মাঠের বাইরে আরেক জগৎ: সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচ আইএসএল ক্লাব
ক্লাবগুলির সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম শুধু আপডেট দেওয়ার জায়গা নয়, এগুলো এখন ভার্চুয়াল স্টেডিয়ামের রূপ নিয়েছে, যেখানে সমর্থকেরা নিজেদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ পায়।

এই লেখাটি ইংরেজি ও মালয়লামেও পড়তে পারেন।
এশিয়ার যে ফুটবল লিগগুলিকে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি মানুষ অনুসরণ করে, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) সেগুলির মধ্যে অন্যতম। শুধু দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামই নয়, প্রাণবন্ত ডিজিটাল কমিউনিটিও দেখা যায় এই লিগে।
আধুনিক যুগে একটি ফুটবল ক্লাবের প্রভাব শুধু মাঠে বা গ্যালারিতে নয়, মাঠের বাইরেও বহুদূর বিস্তৃত। এখন সমর্থকদের সঙ্গে তাদের প্রিয় ক্লাবের সবচেয়ে মজবুত সেতু হয়ে উঠেছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। কিছু আইএসএল ক্লাব তাদের সমর্থকদের পেয়েছে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারসূত্রে। অন্য ক্লাবগুলি, যেগুলি কয়েক বছর হল স্থাপিত হয়েছে এবং আইএসএলের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, তারা তাদের সমর্থক গোষ্ঠি তৈরি করেছে একেবারে শূন্য থেকে।
ক্লাবগুলির সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম শুধু আপডেট দেওয়ার জায়গা নয়, এগুলো এখন ভার্চুয়াল স্টেডিয়ামের রূপ নিয়েছে, যেখানে সমর্থকেরা নিজেদের আবেগ প্রকাশ করার সুযোগ পায়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এক্স, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যার দিক থেকে কোন কোন আইএসএল ক্লাব এগিয়ে আছে, সেই পরিসংখ্যান এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যাদের সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি এবং প্রাণবন্ত, এখানে তেমনই সেরা পাঁচটি ক্লাবের কথা তুলে ধরা হল।
কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি
এক্স: ২০ লক্ষ, ইনস্টাগ্রাম: ৩৮ লক্ষ, ফেসবুক: ১৩ লক্ষ, মোট: ৭১ লক্ষ ফলোয়ার।
এক অদ্বিতীয় ডিজিটাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেকেরালা ব্লাস্টার্স এফসি এবং এশিয়ার অন্যতম সর্বাধিক ডিজিটাল ফলোয়ার রয়েছে এই ফুটবল ক্লাবেরই। তাদের ব্যপ্তি শুধুই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ফুটে ওঠে ভারতীয় ফুটবলে ব্লাস্টার্স সমর্থকদের গভীর আবেগের প্রতিফলনেও।
কেরালা ব্লাস্টার্সের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি ভক্তদের অভিব্যক্তি ও সাংস্কৃতিক গর্বের এক মিলনস্থল। যখনই কোনও নতুন খেলোয়াড় বা কোচ ব্লাস্টার্সে যোগ দেন, তাঁদের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া অনুসারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। কারণ, সমর্থকেরা মাঠে যেমন, অনলাইনেও সমানভাবে প্রিয় দলকে সমর্থন জানায়।
ব্লাস্টার্সের প্ল্যাটফর্মগুলি যেমন ‘রিচ’-এর দিক থেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তেমনই উদ্যমের দিক থেকেও অনন্য। তিনটি প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রভাব প্রমাণ করে কীভাবে ক্লাবটি তাদের বিশ্বস্ত সমর্থকদের একটি প্রাণবন্ত অনলাইন সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত করেছে।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
এক্স: ৫ লক্ষ ২৬ হাজার, ইনস্টাগ্রাম: ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার, ফেসবুক: ১৩ লক্ষ। মোট: ২৬ লক্ষ ৭০ হাজার।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি ক্লাব। নিজেদের ঐতিহ্যকে সফলভাবে বিশাল অনলাইন অনুসারীতে রূপান্তরিত করেছে তারা। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট লিগের সবচেয়ে সফল শিরোপাজয়ী ক্লাবগুলির অন্যতম— দু’টি আইএসএল কাপ এবং দুটি লিগ শিল্ড জয়ের গৌরব অর্জন করেছে তারা। এ ছাড়াও ফুটবল সমর্থকদের সাইবার বিশ্বেও বেশ প্রভাবশালী এই ক্লাব।
