ডার্বির আগে আত্মবিশ্বাসী লাল-হলুদ কোচ, দল সেরা জায়গায় নেই, ধারনা মোলিনার
বাগান-বাহিনীর চেয়ে তারা বেশ কয়েকদিন আগেই শুরু করেছে প্রস্তুতি। হয়তো এই কারণেই বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছে লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে।
 
 রাত পোহালেই জাতীয় ক্লাব মরশুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি। রবিবার সন্ধ্যায় ডুরান্ড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ঐতিহাসিক ফুটবল-যুদ্ধ। ক্রমশ তেতে উঠছে কলকাতা। কিন্তু দুই বড় ক্লাবের কোচের মানসিকতায় অনেকটাই ফারাক। একজন বলছেন দল সেরা জায়গায় নেই। অন্যজন বলছেন, গতবারের থেকে এ বার দল অনেক ভাল খেলা দেখাবে।
স্বাভাবিক ভাবেই গত মরশুমে ঐতিহাসিক সাফল্যের পর চাঙ্গা মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবির। গত ইন্ডিয়ান সুপার লিগে জোড়া খেতাব জিতেছিল তারা। ফলে এ মরশুমে দলে খুব একটা বদল আনেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। গত বছরের দলটাই প্রায় ধরে রেখে দিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা বলছেন, মরশুমের শুরুতেই যে কয়েক দিন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা, তাতে দল এখনও সেরা জায়গায় আসতে পারেনি।
অন্য দিকে, গত মরশুম সাফল্যহীন থাকার পরে ইস্টবেঙ্গল এফসি দলে একাধিক বদল এসেছে। লাল-হলুদ শিবির নতুন চার বিদেশি ফুটবলারকে নিয়ে এসেছে। যদিও বাগান-বাহিনীর চেয়ে তারা বেশ কয়েকদিন আগেই শুরু করেছে প্রস্তুতি। হয়তো এই কারণেই বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছে লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে। বলছেন, এ বার অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে।
হাতে মশাল বুকে বারুদ 🔥
— East Bengal FC (@eastbengal_fc) August 17, 2025
আমরা হলাম লাল-হলুদ 🔴🟡
📺 Live on Sony Sports Network & Sony LIV#JoyEastBengal #KolkataDerby #MBSGEEBFC #134thEditionofIndianOilDurandCup pic.twitter.com/GYs7vz7xdr
চলতি ডুরান্ড কাপে দুই প্রধানই ভাল ফর্মে রয়েছে। গ্রুপ পর্বে কোনও দলকেই হারাতে পারেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা। দুই দলই ১২টি করে গোল দিয়ে রীতিমতো দাপুটে মেজাজে শেষ আটে উঠে এসেছে। কিন্তু কলকাতা ডার্বি মানেই যেখানে ৫০-৫০, কেউই এই ম্যাচের আগাম ফলাফল বলার সাহস পায় না, সেখানে সবুজ-মেরুন কোচ মোলিনার গলাতেও খুব একটা আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেল না।
শুক্রবার নিজেদের ক্লাবে বসেই সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন প্রাক মরশুম প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই সবাই পুরোপুরি ফিট নয়। সেরা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে এখনই দেখতে পাবেন বলে মনে হয় না”। তাঁর ধারণা, প্রতিপক্ষও একই জায়গায় রয়েছে। বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। প্রস্তুতির দিক থেকে আমাদের মধ্যে খুব একটা তফাৎ বোধহয় নেই। ওরা হয়তো আমাদের চেয়ে ৭-৮ দিন বেশি অনুশীলন করেছে। এ জন্য হয়তো সামান্য সুবিধা পেতে পারে। কিন্তু বড় কিছু সুবিধা ওরা পাবে না”।
প্রতিপক্ষকে বরাবরই শ্রদ্ধা করেন মোলিনা। সাফল্যের শিখরে থাকলেও কখনও প্রতিপক্ষকে কম গুরুত্ব দেন না। এই ম্যাচের আগেও তাঁর সেই মানসিকতায় এতটুকু বদল নেই। বলেন, “ওরা (ইস্টবেঙ্গল) খুব ভাল খেলছে, ভাল দল। আমরা ওদের সঙ্গে একটা ভাল ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত। ট্রফি জেতাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেপ্টেম্বরে এসিএল ২-এ খেলতে হবে আমাদের। তার আগে যত ম্যাচ খেলতে পারব, তত ভাল। সেজন্য আরও এই ডার্বি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ”।
সবুজ-মেরুন বাহিনীর অস্ট্রেলীয় তারকা জেসন কামিংস ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বৈরথের আগে বেশ উত্তেজিত। বললেন, “এখানে এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। তাই এই ম্যাচটা এলেই মন উত্তেজনায় ভরে ওঠে। গত কয়েকটা মরশুমে আমরাই বেশিরভাগ ডার্বি জিতেছি। আমরা ওদের চেয়ে বেশি সফল হয়েছি। তবে সে জন্য আমাদের আত্মতুষ্ট হলে চলবে না। আমাদের মান বজায় রাখতে হবে, সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে”।
ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন আবার অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি। কিন্তু নিজের দল সম্পর্কেও যথেষ্ট উচ্চ ধারণা তাঁর। বলেন, “মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ভারতের প্রতিটি ক্লাবের কাছে বেঞ্চমার্ক। ওরা এখানকার ফুটবলকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, তা সত্যিই অনুসরণযোগ্য। ওদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। আমি জানি, গতবারের তুলনায় এ বার আমাদের দল ভাল হয়েছে। আমরা ভাল খেলব। তবে সে জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হবে। কাল একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে। আমাদের লড়তে হবে। সমর্থকদের একটা ভাল দিন উপহার দিতে হবে”।
সবুজ-মেরুন বাহিনী সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “দু-একটা ব্যাপার নয়, ওরা অনেকগুলো ব্যাপারে সেরা। আগ্রাসন, আক্রমণে ওরা যথেষ্ট ধারালো। কাউন্টার অ্যাটাকেও যথেষ্ট দ্রুত ওঠে ওরা। সেটপিসেও ওরা দক্ষ। রক্ষণও দুর্ভেদ্য, গ্রুপ পর্বে মাত্র একটা গোল খেয়েছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব! আমাদের কাজ হবে আক্রমণ ও রক্ষণ—দুদিকেই ওদের ওপর চাপ বজায় রাখা। তবে ওদেরও দুর্বলতা আছে। সব ভাল দলেরই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে। আমাদের সেই দুর্বলতা কাজে লাগাতে হবে। কী ভাবে কাজে লাগাব, তা আপনাদের বলা সম্ভব না। ম্যাচে দেখতে পাবেন”।
রবিবারের ডার্বিতে আসলে দল ঠিক কী জায়গায় রয়েছে, সেটাই বুঝে নিতে চান ব্রুজোন। বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষ আইএসএলের জোড়া খেতাব জিতেছে। ওদের দলে উচ্চমানের ভাল ভাল ফুটবলার আছে। কালকের ম্যাচেই বোঝা যাবে ওদের চেয়ে আমরা কতটা দূরত্বে রয়েছি। আমাদের শিবিরে যে খেলোয়াড়রা এসেছে এবং যারা আছে, তারা প্রত্যেকেই ভাল খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। অনুশীলনেও তাদের মধ্যে অনেক ইতিবাচক মানসিকতা, ভাল খেলার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। মাঠেও তার প্রতিফলন দেখা গেলে নিশ্চয়ই আমরা ভাল খেলব”।
ব্রুজোনের কথায় গতবারের চেয়ে অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে এ বার। যার জবাবে কামিংস বলেন, “ইস্টবেঙ্গল কতটা বদলাল, তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছি। আমরা জানি ম্যাচটা কঠিন হবে। কারণ, ওরা ভাল খেলছে। ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতেই হবে। আমরা একসঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছি। দল হিসেবে আমরা সাফল্য পেয়েছি। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভাল। এটা আমাদের সাহায্য করবে”।
গত মরশুমের সাফল্যের পর সবুজ-মেরুন জনতার প্রত্যাশা এ বার আরও বেশি। এই প্রত্যাশার বাড়তি চাপ নিয়ে কামিংস খুব একটা চিন্তিত নন। বলেন, “মোহনবাগান বড় ক্লাব। এখানকার সমর্থকদের উচ্চাকাঙ্খা থাকবেই। আমাদেরও সে কথা মাথায় রেখেই রোজ মাঠে নামতে হয়। প্রত্যাশার চাপ নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই”।
ইস্টবেঙ্গলের বঙ্গ তারকা শৌভিক চক্রবর্তীবলেন, ডার্বি মানেই ৫০-৫০। তাঁর মতে, “আমরা কালকের ম্যাচের জন্য তৈরি। গ্রুপ পর্বে যথেষ্ট ভাল খেলেছি আমরা। আশা করি, কোয়ার্টার ফাইনালেও ভাল খেলব। লক্ষ্য ডার্বি জয়। প্রতি ডার্বিরই গুরুত্ব আছে। সে যে টুর্নামেন্টেই হোক। এটা বাঙালির আবেগের ম্যাচ। আশা করি, এই ম্যাচ আমরা জিতব”।
কোচের কথায় সায় দিয়ে নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার বলেন, “আমরা অবশ্যই নতুন উদ্যমে ঝাঁপানোর চেষ্টা করব। এ বছর সে ভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। আশা করি, অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। যে কোনও ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে নিজেদের উজ্জীবিত করে তুলতেই হয়। এ বারেও তা-ই হবে। আমরা সবাই নিজেদের একশো শতাংশ দিয়েই জেতার চেষ্টা করব”।














 
  
  
  
  
  
  
  
  
  
  
 