধিক পরিবর্তন এনেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত আইএসএলে জোড়া খেতাব জয়ের পর মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট অবশ্য বেশি পরিবর্তন আনেনি। রবিবার বাংলার ফুটবলে চিরকালীন সম্মানের লড়াইয়ে দুই দলই পূর্ণশক্তি নিয়ে নামবে, এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
গত মরশুমে লাল-হলুদ শিবিরে থাকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে এ বারও ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়েই দেখা যাচ্ছে। মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো ও রয়েছেন দলে। এ ছাড়া এ বার তাদের দলে এসেছেন চার বিদেশি-- ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফিগেরা, আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার কেভিন সিবিল, প্যালেস্টাইনের মিডফিল্ডার মহম্মদ রশিদ ও মরক্কোর ফরোয়ার্ড হামিদ আহদাদ। এই ছয় বিদেশিই ডুরান্ড কাপের স্কোয়াডে রয়েছেন। তবে রশিদের পিতৃবিয়োগের খবর আসায় তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে। তাই রবিবার ডার্বিতে তাঁকে দেখা যাবে না।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো শক্তিশালী আক্রমণাত্মক দলের মোকাবিলা করার জন্য রক্ষণ আঁটোসাঁটো রাখতেই হবে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোনকে। সেক্ষেত্রে কেভিন সিবিলকে রক্ষণে রাখবেন এমন সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া আনোয়ার আলি, লালচুঙনুঙ্গারা তো রয়েছেনই। মহম্মদ রকিপ, মার্তন্ড রায়না, প্রভাত লাকরাদের মধ্যে থেকেও ডিফেন্ডার বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে অস্কারের সামনে। সদ্য শিবিরে যোগ দেওয়া জয় গুপ্তাকে রবিবারই তিনি মাঠে নামিয়ে দেখবেন কি না, সেটাও প্রশ্ন। দুই উইঙ্গার বিপিন সিং ও এডমন্ড লালরিন্ডিকা এই টুর্নামেন্টে ভাল ফর্মে রয়েছেন। তাঁদেরও শুরু থেকে খেলার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
মাঝমাঠে সউল ক্রেসপোর সঙ্গে খেলতে পারেন মিগুয়েল ফিগেরা। আক্রমণে দিয়ামান্তাকস বা হামিদের মধ্যে কোনও একজন শুরু করতে পারেন। তাঁর সঙ্গে গোলের জন্য ঝাঁপাতে পারেন ডেভিড লালনসাঙ্গা। শেষ পর্যন্ত কোন এগারোজনকে দিয়ে শুরু করাবেন লাল-হলুদ কোচ, প্রতিবারের মতোই তা এক আকর্ষণীয় বিষয়।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হোসে মোলিনার হাতেও এক ঝাঁক ভাল ভাল ফুটবলার। আক্রমণে যেমন তিন অজি তারকা জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটস তাঁর হাতে রয়েছে, তেমনই দুই ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ ও টম অলড্রেড এই দলের রক্ষণের ভরসা। সম্ভবত এঁদের নিয়েই শুরু করবেন মোলিনা। এই বিদেশিরা ছাড়াও তাঁর হাতে রয়েছে একঝাঁক ভারতীয় তারকা, যাঁরা আইএসএলে জোড়া খেতাব জয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আশিস রাই, নবাগত অভিষেক সিংরা যেমন রক্ষণে বড় ভরসা, তেমনই মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপা, আপুইয়ার মতো ভারতীয় দলে নিয়মিত খেলা ফুটবলাররাও রয়েছেন। উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু দলের আর এক তারকা উইঙ্গার মনবীর সিং চোটের সমস্যায় ভুগছেন। চোট সারিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমে ফের চোট পান। ফলে তৃতীয় ম্যাচেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। রবিবারও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে সহাল আব্দুল সামাদ তৈরিই রয়েছেন। এই মালয়লাম তারকা চলতি ডুরান্ড কাপে দু’টি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট করেছেন। সুতরাং তাঁকেই সম্ভবত প্রথম এগারোয় রেখে দল গড়বেন।
অর্থাৎ, দুই কোচের মাথায় চলছে সেরা এগারো বাছাইয়ের চিন্তা। হাতে থাকা সেরা এগারো ফুটবলারকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে তাঁদের কাছ থেকে সেরা ফল বের করে নেওয়াই এখন দুই কোচের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ জিততে পারলেও ফাইনালে ওঠার ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাস্তা মোটেই সহজ হয়ে যাবে না।
ডার্বি-জয়ীদের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে হবে জামশেদপুর এফসি ও ডায়মন্ড হারবার এফসি-র মধ্যে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালের জয়ীদের। যুবভারতীতে নামার আগেই অবশ্য তাদের নাম জেনে যাবে দুই প্রধান। তবে তা জানলেও দুই দলেরই ফোকাস থাকবে তাদের প্রতিপক্ষদের হারানোর দিকেই। কারণ, এ হল কলকাতা ডার্বি। এখানে ফোকাস নড়ে গেলেই বিপদ!
ম্যাচ: ডুরান্ড কাপ কোয়ার্টার ফাইনাল-৪
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি
ভেনু: বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা
তারিখ: ১৭ অগাস্ট, ২০২৫
কিক-অফ: সন্ধ্যা ৭টা
সম্প্রচার: সোনি স্পোর্টস
লাইভ স্ট্রিমিং: SonyLIV