এই লেখাটি ইংরেজিমালয়লামেও পড়তে পারেন।

ফিফা ক্রমতালিকায় ৫৪ ধাপ ওপরে থাকা ওমানের বিরুদ্ধে কাফা নেশনস কাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচ যে তাদের কাছে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ, তা খুব ভাল করেই জানে ভারতীয় দল। কিন্তু কয়েক দিন আগে বিশ্বের কুড়ি নম্বর ইরানকে এক ঘণ্টা আটকে রাখতে পারার অভিজ্ঞতা সোমবারও তাজিকিস্তানের হিসোর সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে ওমানের বিরুদ্ধে কাজে লাগতে পারে তাদের। একটি স্মরণীয় জয় দিয়ে কাফা অভিযান শেষ করার লক্ষ্যেই নামবে ভারত।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ বি-র শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ের পর তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচে জায়গা নিশ্চিত করে ভারত। সেদিন ইরান ও তাজিকিস্তান ২-২ গোলে ড্র করায় প্লে অফে ভারতের জায়গা নিশ্চিত হয়।

এই টুর্নামেন্টে ওমান এ পর্যন্ত একটিও ম্যাচ হারেনি। গ্রুপ এ-তে তারা উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র দিয়ে অভিযান শুরু করে, কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে ২-১-এ জয় পায় এবং শেষ গ্রুপ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ২-১-এ হারায়। তবে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ৪-০ গোলের বড় জয় পেয়ে গোল পার্থক্যে শীর্ষে উঠে যায় উজবেকিস্তান। ফলে ওমানকে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

গ্রুপ বি-তে ভারতের পারফরম্যান্স ভালয়-মন্দয় মিশিয়ে ছিল। নবনিযুক্ত কোচ খালিদ জামিলের প্রশিক্ষণাধীন ভারত তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করে। যেখানে তারা একটি জয় পায়। ইরান সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে থাকে আর অন্যতম আয়োজক তাজিকিস্তানও চার পয়েন্টে শেষ করলেও মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ে তারা। কারণ, খালিদের দল প্রথম ম্যাচে তাদের ২-১-এ হারিয়েছিল। সোমবার ওমানের বিরুদ্ধে আরও ভাল পারফরম্যান্সের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে নীল বাহিনী।

ভারত এ পর্যন্ত দশবার ওমানের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু ব্লু টাইগাররা এখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনও জয় পায়নি। ওমান সাতটিতে জিতেছে ও তিনটি ম্যাচে ড্র হয়েছে। দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয় ২০২১-এর মার্চে। লকডাউনের পর সেটিই ছিল ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেই ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি ১-১ ড্রয়ে শেষ হয়।

অতীতের এই রেকর্ড সত্ত্বেও জয়ের প্রত্যাশা করছেন কোচ খালিদ জামিল। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের এই ম্যাচে ফল আনতেই হবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়”।

ভারতের কাছে এই তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচ কেবল ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগই নয় বরং আগামী মাসের এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের আগে ভাল প্রস্তুতিরও সুযোগ। অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে পরপর দু’টি ম্যাচ খেলবে ভারত তার আগে এই ম্যাচ জিততে পারলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসও পাবে তারা। অন্যদিকে, ওমান নিশ্চয়ই চাইবে তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি টুর্নামেন্টে তাদের ইতিবাচক পরিসমাপ্তি ঘটাতে।

ভারতীয় দলের কোচ বলেন, “আমাদের সব খেলোয়াড়ই সুস্থ এবং ইতিবাচক মানসিকতায় রয়েছে। আমাদের এই মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা এই ম্যাচে ভাল ফল পেতে পারি। শুরু থেকেই আমাদের মনে হয়েছে যে, আমরা এখানে কিছু ভাল করতে পারব। আমি অবশ্যই বলব, দলের ছেলেদের বিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমই আমাদের এই টুর্নামেন্টের প্লে-অফ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে”।

“দলের ছেলেরা যে প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। সিনিয়র হোক বা জুনিয়র, সবাই এই লড়াইয়ে অবদান রেখেছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে তারা যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আমার কখনওই মনে হয়নি যে, আমরা শুধু অংশগ্রহণ করতে এসেছি। আমরা এসেছি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে, আর তা সবসময়ই ইতিবাচক ছিল,” বলেন ভারতের কোচ।

তবে খালিদ জানেন, বিশ্বে ৭৯ নম্বরে থাকা ওমান তাদের কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চলেছে। কারণ, ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত রয়েছে ১৩৩তম স্থানে। প্রতিপক্ষ নিয়ে খালিদ বলেন, “ওমান খুব ভাল দল। তাদের একজন ভাল কোচ (কার্লোস কুইরোজ) আছেন। ভাল মানের খেলোয়াড় আছে। তারা গ্রুপ পর্বেও বেশ ভাল খেলেছে। এই ম্যাচ সহজ হবে না, আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে লড়তে হবে। আমরা অবশ্য সে জন্য প্রস্তুত”।

সোমবার গোল পাওয়ার জন্য যে মরিয়া থাকবে তাঁর দল, তা নিশ্চিত করে ভারতের কোচ বলেন, “ওপেন প্লে থেকে গোল করার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব। এর আগের ম্যাচগুলোতে আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। আমাদের আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং সেগুলো কাজে লাগাতে হবে”।

সামনে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ থাকলেও আপাতত তা নিয়ে ভাবতে চান না খালিদ। তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস ছিল কাফা নেশনস কাপে অংশগ্রহণ করা খুব ভাল সিদ্ধান্ত। আমরা যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত উন্নতি করব। এখানে দলকে গড়ে তোলা ও প্রস্তুতির দারুণ সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে, আমরা শুধু ওমান ম্যাচ নিয়েই ভাবছি”।

ম্যাচ- ওমান বনাম ভারত

টুর্নামেন্ট- কাফা নেশনস কাপ, ২০২৫

কিক অফ- সন্ধ্যা ৫.৩০ (ভারতীয় সময়)

ভেনু- সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম, হিসোর, তাজিকিস্তান

লাইভ স্ট্রিমিং- ফ্যানকোড

ভারতীয় স্কোয়াড:

গোলরক্ষক: গুরপ্রীত সিং সান্ধু, অমরিন্দর সিং, হৃত্বিক তিওয়ারি
ডিফেন্ডার: রাহুল ভেকে, নাওরেম রোশন সিং, আনোয়ার আলি, চিঙলেনসানা সিং, মিথানমাওইয়া রালতে, মহম্মদ উভয়েস
মিডফিল্ডার: নিখিল প্রভু, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, দানিশ ফারুক ভাট, জিকসন সিং, বরিস সিং, আশিক কুরুনিয়ান, উদান্ত সিং, নাওরেম মহেশ সিং
ফরোয়ার্ড: ইরফান ইয়াডওয়াড, মনবীর সিং (জুনিয়র), জিথিন এম এস, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, বিক্রম প্রতাপ সিং।