সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে বুদ্ধিমত্তা ও মনোযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ: খালিদ জামিল
‘অনেকদিন ধরেই সবাই চাপে ছিল এবং ফলাফল চাইছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভারত জিতেছে’।

কাফা নেশনস কাপে ব্রোঞ্জ পদক জয়ে খুশি ভারতীয় দলের প্রধান কোচ খালিদ জামিল। ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরই দলকে এই সাফল্য এনে দেন, যা তাঁর কোচিং জীবনের পক্ষে খুবই ইতিবাচক বলে মনে করছেন অনেকে।
এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেন দলের খালিদ। কোচ হিসেবে ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার ইগর স্টিমাচের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এবং স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজের অধীনে ভারত বেশ খারাপ সময় পার করার পর এই ভারতীয়কেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ভারতীয় দলের প্রাক্তন খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর কাঁধে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলের মনোবল বাড়ানোর। জামশেদপুর এফসি-তে যে ভাবে তিনি আমূল পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন, জাতীয় দলের মধ্যেও সেই জয়ের মানসিকতা তৈরি করতে পারবেন তিনি, এই আশাও ছিল।
ভারতীয় খেলোয়াড়দের শক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল খালিদ একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে এবং সেটি বজায় রেখে ভারতীয় ফুটবলারদের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স বের করে আনতে সক্ষম হন। তাঁর কৌশল কাজে আসে। কারণ, আট দলীয় কাফা নেশনস কাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ভারত। তাও ফিফা ক্রমতালিকায় অনেক এগিয়ে থাকা দু’টি দলকে হারিয়ে।
Smiles shining as bright as the medals! 🥉🇮🇳#CAFANationsCup2025 #IndianFootball #BlueTigers #BackTheBlue pic.twitter.com/PjV9E87P9n
— Indian Super League (@IndSuperLeague) September 9, 2025
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ২৭ ধাপ ওপরে থাকা তাজিকিস্তানকে ২-১-এ হারিয়ে এবং তাদের চেয়ে ৫৪ ধাপা ওপরে থাকা ওমানের বিরুদ্ধে তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচেও জিতে তিন নম্বর জায়গাটা অর্জন করে ভারত। “অনেকদিন ধরেই সবাই চাপে ছিল এবং ফলাফল চাইছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভারত জিতেছে, তবে এর সবটুকুই খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব,” বলেন খালিদ জামিল। সম্প্রতি ইংরাজি দৈনিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলি বলেন তিনি।
পড়ুন: বহু বছর পর বিদেশের মাটিতে ভারতের বড় সাফল্য
যদিও ভারতীয় কোচের কৌশলের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ বিভাগের চাপ বজায় রাখার প্রবণতা, তবে পুরো অভিযানের আসল মেরুদণ্ড ছিল রক্ষণভাগের দৃঢ়তা, যাকে নেতৃত্ব দেন রাহুল ভেকে, সন্দেশ ঝিঙ্গন ও আনোয়ার আলি।
গ্রুপ পর্বে ইরানের বিরুদ্ধে ভাঙা চোয়াল নিয়েও খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নেন সন্দেশ, যা দলের লড়াকু মানসিকতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। নতুন ফুটবলারদের মধ্যে মহম্মদ উভেয়সও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়ে সমানভাবে নজর কাড়েন।
সন্দেশের চোট পাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে খালিদ বলেন, “ইরানের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত সন্দেশ আমাকে বলেনি যে ও ব্যথা অনুভব করছিল। রাহুল চুপচাপ, কিন্তু মাঠে সে একেবারে সিংহ। আনোয়ার আলি শান্ত। শেষ ম্যাচে বদলি খেলোয়াড়রা নেমে পার্থক্য গড়ে দেয়। যা ঘটেছে, তা স্বতঃস্ফূর্ত। সবাই নিজেদের প্রমাণ করতে চাইছিল। নতুন খেলোয়াড়রা আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করেছে”।
অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু-কে দল থেকে বাদ দেন স্প্যানিশ কোচ মার্কেজ। খালিদ জামিল দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে দলে ফেরান এবং বেঙ্গালুরু এফসির এই গোলকিপারকে ভারতীয় দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল।
অফ-সিজনে নরওয়েতে যান সান্ধু, তাঁর প্রাক্তন ক্লাব স্তাবেক ফুটবল-এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফল দেয়, শুধু ওমানের বিপক্ষে ভারতের জয়ে নায়ক হয়ে ওঠাই নয়, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে পিছন থেকে তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব নীল বাহিনীর খেলোয়াড়দের বাড়তি শক্তি এনে দেয়।
সান্ধুকে নিয়ে খালিদ এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরই প্রথম ফোনটি করি গুরপ্রীতকে। ওকে বলি, দলের তাকে প্রয়োজন। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ভারতের সেরা খেলোয়াড় কে? আমার উত্তর হবে, গুরপ্রীত। আমি মনে করি, সে এশিয়ার সেরা গোলকিপারদের অন্যতম। আমি নিজেকে বলেছিলাম, গুরপ্রীতকে না ডাকাই হবে আমার সবচেয়ে বড় ভুল। আমি ওর জন্য কী করেছি? শুধু আত্মবিশ্বাস দিয়েছি। ওখানেই আমার কাজ শেষ”।
খালিদ জামিলের অনন্য ফুটবল স্টাইল কাফায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে খালিদ ও ভারতের জন্য এটি কেবল শুরু। আসল পরীক্ষাগুলো সামনে অপেক্ষা করছে। এ বার এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নামতে চলেছে ভারত, যেখানে অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পরপর দুটি ম্যাচ খেলবে তারা।
পড়ুন: সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে বাছাইপর্বের সম্ভাব্য ভারতীয় স্কোয়াড
দুটি ম্যাচ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট সংগ্রহ করা ভারতের কাছে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে জয় এখন অপরিহার্য, যাতে তারা টানা তৃতীয়বারের মতো এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে টিকে থাকতে পারে।
“কিছু ম্যাচে আমাদের বল ধরে রাখতে হবে এবং আমরা তা করব। তবে ভুলে গেলে চলবে না, সিঙ্গাপুর ম্যাচটি হবে অ্যাওয়ে। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলা আর মনোযোগ না হারানোই এই ম্যাচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে,” বলেন ভারতীয় দলের কোচ।
অক্টোবরে বিশ্বের ১৫৯ নম্বর সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ভারত দু’টি ম্যাচ খেলবে। প্রথমটি হবে ৯ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে ও পরেরটি ১৪ অক্টোবর গোয়ায়। ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের খেলতে হবে সে দেশে গিয়ে এবং আগামী বছর ৩১ মার্চ হংকংয়ের বিরুদ্ধে বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে ভারত।