এই লেখাটি ইংরেজিতেও পড়তে পারেন।

ঘরের মাঠে তুর্কমেনিস্তানের আহল এফকে-র বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে ২০২৫–২৬ মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-এর গ্রুপ পর্ব শুরু করছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) শিল্ড ও কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। মঙ্গলবার এই ম্যাচে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে বাগান-বাহিনী।

এ বারের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে গ্রুপ ‘সি’-তে ইরানের সেপাহান এসসি, জর্ডনের আল হুসেইন এসসি এবং তুর্কমেনিস্তানের আহল এফকে-র মুখোমুখি হবে দু’বারের আইএসএল শিল্ড ও কাপজয়ী সবুজ-মেরুন বাহিনী। আইএসএল শিল্ড জিতে তারা এই আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং ইতিহাস গড়ে পরপর দুই মরশুমে শিল্ড জয়ী প্রথম দল হয়ে ওঠে।

গত আইএসএল মরশুমে তারা ২৪ ম্যাচে অভূতপূর্ব ভাবে ৫৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল, যা তাদের আধিপত্যের প্রমাণ দেয়। এ বার, কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মহাদেশীয় মঞ্চে নিজেদের দক্ষতার ছাপ রাখার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এই ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের প্রতিপক্ষ যারা, সেই আহল এফকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়োকারি লিগার অন্যতম ধারাবাহিক ক্লাব। যদিও তারা মাত্র একবার লিগ শিরোপা জিতেছে, তবে সাতবার রানার্স-আপও হয়েছে। তাদের চলতি ঘরোয়া লিগে তারা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এ ছাড়া তারা চারবার তুর্কমেনিস্তান কাপ জিতেছে এবং ২০১৪-য় একবার তুর্কমেনিস্তান সুপার কাপ জিতেছে।

এ বার এফসি গোয়া যেমন প্লে-অফের মাধ্যমে এসিএল ২ গ্রুপ পর্বে জায়গা করে নেয়, তেমনই আহল তাজিকিস্তানের রেগার-তাদাজ তুরসুনজোদাকে ২–১-এ হারিয়ে গ্রুপ পর্বে জায়গা পেয়েছে। এটি হবে তাদের ষষ্ঠ এএফসি কাপ বা এর নতুন রূপ এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ ২-য়ে অংশগ্রহণ। এই দলে তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় দলের জনা পাঁচেক ও তাদের অলিম্পিক দলের (অনূর্ধ্ব ২৩) প্রায় সাত-আটজন ফুটবলার আছেন।

অন্য দিকে গত মাসে ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কাছে হেরে সেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। ডুরান্ড কাপের সময় অবশ্য তেমন তৈরি ছিল না তারা। তাদের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দল পুরোপুরি তৈরি নয়, তাই ডুরান্ড খেতাব বজায় রাখার ব্যাপারে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না তিনি। তাঁর আশঙ্কাই সঠিক প্রমাণিত হয় এবং শেষ আটের রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।

ডুরান্ড কাপের পরে বাগান শিবিরে একাধিক খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড রবসন রবিনহো। এ ছাড়াও যোগ দেন ডিফেন্ডার মেহতাব সিং। মরশুম শুরুর আগে সবুজ-মেরুন শিবিরে ফিরে আসেন তরুণ ফরোয়ার্ড কিয়ান নাসিরি ও যোগ দেন ফুল ব্যাক অভিষেক সিংও। এমনিতেই গত মরশুমে তাদের রক্ষণ বেশ শক্তিশালী ছিল। কিন্তু দুই ভারতীয় ডিফেন্ডার যোগ দেওয়ায় তা হয়তো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং তুর্কমেনিস্তানের দলকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।

