ফুটবল জীবনের অন্যতম সেরা সময় তিনি কাটিয়েছেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগে। গোলকিপার হিসেবে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। ভরসা হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার সবুজ মেরুন বাহিনীর। কিন্তু দু’বছর আগে আইএসএল-কে বিদায় জানান তিনি। এ বার ফুটবলকেই বিদায় জানিয়েছেন প্রাক্তন তারকা গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য

সম্প্রতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বার্তা দিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তিনি। এই বার্তায় তিনি লিখেছেন, “আমার শরীর বলছে এখন থামার সময় এসেছে, কিন্তু আমার হৃদয় চিরকাল রয়ে যাবে সেই গোলপোস্টের নীচে”।

এই দীর্ঘ বার্তায় তিনি লিখেছেন, “মিস করব মাঠে সবচেয়ে জোরে চিৎকার করা নিজেকে—কখনও এমন কিছু শব্দও বলে ফেলেছি, যা শুনে মায়ের হয়তো খারাপ লেগেছে। কিন্তু বাবা হাসতেন আর বলতেন, ‘ম্যাচ জেতার জন্য যা করার দরকার, কর আজ যদি তাঁরা থাকতেন, আজকের মানুষটিকে দেখে নিশ্চয়ই তাঁরা গর্বিত হতেন”।

২০২৩ পর্যন্ত আইএসএলে সব মরশুমেই খেলেন বাংলার এই ৩৫ বছর বয়সী গোলকিপার। ২০২০-২১ মরশুমে গোল্ডেন গ্লাভজয়ী গোলকিপারের পরের মরশুম একদমই ভাল যায়নি। ১১টি ম্যাচে তিনি ২৯টি সেভ করলেও ১৯টি গোল খান। সে বার প্রথম কলকাতা ডার্বিতে পায়ে চোট লাগায় চারটি ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। সেই সময়ে শুভম সেন, শঙ্কর রায়রা গোল সামলান। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পরে তিনি ক্রমশ চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করলেও তা বজায় রাখতে পারেননি। হতাশ হয়ে দলের নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।

অবসর বার্তায় সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে অরিন্দম লিখেছেন, “মিস করব প্রতিটি সেভের আনন্দ, জার্সির ভার, গর্জন আর নীরবতা, উল্লাস আর যন্ত্রণা। আমার সতীর্থরা, যারা ভাই হয়ে উঠেছিলে, আমার কোচেরা, যারা আমাকে গড়ে তুলেছিলেন, আমার ভক্তরা, যারা আমাকে ভালবেসেছেন, আর আমার পরিবার, যারা সবসময় পাশে থেকেছে—সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ”।

নিজের স্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে অরিন্দম লেখেন, “ব্লসম, তোমার ভালবাসা আর বিশ্বাস আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। তুমি আমাকে আরও ভাল, বাস্তব আর কৃতজ্ঞ মানুষ করে তুলেছ”।

বিদায়বেলায় ফুটবলজীবন শুরুর দিনগুলি নিয়ে অরিন্দম স্মৃতি রোমন্থন করেছেন, “১৩ বছর বয়সে আমার একটাই ইচ্ছে ছিল – মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলব এবং একদিন ভাইচুং ভুটিয়ার মুখোমুখি হব। সেটাই ছিল স্বপ্ন। ১৪ বছর বয়সে আমি প্রথম পা রেখেছিলাম কলকাতা ময়দানে—একটা স্বপ্ন নিয়ে। আজ আমি সেখান থেকে বিদায় নিচ্ছি। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি কৃতজ্ঞতায় ভরা এক হৃদয়, কিছু দাগ, কিছু গল্প— যেগুলো সারাজীবন সঙ্গে থাকবে। আমি, আরিন্দম ভট্টাচার্য, বিদায় নিচ্ছি গর্ব, ভালবাসা আর অসীম কৃতজ্ঞতা নিয়ে”।

টানা দুই মরশুমে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরে ফুটবলমহলে অরিন্দমের মোহনবাগান শিবিরে থাকা নিয়ে যখন কোনও সন্দেহ ছিল না, তখন তিনি এসসি ইস্টবেঙ্গলে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। ২০২০-২১ আইএসএল ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে এটিকে মোহনবাগান হারলেও তাদের গোলকিপার মুম্বইয়ের অমরিন্দর সিংকে পিছনে ফেলে গোল্ডেন গ্লাভের দৌড়ে এক নম্বরে ছিলেন অরিন্দম।

সে বছর অমরিন্দর এটিকে মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার পরে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। অরিন্দম সবুজ-মেরুন শিবির ছেড়ে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দী শিবিরে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সম্ভবত এত বড় সিদ্ধান্তের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেন তিনি এবং ২০২২-এ কলকাতারই প্রতিবেশী শহর নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

কিন্তু সেখানেও ভাল সময় যায়নি তাঁর। সারা মরশুমে মাত্র দশটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। মাত্র তিনটি সেভ করেন। একটিও ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পারেননি। তাই হতাশ হয়ে পরের মরশুমে আইএসএল ছেড়ে আই লিগের ক্লাব ইন্টার কাশীতে যোগ দেন। এতদিন সেখানেই খেলছিলেন। অবশেষে কিপিং গ্লাভস ও বুট ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন।