কাফা নেশনস কাপ: বিশ্বের কুড়ি নম্বর ইরানের বিরুদ্ধে কঠিন পরীক্ষা ভারতের
এখন পর্যন্ত দুই দলের ছ’বার মুখোমুখি লড়াইয়ে ইরান জিতেছে চারবার, ভারত জিতেছে দু’বার। ভারতের শেষ জয় এসেছিল ১৯৫৯-এ।

এই লেখাটি ইংরেজি ও মালয়লামেও পড়তে পারেন।
তাদের ঘরের মাঠে নেমে তাজিকিস্তানকে হারানোর পর আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় ফুটবল দল এবার মুখোমুখি হতে চলেছে এশিয়ার অন্যতম সেরা দল ইরান-এর বিরুদ্ধে, ফিফার ক্রমতালিকায় যাদের স্থান ২০ নম্বরে। যে মাঠে জয় দিয়ে চলতি কাফা নেশনস কাপ শুরু করে ভারত, সেই হিসোর সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামেই সোমবার সন্ধ্যায় সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে চলেছেন সন্দেশ ঝিঙ্গনরা।
শুক্রবার ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে ২৭ ধাপ ওপরে থাকাতাজিকিস্তানকে ২-১-এ হারিয়ে টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে দুর্দান্ত সূচনা করে ভারত। ১৮ বছরে এই প্রথম তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় পায় তারা। সে দিন ১৩ মিনিটের মধ্যেই দু’টি গোল করে ভারত। পাঁচ মিনিটের মাথায় তারকা ডিফেন্ডারআনোয়ার আলি ও ১৩ মিনিটের মাথায় দলের আর এক ডিফেন্ডারসন্দেশ ঝিঙ্গন গোল করেন। তাজিকিস্তান একটি গোল শোধ করে সাহরম সামিয়েভের মাধ্যমে।
ভারতের অভিজ্ঞ গোলকিপারগুরপ্রীত সিং সান্ধু সে দিন অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান। জীবনের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখান তিনি। পেনাল্টি ছাড়াও সেটপিস ও ওপেন প্লে থেকে প্রতিপক্ষের একাধিক অবধারিত গোল একা আটকান তিনি।
India stand united in the face of Iran challenge 💪
— Indian Football Team (@IndianFootball) August 31, 2025
Check out the link to read more 🔗https://t.co/X3DI61SGod#BlueTigers #IndianFootball ⚽️ pic.twitter.com/oZkqckxd8A
ভারতীয় দলের প্রধান কোচ খালিদ জামিল প্রথম ম্যাচে জয়ের কৃতিত্ব দিয়েছেন দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে। তিনি বলেন, “এই জয়ের মূল কারণ ছিল মাঠে খেলোয়াড়দের ঐক্য। সবাই মিলে দল হিসেবে খেলেছে। শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, পুরো স্টাফ – টেকনিক্যাল, নন-টেকনিক্যাল এবং মেডিকেল স্টাফ সবাই এককাট্টা ছিল সে দিন এবং দলের ঐক্য স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে”। ম্যাচের আগের দিন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেন জামিল।
সে দিনের অসাধারণ জয়ের পর ভারত এবার মুখোমুখি হতে চলেছে ইরানের বিরুদ্ধে, যাকে সহজেই ডেভিড এবং গোলিয়াথ-এর লড়াই বলা যায়। ভারতীয় কোচের লক্ষ্য এখন শুধুমাত্র এমন এক কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলার জন্য নিজের দলকে প্রস্তুত করে তোলা।
জামিল বলেন, “শেষ ম্যাচের জয় আমাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা। আমাদের হাতে রিকভারির জন্য দু’দিন সময় ছিল, আর এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে ইরানের বিপক্ষে নামার সময় সবাই তরতাজা থাকে”।
তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে যিনি দ্বিতীয় গোলটি করেন এবং ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন, সেই ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন জোর দিয়ে বলেন যে তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়টিকে বড় লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা প্রথম ম্যাচে জিততে পেরে এবং তিন পয়েন্ট পেয়ে খুশি। তবে এই জয় থেকে প্রেরণা নিয়ে দল হিসেবে আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ক্রমাগত উন্নতি করতে হবে, কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য, টানা তৃতীয়বার এএফসি এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করা”। অভিজ্ঞ তারকা এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “এই ম্যাচগুলো আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আমাদের আসন্ন (এশিয়ান কাপ) বাছাইপর্বের ম্যাচের (সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে) প্রস্তুতির অঙ্গ”।
