এই লেখাটি ইংরেজিমালয়লামেও পড়তে পারেন।

ফের ভারতের সাফল্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই আফগানিস্তান। বৃহস্পতিবার তাজিকিস্তানের হিসোর সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে কাফা নেশনস কাপের গ্রুপ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচে আফগানদের বিরুদ্ধে হতাশাজনক ০-০ ড্রয়ের ফলে ভারতের প্লে অফে ওঠার রাস্তা আরও কঠিন হয়ে যায়। তবে রাতে ইরান ও তাজিকিস্তান ২-২ ড্র করায় ভারতের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে এবং তারা গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

গত বছর বিশ্বকাপ ২০২৬ ও এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত ৬ পয়েন্টের মধ্যে ৫ পয়েন্টই খোয়ায়। গুয়াহাটিতে গত বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১-২ ব্যবধানে হেরে যায় ভারত। অপর ম্যাচে ড্র করে তারা। এ বারও সেই আফগানদের কাছেই ফের ধাক্কা খায় নীল-বাহিনী। তবে সে বার ভারতের অভিযান তারা থামাতে পারলেও এ বার পারেনি। সৌজন্যে আয়োজক তাজিকিস্তান, যারা ইরানের বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও দুই গোলই শোধ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ২০ নম্বর দলকে হারিয়ে প্লে-অফের দরজা খুলতে পারেনি।

লিগ টেবলে ভারত ও তাজিকিস্তানের পয়েন্ট সমান। কিন্তুতাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে ২-১ জয় পেয়েছিল ভারত। এই জয়ের জন্যই প্লে অফে জায়গা হল খালিদ জামিলের দলের। তাজিকদের বিরুদ্ধে জয় ইরানের বিরুদ্ধে ০-৩ হারের পর এই ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ের ফলে ভারত তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়ে গেল। সেই কারণেই তারা ৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচে সম্ভবত ওমান বা উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে

অপর গ্রুপে ওমান ও উজবেকিস্তান সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষ দুই স্থানে রয়েছে। উভয়েরই গোল পার্থক্য সমান (+১) এবং দুই ম্যাচে সমান সংখ্যক গোল (৩) করেছে দুই দলই। তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিজ প্রজাতন্ত্র যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে, প্রত্যেকের ঝুলিতে এক পয়েন্ট করে। শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর গ্রুপ এ-র শেষ ম্যাচে ওমান মুখোমুখি হবে তুর্কমেনিস্তানের আর উজবেকিস্তান খেলবে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে উজবেকিস্তানের তাশখন্দে। এই দুই ম্যাচের পর বোঝা যাবে সোমবার ভারতের প্রতিপক্ষ কে হতে চলেছে।

বৃহস্পতিবারের ম্যাচে একাধিক সময় দাপট দেখায় ভারত। বেশ কিছু সম্ভাবনাময় সুযোগও তৈরি করে তারা। তা সত্ত্বেও শৃঙ্খলাবদ্ধ আফগান রক্ষণভাগে চিড় ধরাতে ব্যর্থ হয় ইরফান ইয়াডওয়াডরা। ফলে তাদের ভাগ্য এখন নির্ভর করছে ইরান বনাম তাজিকিস্তান ম্যাচের ফলাফলের ওপর।

প্রথম মিনিট থেকেই এ দিন ভারত বল দখলে রাখার চেষ্টা করে। সতর্ক কৌশল নিয়ে পিছন থেকে আক্রমণ গড়ে তোলে তারা। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের ভরসা ছিল আঁটোসাঁটো রক্ষণভাগ ও মাঝেমধ্যে পাল্টা আক্রমণ। শুরুর দিকেনাওরেম মহেশআশিক কুরুনিয়ান প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করে গোলের পাস বাড়ানোর করলেও সুযোগ নষ্ট হয়।ইরফান ইয়াডওয়াড বক্সের ভেতর থেকে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন। আফগান গোলরক্ষক ফয়সাল হামিদি সারা ম্যাচেই সতর্ক ছিলেন। প্রথমেজিথিন এমএস এবং পরে মনবীর সিংকে গোল করতে দেননি তিনি।

প্রথমার্ধে ভারত প্রায়ই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে। এ দিন চোটগ্রস্ত সন্দেশ ঝিঙ্গনের পরিবর্তে মূলতরাহুল ভেকে-ই রক্ষণভাগ সামলান। দুই দলের জন্যই সেট-পিস পরিস্থিতি তৈরি হলেও সেখান থেকে কোনও ফল আসেনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, আফগানদের কয়েকটি দূরপাল্লার শট ঠেকাতেগুরপ্রীত সিং সান্ধু-কে একাধিকবার পরীক্ষা দিতে হয়, যা প্রমাণ করে কেন তিনি ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান ভরসা। বিরতিতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কোনও দলই গোলের দেখা পায়নি।

দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের আক্রমণে তরতাজা শক্তি যোগ করেন বিক্রম প্রতাপ সিং, মনবীর সিং এবং পরেউদান্ত সিংলালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। দুই উইং ব্যবহার করে ওভারল্যাপিং এবং বুদ্ধিদীপ্ত লং বলের মাধ্যমে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে ভারত। তবে সেগুলি কার্যকর করে উঠতে পারেননি তাঁরা। ছাঙতের প্রথম উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল একটি কার্লিং ক্রস, কিন্তু সেটিতে সংযোগ করতে ব্যর্থ হন মনবীর। ভালপুইয়া বারবার বল পুনর্দখল করলেও ভারতের আক্রমণ ফাইনাল থার্ডে বারবার গতি হারায়।

ভারতের চাপ উপেক্ষা করে আফগানিস্তানও কৌশলগত পরিবর্তন আনে। যেমন দেশের হয়ে প্রথম খেলা হাবিবুল্লাহ হোতাককে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত। তাদের পাল্টা আক্রমণ এবং সেট-পিস ডেলিভারি নিয়মিত চাপে রাখে ভারতকে। শেরজাদের নিচু শট থেকে দারুণ সেভ করে ভারতকে লড়াইয়ে রাখেন গুরপ্রীত। ম্যাচের শেষ দিকে দুই দলই মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায়—লম্বা থ্রো, ধারালো ক্রস ও দ্রুত সেট-পিস দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত কোনও গোল দেখা যায়নি। ভারত একাধিক সম্ভাবনাময় মুহূর্ত তৈরি করলেও, জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাব ছিল