নামে কী আসে যায়, কিন্তু ডাকনামে আসে যায় অনেক কিছুই
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে বহু ফুটবলারের স্মরণীয় ডাকনামের জন্ম হয়েছে। কিছু দিয়েছে ক্লাব, কিছু সমর্থকেরা।

ফুটবল আবেগের খেলা। ফুটবলারদের সঙ্গে তাদের ভক্তদের সম্পর্কের ভিতও তৈরি হয় আবেগেই। আর সেই আবেগ প্রকাশের জন্য প্রিয় তারকাদের একেকজনকে একেক রকমের ডাকনাম দেন ভক্তরা। সারা বিশ্ব জুড়ে ফুটবলারদের নানা মজাদার নামে ডাকা হয়। কখনও কখনও সেগুলি খুবই ব্যক্তিগত হয়, কখনও হয় বেশ মজার। প্রতিটি ডাকনামের পিছনে থাকে একটি করে গল্পও।
কোনও ডাকনামের জন্ম যাদুময় মুহূর্ত থেকে, আবার কোনওটি খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রম, শৈলী বা তাদের মাঠে ও মাঠের বাইরের আচার-আচরণ থেকে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এও বহু ফুটবলারের স্মরণীয় ডাকনামের জন্ম হয়েছে। কিছু দিয়েছে ক্লাব, কিছু সমর্থকেরা আর কিছু এমন আছে, যা ফুটবলারদের পরিচয় বহন করে।
এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা এক নজরে জেনে নেব আইএসএল-এর ইতিহাসের কিছু স্মরণীয় ডাকনাম এবং সেই ডাকনামগুলির নেপথ্যের গল্পগুলি।
জেসন কামিংস, দ্য জোকার

মাঠে তিনি যেমন বিপজ্জনক এবং অসাধারণ পারফরমার, মাঠের বাইরে জেসন কামিংস বেশ দুষ্টু ও মজাদার মানুষ। এই অস্ট্রেলিয়ান ‘দ্য জোকার’ ডাকনামটি অনেক আগেই আপন করে নিয়েছেন। এই নামের উৎস্য বিশ্ববিখ্যাত কমিক্স ও অ্যানিমেশন চরিত্র ব্যাটম্যানের খলনায়ক থেকে। তাঁর বাঁ পায়ের উরুতে রয়েছে জোকার চরিত্রের ট্যাটু আর হাতে ট্যাটুতে রয়েছে জোকারের কুখ্যাত হাসি, গোল করার পর সেলিব্রেশনের সময় এই হাত দিয়েই নিজের মুখের নিচের অংশ ঢেকে রাখেন কামিংস।
এ বাবে গোল উদযাপন তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবনের শুরুর দিক থেকেই করে আসছেন কামিংস। এখন তাঁর সেই অভিনব সেলিব্রেশন দেখতে পান ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা। আইএসএল-এ এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে খেলার সময় তাঁর গোলের পর সমর্থকরাও এই রকম উদযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
উদান্ত সিং, দ্য ফ্ল্যাশ

তাঁর গতিই বরাবর তাঁর প্রধান শক্তি। যা উদান্ত সিং বেঙ্গালুরু এফসি-র শুরুর দিনগুলি থেকেই প্রমাণ করে আসছেন। ইদানীং এফসি গোয়ায় যোগ দেওয়ার পরেও উদান্ত তাঁর দৌড়ের গতিতে প্রতিপক্ষের ফুল-ব্যাকদের এক মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেন না। তাই তাঁর ভক্তরা ও ধারাভাষ্যকারেরা যে তাঁকে ডাকতে শুরু করবেন ‘দ্য ফ্ল্যাশ’ নামে, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে? সেরা ছন্দে থাকলে উদান্তর গতি প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। এমনকী, যখন তিনি গোল না-ও পান, তখনও কেবল তাঁর গতি ও উইং থেকে দেওয়া নিখুঁত ক্রসে নিজের উপস্থিতি টের পাইয়ে দেন উদান্ত।
সুরেশ ওয়াংজাম, এল তোরিতো

