আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল এফসির সেরা বিদেশি তারকারা
এই বিদেশি ফুটবলাররা শুধু মাঠেই অবদান রাখেননি, বরং প্রমাণ করেছেন যে সঠিক পরিকল্পনায় করা বিদেশি নিয়োগ সাফল্যের দরজা খুলে দিতে পারে।

পাঁচ বছর আগে ২০২০-২১ মরশুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) যোগ দেওয়ার পর থেকে তাদের ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আইএসএলে প্রতিবারই নিজেদের ইতিবাচক জায়গায় রাখতে হিমশিম খেয়েছেইস্টবেঙ্গল এফসি। গত পাঁচ মরশুমে একবারও তারা প্লে-অফে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
যদিও কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব কার্লস কুয়াদ্রাত ও অস্কার ব্রুজোনের মতো কোচেদের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে পয়েন্ট ও অন্যান্য পরিসংখ্যানে উন্নতি করতে শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ইস্টবেঙ্গল এফসিকে আইএসএল প্লে-অফে তুলতে সক্ষম হয়নি।
তবে কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় তাদের দলে ছিলেন যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এগিয়ে এসেছেন এবং লাল-হলুদ সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের ঔজ্জ্বল্য ও আশার ঝলক দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন যে ভাল মানের বিদেশি প্রতিভা সত্যিই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
দেখে নেওয়া যাক আইএসএলে এই ক্লাবের সবচেয়ে কার্যকরী বিদেশি ফুটবলাররা কারা।
ক্লেটন সিলভা
এই তালিকায় অবশ্যই ওপরের দিকে থাকবেনক্লেটন সিলভা। এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ক্লাবের হয়ে লিগে দীর্ঘতম সময় ধরে খেলা বিদেশিদের একজন। তাঁর সময়কাল ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
আইএসএলে ভাল পরিসংখ্যান থাকা এক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে ক্লেটন তাঁর গোল করার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল এফসির জার্সিতে তিন মরশুমে তিনি ২০ গোল এবং ছ’টি অ্যাসিস্ট করেছেন।
তিনি শুধু গোলদাতা নন, মাঠে নেতার ভূমিকাও পালন করেন। প্রায়ই তাঁকে আক্রমণ সাজানো এবং সতীর্থদের নির্দেশ দিতে দেখা যেত। এ ছাড়াও, ২০২৩-এ কলিঙ্গ সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে তাঁর অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সউল ক্রেসপো
২০২৩-২৪ মরশুমের আগে ইস্টবেঙ্গল এফসিতে যোগ দেনসউল ক্রেসপো এবং যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হন। চোটের কারণে বেশি সময় খেলতে না পারলেও এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার লাল-হলুদ ব্রিগেডের হয়ে আইএসএলে ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন এবং করেছেন পাঁচটি গোল ও দুটি অ্যাসিস্ট।
স্পেনের এই ফুটবলার প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙতে সময়োপযোগী ইন্টারসেপশনের মাধ্যমে দারুণ ভূমিকা পালন করেন। একইসঙ্গে, তার নিখুঁত পাসিং দক্ষতার মাধ্যমে খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সমান পারদর্শিতায়। দলে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন তিনি এবং ভারতীয় সতীর্থদের সঙ্গে শক্তিশালী জুটি গড়ে তুলেছেন। তাঁর এই ক্ষমতা ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে সাফল্যও এনে দিয়েছে। যদিও দলের অন্যদের ভুল ও দুর্বলতার জন্য সেই সাফল্য ধারাবাহিক হয়ে উঠতে পারেনি।
হিজাজি মাহের
২০২৩-এ চোট পেয়ে ছিটকে যান জর্ডান এলসি। বদলি হিসেবে ইস্টবেঙ্গল এফসিতে যোগ দেনহিজাজি মাহের এবং রক্ষণভাগে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করে রীতিমতো প্রতিপক্ষের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। এই জর্ডনিয়ান ডিফেন্ডার তাঁর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেডের রক্ষণে স্থিতিশীলতা এনে দেন। তাঁর ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিরোধ দলকে বহুবার বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
মাহের কলকাতার জায়ান্টদের হয়ে দুই মরশুমে ৩০টি ম্যাচ খেলেন এবং দলের হয়ে ৯টি ক্লিন শিট নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি, দুটি গোল করার পাশাপাশি তিনি ১০৬টি ডুয়েল জেতেন, ১৪২ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং এই সময়ে তাঁর নিখুঁত পাসিংয়ের হার ছিল ৭৯%।
আন্তোনিও পেরোসেভিচ
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র জার্সি গায়ে খুব বেশিদিন মাঠে দেখা যায়নি তাঁকে। তবেআন্তোনিও পেরোসেভিচ-এর কার্যকারিতা ছিল অনস্বীকার্য। এই ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড ছিলেন শক্তি ও দক্ষতার উৎস্য। ২০২১-২২ মরশুমে দলের আক্রমণ বিভাগে স্ফুলিঙ্গ জ্বালানোর কাজটা করেছিলেন তিনিই।
তাঁর ক্ষিপ্র দৌড়, গোলকধাঁধার মতো ড্রিবলিং, গোলের সুযোগ তৈরি করার ক্ষমতা এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা লাল-হলুদ ব্রিগেডের কঠিন সময়ে এক বিরল উজ্জ্বল দিক হয়ে উঠেছিল। তিনি মাঠে থাকলে চাঙ্গা হয়ে থাকতেন সমর্থকেরা। পেরোসেভিচ আইএসএলে ১৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন, চারটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন, ২২টি সুযোগ তৈরি করেছিলেন এবং সফলভাবে ১৭টি ড্রিবল সম্পন্ন করেছিলেন।
ব্রাইট এনোবাখারে
২০২০-২১ মরশুমের দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল এফসিতে যোগ দেনব্রাইট এনোবাখারে এবং তাঁর কার্যকারিতা ছিল উল্লেখযোগ্য। যদিও স্বল্পস্থায়ী, তবে তাঁর ড্রিবলিং দক্ষতা ও ব্যক্তিগত নৈপুণ্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে সমর্থকদের প্রিয় করে তোলে।
এনোবাখারে ওডিশা এফসির বিরুদ্ধে আইএসএলের অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন এবংএফসি গোয়ার বিরুদ্ধে এক অসাধারণ একক প্রচেষ্টায় গোল করে তাঁর ব্যক্তিগত দক্ষতার প্রমাণ তুলে ধরেছিলেন। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মোট ১২টি ম্যাচ খেলেছিলেন, তিনটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন এবং ৫৬টি সফল ড্রিবল করেছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, যে ম্যাচগুলিতে এনোবাখারে গোল বা অ্যাসিস্ট করেছিলেন, সেই ম্যাচগুলিতে ইস্টবেঙ্গল এফসি কখনও হারেনি। তবু পরবর্তী মরশুমে তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী।