Image credit: TheAFCCL@Twitter

এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও জয় অধরাই রয়ে গেল এফসি গোয়ার। প্রায় ঘণ্টা খানেক রক্ষণে অদম্য মনোভাব দেখানোর পরে শেষ আধ ঘণ্টায় আর প্রতিপক্ষ আল ওয়াহদাকে আটকাতে পারেনি তারা। আধ ঘণ্টার মধ্যে দুটি গোল হজম করার পরে বিফল মনোরথেই মাঠ ছাড়েন গোয়ার দলের ফুটবলাররা।

তাঁদের সান্ত্বনা জানানোর জন্য অবশ্য মাঠের পাশে ছিলেন না স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। তিনি এই ম্যাচের আগেই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। অতিমারির আতঙ্কে তাঁকে ও দলের বিদেশি ফুটবলারদের দেশে ফেরার বিমানে তুলে দেন ক্লাব কর্তারা।

কোচহীন, বিদেশিহীন দলটাও যা খেলেছে এ দিন, তারও প্রশংসা করাই উচিত। অসাধারণ রক্ষণ ও দুর্দান্ত গোলকিপিং আমিরশাহীর ফুটবলারদের  হতাশ করে তোলার পক্ষে ছিল যথেষ্ট। বারবার আক্রমণে উঠেও ব্যর্থ হন তাঁরা। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকে।

দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুতে একই ছবি দেখা যায়। কিন্তু ৬১ মিনিটের মাথায় প্রথম গোলপথ খুলতে সক্ষম হন ওমর খৃবিন এবং নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে অধিনায়ক মহম্মদ আল মেনহলি ব্যবধান বাড়িয়ে ম্যাচ জিতে নেন। এই জয়ের ফলে তারা পরবর্তী রাউন্ডে উঠেও গেল।

তবে গোলের ব্যবধান অবশ্যই বাড়তে পারত, যদি না তরুণ গোলকিপার ধীরজ সিং অসাধারণ কিছু সেভ করে দলকে বারবার বিপদের হাত থেকে বাঁচাতেন। ১৮ মিনিটের মাথাতেই প্রথম অনবদ্য সেভটি তিনি করেন। আল ওয়াহদার ফরোয়ার্ড টিম মাতাভস্ খৃবিনের পাস থেকে কঠিন এক কোন থেকে গোলে নিখুঁত শট নিয়েছিলেন, যা দারুণ ক্ষিপ্রতায় আটকে দেন ধীরজ।

এই ঘটনার ১১ মিনিট পরে আবার ধীরজকে পরীক্ষার সামনে ফেলেন খৃবিন। ডান দিন থেকে খলিল ইব্রাহিমের ক্রসে নিখুঁত হেড করেন সিরিয়ান মিডফিল্ডার। কিন্তু সে বারও তা আটকে দেন তরুণ গোলকিপার। ৪৯ মিনিটে ফের ইব্রাহিমের শট বাঁচিয়ে ফের গোল বাঁচান ধীরজ। এখানেই শেষ নয়, তার তিন মিনিট পরে খৃবিন ফের গোলের মুখ খোলার চেষ্টা করেন জোরালো শট নিয়ে। কিন্তু উড়ন্ত বলে হাত লাগিয়ে তার গতিপথ বদলে দেন ধীরজ। এ ভাবে বিপক্ষের একের পর এক আক্রমণের চেষ্টা বানচাল করে দেন ২০ বছর বয়সি মণিপুরি গোলকিপার। তবে শেষ আধঘণ্টায় তিনি আর পারেননি। ক্রমশ চাপ নিতে নিতে শেষে অসুস্থ হয়ে মাঠ ছাড়েন।

এ দিন মাঠে প্রধান কোচ ফেরান্দোর বদলে ছিলেন সহকারী ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। তিনি এই ম্যাচের পারফরম্যান্সে রীতিমতো গর্বিত। সাংবাদিকদের মিরান্ডা বলেন, নিয়মিত খেলোয়াড়দের ছাড়া মাঠে নেমে ভাল খেলা খুবই কঠিন। তবে অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে, দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের কাছে এটা ছিল সুবর্ণ সুযোগ। সেই সুযোগ ওরা দুর্দান্ত ভাবে কাজে লাগিয়েছে বলেই আমার মনে হয়। ওদের জন্য আমি গর্বিত। ওরা নিজেদের সেরাটাই উজাড় করে দিয়েছে। ভাগ্য আর একটু সাহায্য করলে হয় আমরা একটা ফল পেতে পারতাম। কিন্তু বিপক্ষ আমাদের চেয়ে অনেক ভাল দল। এশিয়ার অন্যতম সেরা দল ওরা, আমাদের চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে আছে

সারা ম্যাচে একটিই ভাল সুযোগ পায় এফসি গোয়া, সেটি ৩৮ মিনিটে। ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজের ফ্রিকিক আল ওয়াহদার গোলকিপার মহম্মদ আল শামসি ঠিকমতো ধরে রাখতে না পারায় বল আসে গ্ল্যান মার্টিন্সের কাছে, যিনি গোলে শট নেন, কিন্তু গোলকিপার শামসি তা ব্লক করে দেন।

এই ম্যাচের নীল-নকশা ফেরান্দো তৈরি করে দিয়েই দেশে ফিরেছেন বলে জানান মিরান্ডা। বলেন, আজকের ম্যাচের জন্য আমাদের পরিকল্পনা তৈরিই করা ছিল। ফেরান্দো নিজেই সেটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল। বস হিসেবে ও-ই পরিকল্পনা তৈরি করে আর মাঠে আমরা দুজনেই তা কার্যকর করার ব্যবস্থা করি। আজও তা-ই হয়েছে। আজ শুধু আমি পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা করেছি। এটা কঠিন নয়। কঠিন হল প্রতি দুদিন অন্তর ম্যাচ খেলা

ছয় ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবলে তিন নম্বরে রয়ে গেল এফসি গোয়া। কাতারের আল রাইয়ানের ওপরে রয়েছে তারা। এই ফলেও যথেষ্ট খুশি মিরান্ডা। বলেন, যখন গ্রুপ ঘোষণা হয়েছিল, তখন কেউ ভাবতে পেরেছিল এই গ্রুপের তিন নম্বরে থাকতে পারব আমরা? বোধহয় না। গতবারের রানার্স আপ পার্সেপোলিস, আল রাইয়ান, আল ওয়াহদাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আমরা যে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছি, এটা পুরো ছেলেদের কৃতিত্ব। কোচ ফেরান্দোরও কৃতিত্ব কম নেই। ধন্যবাদ ক্লাবের ম্যানেজমেন্টকেও