এই লেখাটি ইংরেজিমালয়লামেও পড়তে পারেন।

১৩ বছর পরে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন এক দেশীয় কোচ, যাঁর নাম খালিদ জামিল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতীয় দল প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই এক অভাবনীয় সাফল্য পেল।
ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দু’টি দলকে হারিয়ে কাফা (CAFA) নেশনস কাপের তৃতীয় সেরা দলের খেতাব জিতে নিল ভারত।

সোমবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফিফা ক্রমতালিকায় ৫৪ ধাপ ওপরে থাকা ওমানকে হারিয়ে এই খেতাব জিতে নেয় ভারত। এদিন তাজিকিস্তানের হিসোরে সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচে ওমানকে পেনাল্টি শুট আউটে ৩-২-এ হারায় তারা। নির্ধারিত সময়ে ফল ছিল ১-১। ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়েও কোনও গোল হয়নি।

শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুট আউটে জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন অভিজ্ঞ তারকা গোলকিপার ও ভারতের অধিনায়কগুরপ্রীত সিং সান্ধু তিন-তিনটি শট বাঁচিয়ে দলকে অনেক দিন পর এই আন্তর্জাতিক খেতাব জিতিয়ে দেন তিনি।

এ দিন ৫৫ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ওমানের পরিবর্ত ফরোয়ার্ড জামিল সালিম আল ইয়াহমাদি। ৮০ মিনিটের মাথায়উদান্ত সিং-য়ের অসাধারণ গোলে সমতা আনে ভারত।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচ টাই ব্রেকারে গড়ালে ভারতের প্রথম দু’টি শটে গোল করেনলালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরাহুল ভেকে। কিন্তু প্রথম দু’বারেই ব্যর্থ হন আল সাদি ও আল খাবি। পরের দুই রাউন্ডেআনোয়ার আলির শট গোলকিপার আটকে দিলেওজিথিন এমএস গোল করেন। তবে পরপর দু’টি শটে গোল করেন ওমানের আল রুশাইদি ও আল ঘাসানি।

শেষ রাউন্ডে উদান্ত সিং ব্যর্থ হওয়ায় ওমানের আল ইয়াহমাদির বিরুদ্ধে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন গুরপ্রীত। বহু যুদ্ধের নায়ক ভারতীয় গোলকিপার মাথা পুরোপুরি ঠাণ্ডা রেখে দুর্দান্ত দক্ষতায় ওমানের তারকা ফরোয়ার্ডের শট আটকে দেন এবং ম্যাচ জিতে নেন।

টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ফিফা ক্রমতালিকায় ২৭ ধাপ ওপরে থাকা আয়োজকতাজিকিস্তানকে ২-১-এ হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দেয় খালিদ জামিলের ভারত। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে ৫৪ ধাপ ওপরে থাকা ওমানকে হারাল তারা। সাম্প্রতিককালে এমন সাফল্য পায়নি ভারত। বিদেশের মাটিতে বিদেশি কোচদের অধীনেও তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ফুটবলখেলিয়ে দেশকে হারাতে পারেনি ভারতীয় দল। কিন্তু ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের জমানায় অন্য চেহারা দেখা গেল সেই দলের।

এই টুর্নামেন্টে যে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে এসেছে ভারত, এ কথা বলা যায় না। বেশ কয়েকজন নির্ভরযোগ্য তারকাকে ছাড়াই জাতীয় কোচ হিসেবে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দল নিয়ে তাজিকিস্তানে পৌঁছন খালিদ জামিল। দেখা গেল নির্ভরযোগ্য তারকাদের ছাড়াই সাফল্য অর্জন করে নিয়েছেন তিনি। ভারত ফাইনালে উঠতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু আটদলীয় এই টুর্নামেন্টের সেরা চারের মধ্যে থেকেছে এবং তৃতীয় সেরার খেতাবও জিতে নেয় তারা। তাও ক্রমতালিকায় অনেক এগিয়ে থাকা দু-দু’টি দলকে হারিয়ে। এই সাফল্য মোটেই অবহেলা করার মতো নয়।

ভারত সোমবারের ম্যাচের আগে দশবার ওমানের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু কখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনও জয় পায়নি। ওমান সাতটিতে জেতে ও তিনটি ম্যাচে ড্র হয়েছিল। এর আগে দুই দলের শেষ সাক্ষাৎ হয় ২০২১-এর মার্চে। লকডাউনের পর সেটিই ছিল ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেই ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি ১-১ ড্রয়ে শেষ হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর পর ওমানের মুখোমুখি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় অর্জন করে নিল ভারতীয় দল।

