এই লেখাটি ইংরেজিতেও পড়তে পারেন।

ঘরের মাঠে তুর্কমেনিস্তানের আহল এফকে-র বিরুদ্ধে হার দিয়ে ২০২৫–২৬ মরশুমের এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-এর গ্রুপ পর্ব শুরু করল আইএসএলের লিগ ও শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। মঙ্গলবার দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষ দিকে ৮৩ মিনিটের মাথায় গোল করে ম্যাচ জিতে নেয় আহল এফকে

পরিবর্ত ফরোয়ার্ড এনওয়ের আনাইয়েভের গোলে এ দিন ম্যাচ জিতে কলকাতা থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরছে প্লে-অফে তাজিকিস্তানের রেগার-তাদাজ তুরসুনজোদাকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে জায়গা অর্জন করা আহল এফকে। দেশের সেরা লিগে একবার শিরোপা জেতা ও সাতবার রানার্স-আপ হওয়া এই ক্লাব চলতি মরশুমে রয়েছে লিগ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।

কোনও বিদেশী ফুটবলার ছাড়াই মাঠে নামা আহলের বিরুদ্ধে এ দিন পাঁচ বিদেশী ফুটবলারকে নামিয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিততে পারেনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাও দিমিত্রিয়স পেট্রাটস-কে শেষ পর্যন্ত রিজার্ভ বেঞ্চেই বসে থাকতে হয়। এএফসি ক্লাব টুর্নামেন্টগুলিতে বিদেশী ফুটবলারদের সংখ্যায় কোনও সীমা থাকে না। তা সত্ত্বেও দলের বিদেশীদের পুরোমাত্রায় ব্যবহার করেননি বাগান কোচ হোসে মোলিনহা। চোট পেয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া মনবীর সিংয়ের অভাবও টের পেয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী।

এদিন প্রথমার্ধে দুই দলই আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও বাড়তি ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি কোনও দলের খেলায়। প্রথমার্ধে সব মিলিয়ে তিনটি শট নেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, যার মধ্যে একটিও গোলে ছিল না। অন্যদিকে, আহল এফকে-র দু’টি শটের মধ্যে একটি ছিল গোলে। বল দখলের লড়াইয়েও সবুজ-মেরুন বাহিনীকে পিছনে (৪১-৫৯) ফেলে দেয় তুর্কমেনিস্তানের দল। ছোট ছোট পাসে নিজেদের দখলেই বেশি বল রাখে তারা।

হাতে গোনা কয়েকটি আক্রমণে ওঠে দু’পক্ষ, কিন্তু প্রতিবারই রক্ষণের জালে আটক হয়ে যান অ্যাটাকাররা। কোনও দলই প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি ছিল না। এর মধ্যেই ৩২ মিনিটের মাথায় আহলের ফরোয়ার্ড এলমান তাগাইউ-র শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তাঁকে ডান প্রান্ত থেকে ক্রস বাড়ান মিডফিল্ডার হাকমুহামেত বাসিমাও। এ ছাড়া প্রথমার্ধে কোনও স্পষ্ট সুযোগ তৈরি করে উঠতে পারেনি কোনও পক্ষ।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট প্রথমার্ধে দুই উইং দিয়ে ধারাবাহিক আক্রমণে উঠতে পারেনি। একদিকে লিস্টন কোলাসো চেষ্টা করলেও কড়া পাহাড়ায় ছিলেন তিনি। অন্য দিকে কিয়ান নাসিরি, সহাল আব্দুল সামাদ-দেরও বারবার আটকে দেন আহল ডিফেন্ডাররা। কিয়ান একাধিক বার গোলের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করেও সফল হননি। ফলে প্রথমার্ধ গোলশূন্যই রয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে ধার বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল বাগান-বাহিনীর। তবে আহলের রক্ষণ বিভাগের তৎপরতায় কাজের কাজটি করে উঠতে পারেননি লিস্টন, কামিংস-রা। আক্রমণে আরও আগ্রাসন আনতে ৫৭ মিনিটের মাথায় কিয়ানের জায়গায়, জেমি ম্যাকলারেন নামেন। প্রথমার্ধে চোট পাওয়া দীপক টাঙরি-র জায়গায় নামেন অনিরুদ্ধ থাপা। জেমি মাঠে নেমেই আক্রমণের তীব্রতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন।