আক্রমণে চোট পেয়ে এই ম্যাচে ঘোর অনিশ্চিত মনবীর সিংয়ের জায়গায় ডান উইংয়ে প্রাক্তনী কিয়ানকে দেখা যেতে পারে। এই জায়গায় অপর বিকল্প সুহেল ভাট। বাঁ প্রান্তে লিস্টন কোলাসো বড় ভারসা। ডুরান্ড কাপে ভাল ফর্মে ছিলেন। পাঁচটি গোলও করেন। আহলের রক্ষণে ফাঁক ফোকর তৈরি করতে গেলে দুই উইং দিয়েই যে আক্রমণে উঠতে হবে তাদের তা জানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবির।

আক্রমণে মোলিনার হাতে একাধিক ধারালো অস্ত্র। পেট্রাটস, কামিংস, ম্যাকলারেন-এর সঙ্গে এখন রবসনও আছেন। মাঝমাঠে আপুইয়া-র সঙ্গে অনিরুদ্ধ থাপা বাগান কোচের বড় ভরসা। যেমন গোলে বিশাল কয়েথ

কোচ মোলিনা যে মঙ্গলবার আহল এফকে-র সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, তা তাঁর কথা শুনেই বোঝা গেল। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “প্রস্তুতি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ম্যাচের মধ্যে না থাকাটা আমাদের কাছে অসুবিধাজনক ঠিকই। তবে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে খুব ভাল একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি আমরা। এ ছাড়া গত প্রায় এক মাসের প্রস্তুতি শিবিরে ছেলেরা যা পরিশ্রম করেছে এবং টানা অনুশীলনের পর ওরা এখন যে জায়গায় রয়েছে, তাতে বলা যায় আমরা এই ম্যাচের জন্য তৈরি। আমরা লড়াই করব এবং জিততেও পারব”।

প্রতিপক্ষ নিয়ে অবশ্য বেশি কিছু বলতে চান না মোলিনা। শুধু বলেন, “ওরা ভাল দল। ওদের শ্রদ্ধা করি। আমি নিজের দল নিয়েই বেশি ভাবছি, ওদের নিয়ে নয়। আমরা প্রমাণ করতে চাই, মোহনবাগান শুধু ভারতেরই সেরা দল নয় সারা এশিয়াতেও একটা বড় শক্তি। সে রকম খেলতে হবে আমাদের। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, এই চ্যালেঞ্জ আমরা নিতে পারব”।

আহল এফকে-র কোচ এজিজ আনামুহামেদভ বলেন, “আমরা এখানে তিন পয়েন্ট জিততে চাই। প্রতিপক্ষের ব্যাপারে চর্চা করেছি। ওরা বেশ শক্তিশালী। এখানকার লিগ চ্যাম্পিয়ন। আমরাও ভাল দল। ভাল প্রস্তুতিও নিয়েছি আমরা। মাস দুয়েকের প্রস্তুতি শিবির ছাড়াও তিনটি ভাল দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি আমরা। কাল আমরা আমাদের সেরা খেলা দেখাতে চাই”।

কলকাতার আবহাওয়া নিয়ে কোচ বলেন, “আমাদের দেশেও এখানকার মতো গরম আবহাওয়া এখন। তবে এখানে ঘাম হয় বেশি। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমরা ১২ তারিখ এখানে এসেছি এবং অনুশীলন করেছি। এখানকার মাঠ, পরিবেশ খুবই ভাল। আশা করি, কাল দলের ছেলেদের ভাল খেলতে অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া আমরা ভরা গ্যালারির সামনে অনেক ম্যাচেই খেলেছি। এখানে তা থাকলেও অসুবিধা হবে না”।

ভারতের একনম্বর দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে নিজেদের নিয়ে যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, তা তাদের এই কথাবার্তাতেই স্পষ্ট।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ছাড়াও আইএসএলের আরেক অংশগ্রহনকারী এফসি গোয়া রয়েছে গ্রুপ ‘ডি’-তে, যেখানে রয়েছে সৌদি আরবের শক্তিশালী দল আল নাসর, ইরাকের আল জাওরা এসসি এবং তাজিকিস্তানের এফসি ইস্তিকলল। গ্রুপ পর্বে তারা প্রথম মাঠে নামবে বুধবার ঘরের মাঠে আল জাওরার বিরুদ্ধে।