এ দিন যদিও ওমান বল দখলে আধিপত্য দেখায়, তবে দুই দলই প্রায় সমান সংখ্যক সুযোগ তৈরি করে। ভারত শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। বিক্রম প্রতাপ সিং ও লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে উইং বরাবর পাল্টা আক্রমণ চালায়।

ভারতের কাছে সুবর্ণ সুযোগ আসে ১৬ মিনিটের মাথায়, যখন মহম্মদ উভয়সের লম্বা থ্রো নিখিল প্রভুর মাথা হয়ে পৌঁছয় আনোয়ারের কাছে। তাঁর শক্তিশালী হেডার ওমানের গোলরক্ষক ইব্রাহিম আল মুখাইনি দারুণভাবে না বাঁচালে তখনই এগিয়ে যেত ভারত।

ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে শুরু করে ওমান। ২৫তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ইসসাম আল সাবহির নেওয়া শটকে ভারতের গোলরক্ষক এক হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর নাসের আল রাওয়াহি ভারতীয় রক্ষণের ফাঁক গলে একেবারে গোলের সামনে চলে আসেন। তাঁর সামনে শুধু গুরপ্রীত ছিলেন, কিন্তু তাঁর কোণাকুনি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে ভারত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়, যখন ছাঙতের নীচু কাট-ব্যাকে ইরফান ইয়াডওয়াড শট নেন, কিন্তু সঠিকভাবে সংযোগ করতে না পেরে তা গোলের বাইরে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ওমান আক্রমণে যায় এবং খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই গোল করে। আবদুল্লাহ ফাওয়াজ বক্সের ভেতর থেকে আউটস্টেপে ফ্লিক করেন আল ইয়াহমাদিকে, যিনি দূরের পোস্টের দিক দিয়ে সহজেই বল জালে জড়িয়ে দেন (১-০)

গোল খাওয়ার পর খেলায় সমতা ফেরানোর চেষ্টা চালাতে থাকে ভারত। ম্যাচের শেষ ১০ মিনিট বাকি থাকতে কোচ খালিদ জামিল মাঠে নামান উদান্ত ও সুরেশ সিং ওয়াংজামকে। পরিবর্তন আনার ফল মিলতে একদমই দেরি হয়নি।

৮০তম মিনিটে রাহুল ভেকের লম্বা থ্রো দানিশ ফারুক মাথা দিয়ে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে পাঠান, যেখানে উদান্ত এগিয়ে এসে এক স্বতঃস্ফূর্ত হেডে বল গোলে পাঠিয়ে দেন (১-১)। গোলের পর ভিএআর পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ঠিকই, তবে শেষমেশ দেখা যায় সেটি গোলই ছিল।

অতিরিক্ত সময়ে যাওয়ার আগে সংযুক্ত সময়ে উদান্ত আরেকটি সুযোগ তৈরি করেন, যখন তিনি বদলি হিসেবে নামা মনবীর সিং (জুনিয়র)-কে একটি পাস বাড়ান। তবে ওমানের রক্ষণ তা সামলে নেয়।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই আল বুসাইদি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ফলে সংখ্যার দিক থেকে বাড়তি সুবিধা পায় ভারত। তবু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দুই দলের মধ্যে তেমন কোনও ভাল সুযোগ তৈরি হয়নি। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবার নায়ক হয়ে ওঠেন গুরপ্রীত। আল ইয়াহমাদির শট এক চমৎকার ডাইভ দিয়ে রুখে দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেন কাফা নেশনস কাপ ২০২৫-এর ব্রোঞ্জ পদক।

ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোলরক্ষক, অধিনায়ক), রাহুল ভেকে, আনোয়ার আলি, নিখিল প্রভু (সুরেশ সিং ওয়াংজাম-৭৮’), লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, বিক্রম প্রতাপ সিং (জিথিন এমএ-৪৬’), ইরফান ইয়াডওয়াড (উদান্ত সিং-৭৮’), নাওরেম মহেশ সিং (মনবীর সিং জুনিয়র-৬৪’), মিংথানমাউইয়া রালতে, মহম্মদ উভেয়স (রোশন সিং নাওরেম-৬৪’), দানিশ ফারুখ ভাট (জিকসন সিং-১১৬’)।