যদি কারও ডাকনাম তার খেলার স্টাইল ও প্রাণশক্তির সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে যায়, তবে তা অনায়াসে হতে পারে ‘এল তোরিতো’, যা আসলে একটি স্প্যানিশ শব্দ এবং বাংলায় তরজমা করলে যা দাঁড়ায়, ছোট ষাঁড়। সুরেশ ওয়াংজামকে এখন এই নামেই ডাকা হয়। কারণ, এই মামটি তাঁর সঙ্গে একদম মানানসই হয়।
চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সময় কখনওই পিছু না হটা এই মিডফিল্ডার ২০১৯ সাল থেকে বেঙ্গালুরু এফসি-তে ছিলেন মাঝমাঠের প্রধান সেনানায়ক হিসেবে। মাঠে তিনি সব সময়ই দৌড়ে বেড়ান, প্রতিপক্ষকে চাপে রাখেন, তাড়া করেন এবং ঘন ঘন চাপ সৃষ্টি করেন। এই নিরবচ্ছিন্ন গতিশীলতাই তাঁকে বেঙ্গালুরু এফসি এবং ভারতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
জেজে লালপেখলুয়া, দ্য মিজো স্নাইপার

এর চেয়ে ভাল ডাকনাম কি হতে পারে? ‘দ্য মিজো স্নাইপার’ নামটা শুনলেই মনে হয়, সে এমন একজন, যে কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। জেজে লালপেখলুয়া সম্পর্কে বহুদিন ধরে এমনই কথা বলা হত। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তিনি বরাবর শান্ত, স্থির ও নিখুঁত। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলকে গোল এনে দেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা রাখতেন।
চেন্নাইন এফসি-তে খেলার সময় তিনি খুব কম সুযোগই নষ্ট করতেন। অযথা বেশি শক্তি ব্যবহার না করে নিখুঁত প্লেসিংয়ে গোল করতেন তিনি। দু’টি আইএসএল কাপ জেতা এই ফরোয়ার্ড আজও ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য গোলস্কোরার হিসেবে সুপরিচিত।
সাহিল তাভোরা, মিস্টার ৮৭:১৯

হায়দরাবাদ এফসি-র সমর্থকদের কাছে ‘৮৭:১৯’ হল এক অমলিন মুহূর্ত — যখন সময় যেন থমকে গিয়েছিল। ২০২১-২২ আইএসএল ফাইনালে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েছিল হায়দরাবাদ এফসি, তখনই সাহিল তাভোরা এগিয়ে এসে ৮৭ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে দুর্দান্ত একটি দূরপাল্লার গোল করে দলকে সমতায় ফেরান।
এই গোল ম্যাচটিকে নিয়ে যায় অতিরিক্ত সময়ে এবং শেষে টাইব্রেকারে হায়দরাবাদ এফসি চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই মরশুমে তাভোরার এটাই ছিল একমাত্র গোল। কিন্তু ওই একটি গোলই ছিল সে মরশুমে দল ও সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। সেই গোলের পর থেকে ‘৮৭:১৯’ সংখ্যাটি সাহিলের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছে যে, এফসি গোয়াতে চলে যাওয়ার পরও তা তাঁর এই নামটা লোকে ভুলে যায়নি।
লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, দ্য মিজো ফ্ল্যাশ

উদান্তর মতোই, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেও উইং দিয়ে বিদ্যুৎগতিতে আক্রমণে ওঠেন। এ ছাড়া তাঁর সূক্ষ্ম পায়ের কাজ ও গোলের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর— এই তিনের মিশ্রণে আইএসএল-এর অন্যতম ভয়ঙ্কর ফরোয়ার্ড হয়ে উঠেছেন ছাঙতে। মিজোরাম থেকে উঠে এসেছেন তিনি। তাই তাঁর ডাকনামটিও যথাযথ — ‘দ্য মিজো ফ্ল্যাশ’।
মুম্বই সিটি এফসি এবং তাদের সমর্থকেরা এই ডাকনামটি সাদরে গ্রহণ করেছে। ছাঙতের দৌড়ের মধ্যে রয়েছে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য। শুধু গতিময় নন, বরং বিস্ফোরক। এমন এক গতি, যা ম্যাচের গতিপথই বদলে দিতে পারে। এ কথা বারবার প্রমাণও করেছেন তিনি। এই কারণেই এই নাম তাঁর সঙ্গে একেবারে নিখুঁতভাবে মানিয়ে যায়।