গত দু’সপ্তাহে সাফল্যের মুখ দেখতে না পাওয়ার পর শনিবার ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে জয় পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। শনিবার ওডিশাকে ২-০-য় হারানোর পরে তিনি জানান বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এই জয় খুবই জরুরি ছিল তাঁদের।

এ দিন অসাধারণ ও দাপুটে জয় অর্জন করে নেয় গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা। অস্ট্রেলীয় অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের জোড়া গোলেই এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই জয়ের ফলে লিগ টেবলে তিন নম্বরে চলে এল সবুজ-মেরুন বাহিনী। ১৫ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২৭ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা হায়দরাবাদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান দাঁড়াল আট পয়েন্টের।

ম্যাচের পর সাংবাদিকদের ফেরান্দো বলেন, “গোলের সুযোগ তৈরি করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আজ পাঁচটা শট গোলে রেখেছিলাম। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়া আমাদের কাছে খুবই জরুরি ছিল। আজ বেঙ্গালুরু যে ভাবে জিতেছে, তার পরে বোঝাই যাচ্ছে দলগুলোর মধ্যে এ বার সেরা জায়গায় যাওয়ার জন্য তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে, যাতে তারা প্লে অফে খেলতে পারে। আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য”।

এ দিন ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন পেট্রাটস। ৮০ মিনিটের মাথায় জয়সূচক গোলটি করেন তিনি। পেট্রাটস গোল করলেও এ দিন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন হুগো বুমৌস, আশিস রাই, গ্ল্যান মার্টিন্স, মনবীর সিং ও আশিক কুরুনিয়ান। আশিস, শুভাশিস, কার্ল ম্যাকহিউ, আশিক, গায়েগোরা একটি করে গোলের সুযোগ তৈরি করেন। হুগো বুমৌস একাই তিন-তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন।

অস্ট্রেলীয় তারকার জোড়া গোল ও দলের আক্রমণ প্রবণতা নিয়ে কোচ বলেন, “দিমিত্রিকে ফরোয়ার্ড লাইনে আশিকের সঙ্গে খেলালে অন্য রকম খেলে। আশিক, লিস্টনদের আরও জায়গা তৈরি করা প্রয়োজন। আশিক ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং দিমিত্রি তখন ফাঁকা জায়গা দিয়ে আক্রমণে উঠতে পারে। সে জন্যই হুগো আর দিমিত্রি আজ একই লাইনে খেলছিল। আক্রমণে ওঠার মতো আরও একজন ফুটবলার আমাদের দলে ছিল। সেও যাতে ভিতরে ঢুকে আসতে পারে, সে জন্যই পরিকল্পনাটা করেছিলাম আমরা। এই ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স আজ ভাল হয়েছে। এ বার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে হবে আমাদের”।

গ্ল্যান মার্টিন্স সবুজ-মেরুন শিবিরে এসে যাওয়ায় তাঁর দলের মাঝমাঠকে এ দিন অনেক শক্তিশালী দেখায়। দুর্দান্ত ডিফেন্সিভ স্ক্রিনের ভূমিকা পালন করেন মার্টিন্স। মাঝমাঠ থেকে নিজেদের অর্ধে বল কার্যত যেতেই দিচ্ছিলেন না তিনি ও কার্ল ম্যাকহিউ। ফলে তাদের রক্ষণের ওপরেও এ দিন চাপ কম পড়ে।

মার্টিন্সের এই পারফরম্যান্স নিয়ে ফেরান্দো বলেন, “গ্ল্যান মার্টিন্সকে নিয়ে আমি খুশি। এই ধরনের খেলোয়াড়দের ওপর আমি আস্থা রাখি। ও যোগ দেওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। কিছু কিছু কৌশলগত ব্যাপার খেলোয়াড়দের বুঝতে হয়। গ্ল্যান এফসি গোয়ায় আমার কোচিংয়ে খেলেছিল। তাই আমার পরিকল্পনা ও দর্শন সম্পর্কে ও জানে। তাই ওকে খেলাতে আমার অসুবিধা হয়নি”।

মার্টিন্সের প্রশংসা করে কোচ বলেন, “ও এমন একজন ফুটবলার, যে রোজ উন্নতি করতে চায় ও যথেষ্ট পরিশ্রম করে। এরা দলের ও নিজের কেরিয়ারের কথা ভাবে। তাই এই ধরনের ফুটবলাররাই আমার পছন্দ। এরা দলকে সাহায্য করতে পারে। আমার লক্ষ্য দলের রক্ষণের সঙ্গে সার্বিক পারফরম্যান্সে উন্নতি করা। তবে ডিফেন্ডারদের আক্রমণ সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হতে হবে। ফাঁকা জায়গা কাজে লাগাতে জানতে হবে তাদেরও, যাতে দলের ভারসাম্য বজায় থাকে। আমাদের সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতি আসবে। সেগুলো সামলাতে হবে”। 

গোলের সুযোগ হাতছাড়া হওয়া নিয়ে রোজই প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হচ্ছে সবুজ-মেরুন কোচকে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ দিন এই প্রসঙ্গে ফেরান্দো বলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রতি ম্যাচে গোল করা ও জেতা। সে জন্য যথাসম্ভব বেশি গোলের সুযোগও তৈরি করতে হবে আমাদের। আজ মনবীর, আশিক, হুগো একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে। তবে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আশা করি, ছেলেদের মানসিক অবস্থা গত দু’সপ্তাহের চেয়ে ভাল থাকবে। এখন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে ফোকাস করা উচিত। কারণ, আগামী সপ্তাহে আমরা ঘরের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা খেলব। আজকের ম্যাচের ফল আমাদের আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই অনেকটা বাড়াবে”।

ম্যাচের একেবারে শেষে লাল কার্ড দেখেন আশিক। বুমৌসও এ দিন চতুর্থ হলুদ কার্ড দেখেন। ফলে আগামী ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না এই দুই তারকা। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ ফেরান্দো। কিন্তু বাস্তব মেনে নিয়ে দলের অন্য ফুটবলারদের নিয়েই এগিয়ে চলার কথা জানান তিনি।