ইতিহাস বলছে, ভারত-ইরান ফুটবল দ্বৈরথে ইরানেরই এগিয়ে থাকার রেকর্ড রয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দলের ছ’বার মুখোমুখি লড়াইয়ে ইরান জিতেছে চারবার, ভারত জিতেছে দু’বার। ভারতের শেষ জয় এসেছিল ১৯৫৯-এ এরনাকুলামে, যেখানে চুনি গোস্বামী, ইউসুফ খান এবং তুলসীদাস বলরামের গোলের সুবাদে ভারত ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল।
ভারত শেষবার ইরানের মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৬-র বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। তেহরানে সেই ম্যাচে ইরান ৪-০ ব্যবধানে জেতে। বর্তমান ভারতীয় দলের শুধু সন্দেশ ঝিঙ্গন এবং গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু সেই ম্যাচের দলে ছিলেন।
সান্ধু বলেন, “আমার মনে হয় এই দলে শুধু আমরা দু’জনই ইরানের বিরুদ্ধে খেলেছি। তাই আমরা জানি ওরা কতটা কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে আমাদের। এই কয়েক বছরে তারা ক্রমশ উন্নতি করেছে । নিয়মিতভাবে বিশ্বকাপে খেলছে। ইরানের মতো সেরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে আমরা যা শিখেছি, তা হল, সুযোগ এলে তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে এবং ভুল যথাসম্ভব কমাতে হবে। কারণ, এ ধরনের দলগুলো আমরা সামান্যতম ভুল করলেও শাস্তি দেবে”।
এর আগে স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজ-এর অধীনে আটটি ম্যাচ খেলে ভারত, যার মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পায়, চারটি ম্যাচ ড্র হয় ও তিনটিতে হারে। তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর খালিদ জামিলকে কোচের পদে আনা হয়। ১৩ বছরে এই প্রথম ভারতীয় দল কোনও দেশীয় কোচ পেয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কাফা নেশনস কাপই প্রথম টুর্নামেন্ট ও শুরুতেই এক স্মরণীয় জয় অর্জন করে খালিদ জামিল ও তাঁর জাতীয় দল।
এই টুর্নামেন্টে নামার আগে জুনে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ইরান ৩-০-য় হারায় উত্তর কোরিয়াকে। কাতারের কাছে অবশ্য তারা ০-১-এ হারে। মার্চে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩-৩ ড্র করে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ২-০-য় জয় পায়। চলতি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে তারা ৩-১-এ হারায়।
এমন এক দলের প্রতি ভাল ফল করতে যে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে হবে তাদের, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তারকা গোলকিপার। বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, দলের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকা। আমাদের কোচের পরিকল্পনা সততার সঙ্গে মেনে চলতে হবে। কাল ওদের কাজটা আরও কঠিন করে তুলতে হবে আমাদের। সাহস এবং জেতার প্রবল ইচ্ছা থাকতে হবে। ফুটবলে যে কিছুই অসম্ভব নয় – গ্রিমসবি বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচই তার উদাহরণ।”
ইএফএল কাপের যে ম্যাচের উল্লেখ করেন সান্ধু, তাতে দুই দল নির্ধারিত সময়ে ফল ২-২ রাখার পর পেনাল্টিতে ১২-১১-তে জেতে গ্রিমসবি টাউন। সোমবার সে ভাবেই গ্রিমসবি হয়ে উঠতে চাইছে ভারতীয় শিবির।
ম্যাচ- ইরান বনাম ভারত
টুর্নামেন্ট- কাফা নেশনস কাপ, ২০২৫
কিক অফ- সন্ধ্যা ৫.৩০ (ভারতীয় সময়)
ভেনু- সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম, হিসোর, তাজিকিস্তান
লাইভ স্ট্রিমিং- ফ্যানকোড
ভারতীয় স্কোয়াড:
গোলরক্ষক: গুরপ্রীত সিং সান্ধু, অমরিন্দর সিং, হৃত্বিক তিওয়ারি
ডিফেন্ডার: রাহুল ভেকে, নাওরেম রোশন সিং, আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, চিঙলেনসানা সিং, মিথানমাওইয়া রালতে, মহম্মদ উভয়েস
মিডফিল্ডার: নিখিল প্রভু, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, দানিশ ফারুক ভাট, জিকসন সিং, বরিস সিং, আশিক কুরুনিয়ান, উদান্ত সিং, নাওরেম মহেশ সিং
ফরোয়ার্ড: ইরফান ইয়াডওয়াড, মনবীর সিং (জুনিয়র), জিথিন এম এস, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, বিক্রম প্রতাপ সিং।