ফেসবুক এখনও তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম, যা নতুন ও পুরনো প্রজন্মের সমর্থকদের মধ্যে সংযোগ বজায় রাখে—যারা সোশ্যাল মিডিয়া আসার অনেক আগে থেকেই এই ক্লাবের সমর্থক। অন্যদিকে, ক্লাবের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তরুণ সমর্থকদের মধ্যে দারুন ভাবে সাড়া ফেলেছে। তাদের সংখ্যা হয়তো কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র সমান নয়, কিন্তু তাদের প্রভাব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর শিকড়ে নিহিত।
চেন্নাইন এফসি
এক্স: ৮ লক্ষ ৬৭.৭ হাজার, ইনস্টাগ্রাম: ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার, ফেসবুক: ৫ লক্ষ ৩ হাজার। মোট: ১৮ লক্ষ ২০ হাজার।
আইএসএল-এর অন্যতম সফল ক্লাবচেন্নাইন এফসি, যারা দুবার লিগের শিরোপা জিতেছে। বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তাদের যথেষ্ট ভাল সংখ্যায় উপস্থিতি রয়েছে এবং তারা লিগের অন্যতম সেরা উৎসাহী সমর্থকগোষ্ঠী হওয়ার দাবি করতে পারে—যারা মাঠে যেমন, অনলাইনেও সব সময় নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করে।
চেন্নাইন এফসি’র এক্স অ্যাকাউন্ট আইএসএল-এ সবচেয়ে সক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলির অন্যতম, যেখানে প্রায়ই তাদের সমর্থকদের গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটাই বড় একটি কারণ, যার জন্য ক্লাবটি সমর্থকদের সঙ্গে এতটা গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে।
ইস্টবেঙ্গল এফসি
এক্স: ২ লক্ষ ৮৪.৭ হাজার, ইনস্টাগ্রাম: ২ লক্ষ ২৫ হাজার, ফেসবুক: ১৩ লক্ষ। মোট: ১৮ লক্ষ ১০ হাজার।
২০২০ সালে লিগে যোগ দেওয়ার পর থেকে,ইস্টবেঙ্গল এফসি শতবর্ষ পূরণের আবেগকে দ্রুতই ডিজিটাল উন্নয়নে রূপান্তর করেছে। তাদের সমর্থকেরা দেশের সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম, আর সেই কণ্ঠস্বর প্রায়ই অনলাইনে বিস্ফোরিত হয়, বিশেষত যখন দল সাফল্য পায়।
লাল-হলুদ বাহিনীর শক্তি মূলত ফেসবুকে তাদের আধিপত্যে, যেখানে তারা ‘রিচ’-এর দিক থেকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র সমকক্ষ। তাদের সমর্থকদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া শুধু দলের পাশে থাকার মাধ্যম নয়, বরং প্রতিদিন তাদের প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে বেঁচে থাকা ও তাদের গর্ব অনুভব করারও জায়গা, আর তাদের সোশ্যাল হ্যান্ডলগুলি এই আবেগকে দারুণভাবে তুলে ধরে।
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির কনটেন্ট এই ক্লাবের ঐতিহ্য ও আবেগকে উদযাপন করে, যা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা নিবেদত প্রাণ সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গে অনুরণিত হতে থাকে।
বেঙ্গালুরু এফসি
এক্স: ৩ লক্ষ ২২.২ হাজার, ইনস্টাগ্রাম: ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার, ফেসবুক: ৪ লক্ষ ৬১ হাজার। মোট: ১৩ লক্ষ ৮০ মিলিয়ন।
এই তালিকার পঞ্চম স্থানে অবশ্যই থাকবেবেঙ্গালুরু এফসি, যারা অল্পের জন্য এগিয়ে রয়েছে এফসি গোয়ার থেকে। তাদেরও তিনটি প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে ১৩ লক্ষের বেশি অনুসারী আছে। পেশাদারিত্ব ও ধারাবাহিকতার জন্য বিখ্যাত বিএফসি’র সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতিতেও তা প্রতিফলিত হয়। ভারতীয় দলের তারকা সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিং সান্ধু ও রাহুল ভেকেদের মতো খেলোয়াড়দের ক্লাব হওয়ায় তারা স্বাভাবিকভাবেই বেশ জনপ্রিয়। তবে তাদের একেবারে আলাদা করে তোলে তাদের কনটেন্ট উপস্থাপনার ধরন।
ভক্তরা তাদের নজরকাড়া গ্রাফিক্স ভালোবাসেন, পাশাপাশি ঘরোয়া ফুটবল, যুব দল এবং ভারতীয় দলের ম্যাচগুলোকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার ধরণও বেশ প্রশংসা করার মতো।
‘দ্য ব্লুজ’ শুধু ফুটবলের জন্যই নয়, আরও অনেক কিছুর জন্য তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। তারা সামাজিক ইস্যু, ক্যাম্পেইন ও কমিউনিটি উদ্যোগে কখনও পিছপা হয়নি, যা তাদের অনলাইনে সবচেয়ে উজ্জ্বল ক্লাবগুলির অন্যতম করে তুলেছে।