এই লেখাটি ইংরেজিতে পড়তে পারেন।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০১৪-য় শুরুর পর বিদেশি খেলোয়াড়রা হয়ে উঠেছে এই লিগের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। আইএসএলে তাদের প্রভাব বরাবরই ছিল গুরুত্বপূর্ণ—লিগের মান, জনপ্রিয়তা এবং দেশীয় প্রতিভার বিকাশে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন তাঁরা।

বিদেশি ফুটবলাররা ছিলেন প্রেরণাদাতা, পরামর্শদাতা এবং ফুটবলের মান বহনকারী, যাঁরা লিগকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং প্রতিযোগিতার মান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এঁরা শুধু সেরা পারফর্মারই নন বরং ধারাবাহিকতার স্তম্ভ হিসেবেও নিজেদের প্রমাণ করেছেন।

গত এক দশকে একাধিক বিদেশি ফুটবলার শুধু যে এই লিগে ধারাবাহিক ভাবে খেলেছেন তা নয়, বরং উজ্জ্বলও হয়ে উঠেছেন এবং সফলও হয়েছেন। লিগের জনপ্রিয়তার ভিত হয়ে উঠেছেন তাঁরা। এঁরা সেই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, যাঁরা ফর্মের দিক থেকে অবিচল থেকে আইএসএলের ইতিহাসে নিজেদের নাম খোদাই করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে, আমরা নজর দিচ্ছি সেই বিদেশি ফুটবলারদের দিকে, যাঁরা আইএসএলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং প্রমাণ করেছেন যে শ্রেষ্ঠত্ব কেবল দক্ষতা বা ট্রফি জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দীর্ঘস্থায়িত্ব, ধারাবাহিকতা ও নিষ্ঠার মধ্যেও তা নিহিত থাকে।

তিরি - ১৫৪ ম্যাচ

হোসে লুই এসপিনোসা আরোয়ো, যিনিতিরি নামে বেশি পরিচিত, এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। আইএসএলের শুরুর দিনগুলি থেকে তাঁর রক্ষণাত্মক দক্ষতার মাধ্যমে ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল প্রমাণ রেখেছেন তিনি। তিরিকে অনন্য করে তুলেছে শুধু তাঁর পজিশনাল ডিসিপ্লিন বা আকাশে বল দখলের আধিপত্য নয়, বরং কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর ঠাণ্ডা মাথাও।

এটিকে এফসি,জামশেদপুর এফসি,মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবংমুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন এক অভিজ্ঞ নেতায়। আইএসএলের ন’টি মরশুম জুড়ে তিরির দীর্ঘস্থায়িত্ব এবং বিভিন্ন খেলার কৌশল ও সতীর্থদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে লিগের এক প্রকৃত কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আহমেদ জাহু- ১৫০ ম্যাচ

একজন অসাধারণ সংগঠক,আহমেদ জাহু প্রথম আইএসএলে নজর কাড়েনএফসি গোয়ার হয়ে সের্খিও লোবেরার অধীনে খেলে। এর পরমুম্বই সিটি এফসি এবংওডিশা এফসিতেও তাঁর ঔজ্জ্বল্য অব্যহত থাকে। মরক্কোর এই তারকা আইএসএলে নাম্বার ৬-এর ভূমিকাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করে।

নিখুঁত পাস, বুদ্ধিদীপ্ত ইন্টারসেপশন এবং বল দখলে অতুলনীয় দক্ষতার মাধ্যমে জাহু ছিলেন একজন বিপ্লবী ফুটবলার, যিনি তাঁর অবস্থান থেকে প্লে মেকারের ভূমিকা পালন করেছেন। আইএসএলের আটটি মরশুম জুড়ে জাহু মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, দেখিয়েছেন কীভাবে একজন খেলোয়াড় পুরো দলের খেলাকে প্রভাবিত করতে পারেন।

মুর্তাদা ফল- ১৪০ ম্যাচ

আইএসএলেমুর্তাদা ফলের মতো প্রভাব বিস্তারকারী ডিফেন্ডার খুব কমই দেখা গিয়েছে। আকাশে বল দখলে আধিপত্য, সেট-পিস থেকে গোল করার ক্ষমতা এবং রক্ষণভাগে দৃঢ় অবস্থান— এ সবকিছুর জন্যই ফল প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের কাছে এক দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আইএসএলে মোট ২৫টি গোল করেছেন, যা যে কোনও ডিফেন্ডারের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এফসি গোয়া, মুম্বই সিটি এফসি এবং ওডিশা এফসির হয়ে খেলার সময় তিনি দ্রুতই লিগের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ডিফেন্ডারদের একজন হয়ে ওঠেন। আইএসএলের সাতটি মরশুম জুড়ে ফল প্রতিটি দলের রক্ষণভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর শক্তিশালী ট্যাকল ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে এবং প্রমাণ করেছেন যে তিনি লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে ধারাবাহিক ও প্রভাবশালী সেন্টার-ব্যাকদের একজন।

হাভিয়ে হার্নান্দেজ- ১২৫ ম্যাচ

একজন বহুমুখী ও গতিশীল স্প্যানিশ মিডফিল্ডার,হাভিয়ে হার্নান্দেজ যে ক্লাবের হয়েই খেলেছেন, সেখানেই সৃজনশীলতার ঝলক দেখিয়েছেন। তীক্ষ্ণ ফুটবল মস্তিষ্ক ও যাদুকরী বাঁ-পায়ের ছোঁয়ায় হার্নান্দেজ মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের—অসাধারণ গোল, নিখুঁত অ্যাসিস্ট এবং এমন সব মুহূর্তের মাধ্যমে যা প্রায়শই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

এটিকে এফসির হয়ে আইএসএলে অভিষেকের পর, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, ওডিশা এফসি,বেঙ্গালুরু এফসি এবং জামশেদপুর এফসিতে চমকপ্রদ সময় কাটিয়েছেন তিনি। মিডফিল্ডে খেলার ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে বক্সের বাইরে থেকে গোল করার দক্ষতা কিংবা সেট-পিসে নিখুঁত ডেলিভারির মাধ্যমে হার্নান্দেজ প্রতিটি দলের জন্যই অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছেন।

হুগো বুমৌস- ১২৪ ম্যাচ

সেরা ফর্মে থাকলেহুগো বুমৌস যেন এক সুখপাঠ্য কবিতা। এফসি গোয়া থেকে মুম্বই সিটি এফসি, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট থেকে ওডিশা এফসি যেখানেই খেলেছেন, বুমৌস ছিলেন এক ধারাবাহিক ম্যাচ-উইনার এবং লিগের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্লেমেকার

ঝকঝকে ড্রিবলিং, অসাধারণ ভিশন এবং শূন্য থেকে সুযোগ তৈরির ক্ষমতার জন্য পরিচিত এই ফরাসি-মরোক্কান আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ছিলেন ফাইনাল থার্ডে এক্স-ফ্যাক্টর। আইএসএলের আটটি মরশুমে বুমৌস করেছেন ৩৫টি গোল এবং করেছেন ৩৯টি অ্যাসিস্ট।