মাঠে নামার পরেই সুবর্ণ সুযোগ পান জেমি। বক্সে ঢুকে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলে শট নেন তিনি, যা কোনও রকমে পা দিয়ে আটকান আহলের গোলকিপার কাকাগেলদি বেরদিইউ। অবশ্য অফ সাইডের পতাকা তোলেন সহকারী রেফারি।

তবে মোহনবাগানের সেরা সুযোগটি আসে ৬৯ মিনিটের মাথায়, যখন কামিংস ও জেমি নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়েন এবং কামিংসের এক মাপা পাসে যদি ঠিকমতো শট নিতে পারতেন জেমি, তা হলে অবধারিত গোল পেতেন। কিন্তু বেরদিয়েভের অনবদ্য সেভ আহলের বিপদ কাটিয়ে দেয়।

গোলের সম্ভাবনা বাড়ানোর উদ্দেশে ৭২ মিনিটে সদ্য শিবিরে যোগ দেওয়া ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড রবসন রবিনহোকে নামায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। লিস্টনের জায়গায় নামেন তিনি। অন্যদিকে রক্ষণে শক্তি বাড়াতে শুভাশিস বোস-কে নামানো হয় অভিষেক সিং-এর জায়গায়।

রবিনহো মাঠে আসার কিছুক্ষণ পরেই, ৮২ মিনিটের মাথায় এক দুর্দান্ত এবং মাপা উড়ন্ত পাস বাড়ান ডান উইংয়ে থাকা সহালকে। ডানপায়ে অসাধারণ দক্ষতায় সেই বল ডান পা দিয়ে রিসিভও করেন তিনি। কিন্তু শেষে যে শটটি নেন সহাল, তা গোলের বাইরে চলে যায়।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১১ মিনিট আগে জোড়া পরিবর্তন করে আহল এফকে। বাসিম গুরবানবেরদিয়েভ ও এনওয়ের আনাইয়েভ নামেন আক্রমণে ধার বাড়ানোর জন্য। আহলের এই দুই পরিবর্তনের সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত সাফল্যের রাস্তা দেখায় তাদের।

বক্সের বাঁ দিক থেকে গুরবানবেরদিয়েভের ক্রস পেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের উদ্দেশে কোণাকুনি শট নেন আনাইয়েভ, যা দূরের পোস্টের দিক দিয়ে গোলে ঢুকে পড়ে। বলের নাগাল পাননি বাগান গোলকিপার বিশাল কয়েথ (১-০)

এই গোলের পরে নিজেদের রক্ষণকে নিশ্ছিদ্র করে রাখে তুর্কমেনিস্তানের ক্লাবের ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের শেষদিকে সংযুক্ত সময়ে রবিনহো ফের বক্সের মধ্যে সহালের কাছে বল পাঠান গোল শোধ করার জন্য। কিন্তু সেই বল সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেই পারেননি কেরালার এই ফুটবলার। যার ফলে বল গোলকিপারের দখলে চলে যায় অনায়াসে। এর পরে আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও উপায় ছিল না কলকাতার দলের।

আইএসএলের আরেক অংশগ্রহনকারী এফসি গোয়া প্রথম মাঠে নামবে বুধবার ঘরের মাঠে ইরাকের আল জাওরার বিরুদ্ধে। গ্রুপ ‘ডি’-তে তাদের সঙ্গে রয়েছে সৌদি আরবের শক্তিশালী দল আল নাসর, আল জাওরা এবং তাজিকিস্তানের এফসি ইস্তিকলল।