২০১৪-য় আইএসএল শুরুর পর থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ দেশীয় প্রতিভার উত্থান ধীরগতিতে হলেও ঘটেছে ধারাবাহিকভাবে। যদিও এই লিগ সারা বিশ্বের তারকাদের স্বাগত জানিয়েছে, তবে বছরের পর বছর ধরে আইএসএলের প্রকৃত পরিচয় গড়ে তুলেছেন ভারতীয় ফুটবলাররাই। তাঁরা মাঠে সাহস ও প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন এবং এ দেশের ফুটবলপ্রেমীদের গর্বিত করেছেন।

এক দশকেরও বেশি সময়ের স্মৃতিকে পিছনে ফেলে রেখে বরং আমরা ফিরে তাকাই সেই সেরা ভারতীয় ফুটবলারদের দিকে এবং শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের, যারা আইএসএলে খেলে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। এই লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে আমাদের সর্বকালের সেরা ভারতীয় একাদশ।

গোলকিপার: বিশাল কয়েথ

গোলপোস্টের নিচে নির্ভরযোগ্য এক নাম, বিশাল কয়েথ নিঃশব্দে নিজেকে আইএসএলের অন্যতম ধারাবাহিক গোলকিপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এফসি পুনে সিটি, চেন্নাইন এফসি এবং বর্তমানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট—এই তিন ক্লাব মিলিয়ে তিনি প্রায় ১৫০টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রতিটি ক্লাবেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং প্রতিটি মরশুমেই তাঁর প্রভাব ও গুরুত্ব ক্রমশ বেড়েছে।

নিখুঁত রিফ্লেক্স, বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ এবং চাপের মুখে শান্ত থাকার দক্ষতার জন্য পরিচিত কয়েথ, মোহনবাগানের সাম্প্রতিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দু'বার গোল্ডেন গ্লাভ জিতেছেন এবং গত তিন মরশুমে দলকে চারটি আইএসএল ট্রফি জেতাতে সাহায্য করেছেন। তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৫৪টি ক্লিন শিট, যা আইএসএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পিছন থেকে তাঁর কার্যকরী উপস্থিতিই প্রমাণ করে, কেন তাঁকে এই সেরা আইএসএল ভারতীয় একাদশে গুরপ্রীত সিং সান্ধু ও অমরিন্দর সিংয়ের থেকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।

রাইট-ব্যাক: প্রীতম কোটাল

আইএসএলের প্রথম মরশুম থেকে আজ পর্যন্ত এই লিগে এক নিরবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি দেখা গিয়েছে প্রীতম কোটালের। ২০১৪-য় এফসি পুনে সিটির হয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তার পর থেকে তিনি ধীরে ধীরে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডারে পরিণত হয়েছেন। রাইট-ব্যাক হোক বা সেন্টার-ব্যাক, বিভিন্ন কোচের অধীনে ও সিস্টেমে এবং ভূমিকায় প্রতিটি চ্যালেঞ্জেই নিখুঁতভাবে মানিয়ে নিয়েছেন প্রীতম।

আইএসএলে ১৮০-র বেশি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এটিকে এফসি এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে ট্রফি জিতেছেন বিশুদ্ধ পেশাদারিত্ব দেখিয়ে। সব মিলিয়ে তাঁর কেরিয়ার গড়ে উঠেছে ধারাবাহিকতা ও নিষ্ঠার ভিত্তিতে। রক্ষণে তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণতা, পরিশ্রমের মানসিকতা এবং নিঃশব্দ নেতৃত্ব তাঁকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। আইএসএলের ইতিহাসে রাইট-ব্যাক পজিশনে তাঁর মত ফুটবলার খুব কমই আছে।

সেন্টার-ব্যাক: রাহুল ভেকে

২০১৮–১৯ আইএসএল ফাইনালে জয়সূচক গোল করা থেকে রাইট-ব্যাক এবং সেন্টার-ব্যাক উভয় পজিশনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসা রাহুল ভেকে প্রায় সব দিক থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তাঁর বহুমুখিতা, বড় ম্যাচে ভাল খেলার মানসিকতা এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁকে আইএসএল ইতিহাসের অন্যতম মূল্যবান ভারতীয় খেলোয়াড় করে তুলেছে।

