কলকাতায় এসে প্রথম দুই মরশুমেই কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাণোচ্ছ্বল আচরণের জন্য হয়ে উঠেছেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসমর্থকদের নয়নের মণি।

গত দুই মরশুমের মতোই এ বারও সমর্থকদের আনন্দ দিতেই এসেছেন বলে জানিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেসন কামিংস

সদ্য শুরু হয়েছে ভারতের জাতীয় ক্লাব মরশুম। চলতি ডুরান্ড কাপ দিয়ে শুরু হওয়া মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট রয়েছে যথেষ্ট ভাল ফর্মে। দলের বিদেশিরা সদ্য কলকাতায় এসে দলের সঙ্গে যোগ দিলেও, তাঁদের দক্ষতার ধার এতটুকু কমেনি। ফিটনেসে সামান্য ঘাটতি থাকলেও স্কিল রয়েছে আগের মতোই। কামিংস সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। মরশুমের প্রথম ম্যাচে নেমেই একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি এবং ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বিরুদ্ধে দলকে ৫-১-এ জেতাতে সাহায্য করেন।

গত মরশুমে নজির গড়া সাফল্যে (আইএসএলে জোড়া খেতাব) উচ্ছ্বসিত কামিংস এ মরশুমে আরও উন্নতি করতে চান ও ক্লাবকে আরও সাফল্য এনে দিতে চান। বলেন, “গত মরশুমে যা যা করার ছিল, আমরা সব করেছি। এবার আমাদের আরও ভাল করতে হবে। এ বার যত টুর্নামেন্টে নামব, চেষ্টা করব সব জিততে। প্রতিটা ম্যাচে মাঠে নামব জেতার জন্যই”। সম্প্রতি এমবিএসজি টিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো বলেন তিনি।

সাফল্যে ভরা গত মরশুমের স্মৃতি টেনে এনে কামিংস বলেন, “যখন থেকে এখানে এসেছি, সাফল্যই পেয়েছি। প্রথম মরশুম ভাল গিয়েছিল, কিন্তু ফাইনালে অল্পের জন্য হেরে গিয়েছিলাম। তারপর গত মরশুম— অসাধারণ! ডাবল জিতলাম, দু’টো ট্রফি। কখনও মনে হয়নি যে, আমরা খারাপ খেলছি। বরং প্রতি ম্যাচে যেন আরও উন্নতি করছিলাম। এতেই বোঝা যায়, আমাদের দলে দারুণ মানের সব খেলোয়াড়রা আছে। নিঃসন্দেহে লিগের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে তারা। গত মরশুম ছিল দুর্দান্ত, তাই এ মরশুমেও একই রকম আশা”।

দলের মধ্যে অটুট বন্ধন, দুর্দান্ত বোঝাপড়া ও মাঠের বাইরে ফুটবলারদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্কই এই সাফল্যের উপাদান, মনে করেন কামিংস। বিশ্বকাপের আসরে খেলে আসা অজি তারকা বলেন, “যখন এমন সতীর্থদের সঙ্গে খেলি, যাদের সঙ্গে মাঠে আর মাঠের বাইরে ভাল বোঝাপড়া আছে, তখন কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার অভিজ্ঞতায়, সবচেয়ে সফল দল তারাই, যাদের মধ্যে ভাল বাঁধন থাকে। ড্রেসিং রুমে আমাদের সম্পর্ক একেবারে পরিবারের সদস্যদের মত”।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা আমার ভাইয়েরা তো আছেই, আলবার্তো আছে, টম আছে— সব বিদেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক আমার। আর ভাল লাগার ব্যাপার হল— এখানে কোনও ছোটখাটো গ্রুপ নেই, সবাই মিলে মিশে থাকে। ভারতীয় ছেলেদের সঙ্গেও দারুণ বন্ধুত্ব আছে”।

