এই লেখাটি ইংরেজিতে পড়তে পারেন।

ছ’বছর হতে চলল, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সংসারে রয়েছেন তারকা ফরোয়ার্ড
মনবীর সিং। সম্প্রতি ক্লাবের সঙ্গে তাঁর এই কয়েক বছরের যাত্রার কথা তুলে ধরেছেন মনবীর—যার মধ্যে রয়েছে সমর্থকদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক এবং কলকাতার মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ।

২৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে ১১১টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৩টি গোল করেছেন। এ ছাড়াও ১৮টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি দলের সঙ্গে দু’বার আইএসএল শিল্ড এবং কাপ, দুইই জিতেছেন

ঘরের বাইরে নতুন ঘর

এফসি গোয়া-র হয়ে আইএসএল কেরিয়ার শুরু করলেও, কলকাতায়মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর হয়ে মনবীর নিজের আসল প্রতিভার বিকাশ ঘটান এবং আইএসএলের অন্যতম সেরা ভারতীয় ফরোয়ার্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

“কলকাতায় এ আমার ষষ্ঠ মরশুম এবং আমি এখানে নিজের বাড়ির মতো অনুভব করি,” এমবিএসজি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেন মনবীর। তাঁর মতে, “কলকাতাকে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা বলা হয়। এখানে আবহ একেবারেই আলাদা। প্রিমিয়ার লিগেও এমন হয় না, যেভাবে আমাদের সমর্থকেরা প্রতিটি ম্যাচে এসে আমাদের সমর্থন করেন, তা অসাধারণ। কলকাতার মানুষের কাছে ফুটবল এক উৎসব। সেই কারণেই কলকাতার ফুটবল সম্পূর্ণ আলাদা”।

ফুটবলের পাশাপাশি কলকাতার সংস্কৃতিও বেশ পছন্দ মনবীরের। তিনি বলেন, “দুর্গাপুজোর সময় আমি বাইরে ঘুরতে ভালবাসি। তিন বছর আগে আমি বিশাল (কয়েথ) আর দীপক (টাংরি)-র সঙ্গে মুখে মাস্ক পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম। এ এক বিশাল উৎসব এবং পুজো আমি ভীষণ উপভোগ করি। মানুষ কীভাবে প্যান্ডেল তৈরিতে এতটা সময় ও শ্রম দেয়, তা দেখাটা অবিশ্বাস্য। এর জন্যে সুস্থ প্রতিযোগিতাও চলে”।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের দ্বাদশ খেলোয়াড়

সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নামলে মনবীরের পরিশ্রম কখনও সমর্থকদের নজর এড়ায়নি। সমর্থকেরা প্রতিবার তাঁকে ভালবাসায় ভরিয়ে দেন এবং পাঞ্জাব-জাত এই ফরোয়ার্ড সেই ভালবাসার প্রতিদানও দেন। “যখন দলের পারফরম্যান্স খারাপ হয়, সমর্থকেরা অনুশীলন দেখতে আসেন এবং আমাদের একশো ভাগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেন। আমি একে চাপ বলব না, বরং বলব এটা এক ধরনের প্রেরণা,” তিনি বলেন।

যোগ করেন, “আমরা যখন টানেল থেকে বেরোই, সমর্থকদের আওয়াজ ঢেউয়ের মতো আমাদের আঘাত করে। প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগায়, অনুপ্রাণিত করে। যখন কোনও খেলোয়াড় নিজের নাম বা ছবি টিফো-তে দেখতে পায়, তখন মনে হয় সমর্থকেরা আমাদের জন্য এত কিছু করছেন, আমরাও তাঁদের জন্য কিছু ফিরিয়ে দিই”।

লক্ষ্য শুধুই উন্নতি

সমর্থকদের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের মানে, মনবীর এবং তাঁর সতীর্থরা জয়ের-পরাজয়ের পর সমর্থকদের আবেগও অনুভব করেন। সদ্য সমাপ্ত ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালেচিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারের প্রসঙ্গ টেনে মনবীর মন্তব্য করেন, সেই হার দলের খেলোয়াড়দের আরও ভাল খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এমন এক দল, যাদের কোনও ম্যাচ হারার অধিকার নেই। আমাদের প্রতিটি ম্যাচ জিততেই হবে। এমনকী, আমরা ম্যাচ ড্র করলেও ড্রেসিং রুমে পরিবেশ ভীষণ গম্ভীর হয়ে যায়। সেমিফাইনালে পৌঁছে কেউ খুশি হয় না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ট্রফি জেতা। মালিক থেকে শুরু করে ম্যানেজার—সবাই চায় আমরা জিতি,” তিনি বলেন।

গত তিন মরশুমে সবচেয়ে সফল দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে—দু’বার আইএসএল শিল্ড ও কাপ জিতেছে, পাশাপাশি একবার ডুরান্ড কাপও ঘরে তুলেছে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার পর এবার মনবীররা নজর দিচ্ছেন মহাদেশীয় আসরে সাফল্যের দিকে।

মনবীর বলেন, “আমরা আইএসএলে ধারাবাহিকভাবে ভাল করছি এবং এখন আমাদের লক্ষ্য, এএফসি প্রতিযোগিতায় ভাল পারফর্ম করা। আমার মনে হয় সেই মঞ্চে ভাল খেলার ক্ষমতা আমাদের দলের রয়েছে”।