চারটি ক্লাবের জার্সি গায়ে তিনি খেলেছেন আইএসএলে, যার মধ্যে বেঙ্গালুরু এফসি এবং মুম্বই সিটি এফসি-তেই সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন। দুই দলের হয়েই তিনি ট্রফি জেতেন। ৩৪ বছর বয়সী ভেকে আইএসএলে ১৭৬টি ম্যাচ খেলেছেন, ৫৭টি ক্লিন শিটে ভূমিকা পালন করেছেন এবং একজন ডিফেন্ডার হয়েও ১০টি গোল ও ৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন, যা এক চমকপ্রদ পরিসংখ্যান। যদিও চিঙলেনসানা সিং এবং আনোয়ার আলির মতো খেলোয়াড়েরা দক্ষতায় নজর কেড়েছেন, তবে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা, ধারাবাহিকতা ও প্রভাবের কারণে এই সেরা একাদশে এগিয়ে থাকছেন ভেকে।

সেন্টার-ব্যাক: সন্দেশ ঝিঙ্গন

আইএসএলে ভারতীয় রক্ষণাত্মক ফুটবলের প্রতীক যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে সেই নামটি নিঃসন্দেহে সন্দেশ ঝিঙ্গন। ২০১৪-য় কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র হয়ে মরশুমের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতার পর থেকেই তিনি লিগে এক নিরবিচ্ছিন্ন শক্তি হিসেবে থেকে গিয়েছেন। দল যেরকমই হোক না কেন, তিনি সর্বত্রই এনেছেন আগ্রাসন, প্রতিরোধ ও নেতৃত্ব।

ভয়হীন ট্যাকলিং, উড়ন্ত বল দখলে আধিপত্য এবং রক্ষণে সরব থাকার জন্য পরিচিত ঝিঙ্গন হৃদয় দিয়ে খেলা এক ডিফেন্ডার। আইএসএলে তাঁর ১৫০-এর বেশি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। মাঝে বেশ কয়েকবার গুরুতর চোটও পেয়েছেন তিনি। তবু যোদ্ধার মতো বারবার তিনি ফিরে এসেছেন চেনা ছন্দে। হোক সে কেরালার হলুদ জার্সি, ভারতের নীল জার্সি, মোহনবাগানের সবুজ-মেরুন বা এফসি গোয়ার কমলা পোশাক। প্রতিটি জার্সিতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঝিঙ্গন।

লেফট-ব্যাক: শুভাশিস বসু

এই পজিশনে কার থাকা উচিত, তা নিয়ে আদৌ কি কখনও কোনও সন্দেহ আছে? বোধহয় না। লেফট-ব্যাক পজিশনে একচেটিয়া ভাবে জায়গা করে নিয়েছেন শুভাশিস বোস এবং এই নিয়ে খুব একটা বিতর্কও নেই। যদিও মন্দার রাও দেশাই তাঁর কেরিয়ারের পরবর্তী পর্যায়ে লেফট-ব্যাকে রূপান্তরিত হয়ে নজর কেড়েছিলেন। তবে ধারাবাহিকতা, রক্ষণের দক্ষতা এবং বড় ম্যাচে নিজের কার্যকারিতার কারণে শুভাশিসই সেরা পছন্দ

শুভাশিস তাঁর আইএসএল যাত্রা শুরু করেন বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে, এর পর মুম্বই সিটি এফসি-তে খেলেছেন, এবং পরে নিজের শহরে ফিরে এসে যোগ দেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে, যেখানে তিনি ধীরে ধীরে আরও পরিণত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি মেরিনারদের অধিনায়ক এবং তাঁদের ঐতিহাসিক আইএসএল জোড়া খেতাব জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন

ডিপ ডিফেন্স হোক বা উইং বরাবর ওঠা—যে কোনও ভূমিকাতেই শুভাশিস আইএসএল ইতিহাসের অন্যতম পরিপূর্ণ ফুল-ব্যাক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সাম্প্রতিক মরশুমগুলিতে তিনি গোল করার অভ্যাসও তৈরি করেছেন। হয়ে উঠেছেন ‘শ্রী নির্ভরযোগ্য’।

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: লালেঙমাউইয়া রালতে (আপুইয়া)

মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ইতিমধ্যেই ১১৩টি আইএসএল ম্যাচ খেলে ফেলেছেন আপুইয়া। এখন পর্যন্ত যা পারফরম্যান্স তিনি দেখিয়েছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আইএসএল যুগের অন্যতম সেরা ভারতীয় মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন আপুইয়া। এমনকী, লেনি রডরিগেজ ও রাউলিন বোরজেসের মতো অভিজ্ঞদেরও পিছনে ফেলে দিয়েছেন।

বল পায়ে শান্ত ও নির্ভীক, বল ছাড়াও বুদ্ধিদীপ্ত তিনি। আপুইয়ার খেলায় এমন এক পরিণত মানসিকতা ধরা পড়ে, যা তাঁর বয়সকেও ছাড়িয়ে যায়। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-তে তাঁর অভিষেক হলেও প্রকৃত অর্থে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মুম্বই সিটি এফসি-তে যোগ দেওয়ার পর। সেখানে খুব অল্প সময়েই তিনি মাঝমাঠের অপরিহার্য অংশে পরিণত হন।