সবুজ-মেরুন শিবিরে টিমস্পিরিটের প্রশংসা করে কামিংস বলেন, “এখানে এলেই মনে হয়, এরা আমার নিজের ভাই। এটাই পার্থক্য গড়ে দেয়—ড্রেসিং রুমে সবাই একে অপরের জন্য সেরাটা চায়। মরশুম লম্বা, মাঝে মাঝে কঠিন হয়, বেঞ্চে বসেও সবাই দলের জন্য সেরাটা চায়— এটাই আসল ব্যাপার। আমাদের টিম স্পিরিট দারুণ— সবাই চায় সবাই ভাল করুক। মাঠের বাইরে আমরা আনন্দ করি, আড্ডা দিই। মাঠে নামলেই সিরিয়াস হয়ে যাই, একে অপরকে সাহায্য করি”।

আইএসএলে গত দুই মরশুমে ১৯ গোল করা এই অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ডের ফুটবলে সবচেয়ে প্রিয় গোল। সে নিজেই করুন বা কাউকে দিয়ে করান, গোল করতে ও করানোই যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় কাজ, তা জানিয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “গোল তো আমি সবচেয়ে ভালবাসি— ছোট হোক, বড় হোক— বল যদি জালে জড়ায়, আমার খুব আনন্দ হয়”।

আইএসএলে পছন্দের গোলগুলি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “কয়েকটা গোল বেছে নিতে হলে বলব— ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে করা যে কোনও গোল অসাধারণ, কারণ ভক্তদের কাছে এর আলাদা মানে আছে। প্রথম বছরে মুম্বইয়ের বিপক্ষে জিতে লিগ শিরোপা এনে দেওয়া গোলটা ছিল স্পেশ্যাল। গত মরশুমে করা ফ্রি-কিকের গোলটা— কেরিয়ারে এ রকম গোল কখনও করিনি, হঠাৎই বল উপরের কোনায় চলে গেল! ফাইনালে পেনাল্টি থেকে করা গোল— ট্রফি এনে দেওয়া যে কোনও গোলই আমার কাছে স্পেশ্যাল”।

সবুজ-মেরুন সমর্থকদের জন্য আরও ভাল খেলতে চান কামিংস। তাদের ভালবাসায় মুগ্ধ কামিংস বলেন, “কলকাতায় নামতেই বিমানবন্দরে ভক্তদের ভিড়— অসাধারণ একটা মুহূর্ত! কেরিয়ারে এমন দৃশ্য আমি আগে দেখিনি। সত্যি বলছি, এখানকার ফ্যানরা এশিয়ার সেরা। প্রতি বছরই সমর্থন বাড়ছে। বিমানবন্দরে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা এমনভাবে স্বাগত জানায়, মন ভাল হয়ে যায়, আরও ভাল খেলতেও ইচ্ছে হয়”।

সমর্থকদের নিয়ে কামিংস আরও বলেন, “যত দিন যাচ্ছে প্রতি বছরই এখানে আরও ভালবাসা পাচ্ছি, জীবন আরও সুন্দর হচ্ছে। মনে পড়ে, প্রথমবার যখন এলাম… আহা, কী দারুণ সমর্থন! সবাই গলা ফাটিয়ে চিয়ার করে, ভালবাসে। প্রতি সমর্থক সব সময় মিষ্টি কথা বলে— এখানে থাকা, ট্রফি জেতা, ক্লাবের জন্য সেরাটা দেওয়ার মানে ওদের কাছে কতটা, সেটা আমি টের পাই। আমি জানি, এই ক্লাবটা এখানকার মানুষের জন্য কত দামি। ফ্যানরা তো ট্রফি জয়ই চায়— ওরা ভাল ফুটবল দেখতে চায়, গোল দেখতে চায়, ট্রফি দেখতে চায়। আমি খুশি মনে এগুলো দিতে রাজি”।

সবশেষে নিজের সেলিব্রেশন নিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জোকার সেলিব্রেশন আমি অনেকদিন ধরেই করি, আর যখন দেখি ফ্যানরাও সেটা করছে, ভীষণ ভাল লাগে। আশা করি ওদের জন্য আরও অনেকবার করতে পারব”।