মুম্বইয়ে সাফল্য পাওয়ার পর আপুইয়া গত মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এ যোগ দেন এবং আগের মতোই দুর্দান্ত ফর্ম বজায় রেখে মেরিনারদের ঐতিহাসিক আইএসএল ডাবল জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: অনিরুদ্ধ থাপা

চেন্নাইন এফসি-তে সাত মরশুম কাটান অনিরুদ্ধ থাপা। সেখানে তিনি এমন এক মিডফিল্ডারে পরিণত হন, যাঁকে আইএসএল এর ইতিহাসে অন্যতম সম্পূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক প্রতিশ্রুতিবান তরুণ থেকে ক্লাবের অধিনায়ক হয়ে ওঠা পর্যন্ত, ধীরে ধীরে চেন্নাইনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। এর পর ২০২৩ সালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে বড়সড় এক রূপান্তর ঘটে তাঁর কেরিয়ারে। রক্ষণ থেকে আক্রমণে দ্রুত রূপান্তর ঘটানোর দক্ষতাই থাপার অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য। বল ছাড়া মুভমেন্ট, স্প্রিন্ট নেওয়া, বুদ্ধিদীপ্ত অবস্থান বাছাই এবং অল্প জায়গার মধ্যেও নিখুঁত পাস খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতার নিপুণ সংমিশ্রণ তিনি।

২০১৭–১৮ মরশুমে চেন্নাইন এফসি-র আইএসএল কাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন থাপা, আর সেই প্রভাবই তিনি ধরে রেখেছেন মোহনবাগানে এসেও। মাত্র দুটি আইএসএল মরশুমে ক্লাবকে তিনটি শিরোপা জয়ে সহায়তা করেছেন।

অন্যান্য শক্তিশালী মিডফিল্ডারদের তুলনায় থাপা নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন তাঁর অকল্পনীয় পরিশ্রম ও সৃষ্টিশীলতার নিখুঁত ভারসাম্যের মাধ্যমে—যা তাঁকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাওয়া সুরেশ সিং ওয়াংজামের মতো প্রতিভাবানদের চেয়েও এগিয়ে রেখেছে।

রাইট উইঙ্গার: লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে

আইএসএলে খুব কম ভারতীয় উইঙ্গারই লালিয়ানজুয়ালা ছাংতের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পেরেছেন। তাঁর গতি, সোজাসাপ্টা খেলার ধরণ আর মাঠে ক্রমবর্ধমান দক্ষতা তাঁকে রাইট উইং পজিশনে অনায়াসে প্রথম পছন্দ করে তুলেছে—যেখানে মনবীর সিং ও উদান্ত সিংয়ের মতো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীও হার মেনে যাবেন।

ছাংতের আইএসএল অভিযান শুরু হয় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র হয়ে। তবে তিনি সেখানে মাত্র একবার মাঠে নামার সুযোগ পান। এর পর দিল্লি ডায়নামোস এফসি-তে যোগ দিয়ে নজর কাড়তে শুরু করেন। তাঁর দ্রুত পায়ের কাজ, অল্প জায়গায় ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ওঠার দক্ষতা এবং গোল করার প্রবৃত্তিই তাঁকে নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে। এর পর তিনি চেন্নাইন এফসি-তে যোগ দেন। তবে শেষ দিকে একটু অনিয়মিত হয়ে পড়েন। কিন্তু মুম্বই সিটি এফসি-তে যোগ দেওয়ার পর ছাংতে যেন নিজের সেরা জায়গায় চলে আসেন।

আইল্যান্ডার্স-এর হয়ে তিনি শুধু উন্নতি করেননি, যেন বিস্ফোরণ ঘটান। ২০২২–২৩ মরশুমে ১০টি গোল ও ৬টি অ্যাসিস্ট করেন। জেতেন গোল্ডেন বল এবং মুম্বই সিটি এফসি-র লিগ শিল্ড জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পরের মরশুমেও ছাংতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন এবং ক্লাবকে আইএসএল কাপ জিততে সাহায্য করেন। এখন মুম্বই সিটি এফসি-র অধিনায়ক হিসেবে ছাংতে শুধুই একজন উইঙ্গার নন, তিনি এক জন নেতাও।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ

প্রায় এক দশক ধরে আইএসএলে মাঝমাঠের সৃজনশীলতার দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ। আইএসএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি (২৭৯) করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় তাঁর কার্যরকারিতা কতটা। আটটি মরশুম জুড়ে তিনি এফসি গোয়ার নির্ভরযোগ্য তারকা ছিলেন। চমৎকার থ্রু বল, নিখুঁত সেট-পিস কিংবা সহজাত লিঙ্ক-আপ খেলা—সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন ব্র্যান্ডন।

চোট-আঘাত মাঝে মাঝে তাঁর ছন্দ নষ্ট করলেও, নিজের দিনে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দৃষ্টিশক্তি, খেলা বদলে দেওয়ার সামর্থ্য এবং রক্ষণভাগ ভেদ করার দক্ষতায় ব্র্যান্ডন ছিলেন সেরা ভারতীয় খেলোয়াড়দের অন্যতম।

নিজের স্থানীয় ক্লাব এফসি গোয়ার হয়ে স্মরণীয় আটটি বছর কাটানোর পর গত মরশুমে তিনি আবার মুম্বই সিটি এফসি-তে যোগ দেন। ১৩৪টি ম্যাচ, ১১টি গোল এবং ২৭টি অ্যাসিস্ট করেন। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, একজন ভারতীয় প্লেমেকার হিসেবে আইএসএলে ব্র্যান্ডনের প্রভাব কতটা অপরিসীম।

লেফট উইঙ্গার: বিপিন সিং

দু’বার আইএসএল লিগ শিল্ড এবং দু’বার আইএসএল কাপ জয়ী বিপিন সিংয়ের অভিযান ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং সেরা মুহূর্তের গল্প। এটিকে এফসি থেকে মুম্বই সিটি এফসি-তে যোগ দেওয়ার পরই তিনি প্রকৃত অর্থে উন্নতি করেন এবং আইএসএলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভারতীয় উইঙ্গারদের একজন হয়ে ওঠেন।

তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ২০২০–২১ আইএসএল ফাইনালে, যখন তিনি একেবারে শেষ মিনিটে ম্যাচজয়ী গোলটি করে মুম্বই সিটি এফসিকে প্রথমবারের মতো আইএসএল কাপ জেতান। সেই মুহূর্ত থেকেই আত্মবিশ্বাস ও ধারাবাহিকতার সঙ্গে এগিয়ে চলেন বিপিন। নিয়মিত গোল, অ্যাসিস্ট এবং বাঁ উইং দিয়ে তোলা আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি।

দু’বার মুম্বই সিটির লিগ শিল্ড জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং অবাক করা বিষয়, ২০২৩–২৪ আইএসএল কাপ ফাইনালেও গোল করেন তিনি, যেখানে মুম্বই সিটি এফসি ৩–১ ব্যবধানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারিয়ে ট্রফি জেতে। ১৪০টিরও বেশি আইএসএল ম্যাচ, ২৭টি গোল এবং ১২টি অ্যাসিস্ট—তাঁর এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, ফাইনাল থার্ডে বিপিন এখন এক নিরবচ্ছিন্ন হুমকি, যিনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড: সুনীল ছেত্রী

এই সেরা একাদশের একেবারে সামনে কে থাকবেন, তা নিয়ে কখনও কোনও সন্দেহ ছিল বলে মনে হয় না। সুনীল ছেত্রী শুধুমাত্র আইএসএল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ভারতীয় গোলদাতাই নন — তিনি ভারতীয় ফুটবলের হৃদস্পন্দন।

প্রথমদিকে দুটি মরশুম মুম্বই সিটি এফসিতে কাটানোর পর ২০১৭-য় বেঙ্গালুরু এফসি যখন আইএসএলে যোগ দেয়, তখন থেকেই ছেত্রী হয়ে ওঠেন এই ক্লাবের মুখ। সেই সময় থেকে তিনি প্রতি মরশুমেই নিজের উপস্থিতির জানান দিয়েছেন — গোল, অ্যাসিস্ট বা শুধুই নেতৃত্ব দিয়ে। ১৮০টিরও বেশি আইএসএল ম্যাচ, ৭৫টি গোল, ১৩টি অ্যাসিস্ট, অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রভাব ফেলার মতো অবদান এবং চল্লিশোর্ধ বয়সেও একই রকম পরিশ্রম—সবকিছু মিলিয়ে তিনি পেশাদারিত্ব ও ধারাবাহিকতার জীবন্ত উদাহরণ।

মিডফিল্ডারদের সঙ্গে মিশে খেলা, মাঝমাঠ থেকে নীচে নেমে এসে দলের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি ও রক্ষা করা, এবং ঠিক সময়ে বক্সে ঢুকে পড়ার দক্ষতা —এই গুণগুলি সুনীল ছেত্রীকে সর্বকালের সেরা ভারতীয় একাদশের জন্য আদর্শ সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড বানিয়ে তোলে।