অবাক করার মতো না হলেও বলা উচিত, যারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর ভক্ত এবং গোল দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই মরশুম ছিল স্বপ্নময়। ২০২৪-২৫ মরশুমে ১৬৩টি ম্যাচে মোট ৪৬৮টি গোল হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৮৭টি গোল — একেবারে জমজমাট এক পরিসংখ্যান।

আইএসএলের একাদশ মরশুম ছিল গোলের বন্যায় পরিপূর্ণ। শৈল্পিক মুহূর্তগুলি বিভিন্ন দলের আক্রমণাত্মক মানসিকতাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। দলগুলি তাদের গোল করার দক্ষতা পুরো মরশুম জুড়ে দেখিয়েছে, যা থেকে ফুটবলপ্রেমীরা দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

একক পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে দলগত দক্ষতা সবই দেখা গিয়েছে এ বারের আইএসএলে। কিছু দলের আক্রমণভাগ ছিল নজরকাড়া। আলাদিন আজারেই থেকে শুরু করে জেমি ম্যাকলারেন পর্যন্ত — অনেক দক্ষ স্ট্রাইকার তাদের গোল করার প্রতিভা দিয়ে সারা লিগে হইচই ফেলে দিয়েছেন।

এই সফল অভিযানের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নেওয়া যাক, ২০২৪-২৫ আইএসএল মরশুমে কোন দলগুলো সবচেয়ে বেশি গোল করেছে।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট — ৫২ গোল

দুর্দান্ত এক আক্রমণভাগ নিয়ে এ বারের আইএসএলে নামা মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যে এই তালিকার শীর্ষে থাকবে, তার আন্দাজ লিগ কিছুদিন গড়ানোর পরই পাওয়া গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান তারকা জেমি ম্যাকলারেন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখিয়ে ১২ গোল করেন, যা এই মরশুমে বাগান-বাহিনীর হয়ে সর্বোচ্চ। তাঁর স্বদেশীয় সতীর্থ জেসন কামিংসও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। সাতটি গোল করার পাশাপাশি ছ’টি অ্যাসিস্টও করেন তিনি। ডিফেন্ডার শুভাশিস বোস এবং আলবার্তো রড্রিগেজ দু’জনে মিলে ১১টি গোল করেন, যা ছিল বেনজির এবং যা প্রতিপক্ষের অর্ধে তাদের প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। সবুজ-মেরুন বাহিনীর এই আক্রমণাত্মক দাপট প্রথমবারের মতো আইএসএলে জোড়া খেতাব (শিল্ড ও কাপ) অর্জনে সাহায্য করে।

বেঙ্গালুরু এফসি — ৪৯ গোল

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণভাগ দেখা গিয়েছে এই আইএসএলে। এডগার মেনদেজ, সুনীল ছেত্রী এবং রায়ান উইলিয়ামস গড়ে তুলেছিলেন এক বিধ্বংসী ত্রয়ী, যাঁরা সারা মরশুমে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলিতে একের পর এক গোল দিয়েছেন। বিশেষ করে সুনীল ছেত্রী। যেন সময়কে উল্টো ঘুরিয়ে দেন তিনি। ১৪টি গোল করে তিনি মরশুমে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে এক মরশুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। মেনদেজ ও উইলিয়ামস তাঁর পারফরম্যান্সে দারুণ ভাবে সঙ্গ দেন। এ ছাড়া আলবের্তো নগুয়েরা, জর্জ পেরেইরা ডিয়াজ এবং রাহুল ভেকেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এগিয়ে এসে বেঙ্গালুরুকে আইএসএল ফাইনালে পৌঁছতে সাহায্য করেন।

নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি — ৪৬ গোল

নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির হয়ে অভিষেক মরশুমেই মরক্কান ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই এক নজির গড়েন। নিয়মিত গোল করার অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে নিজেকে আইএসএল ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখেন আলাদিন। একাই ২৩টি গোল করে দলের মোট গোলের অর্ধেক তিনি একাই করেন। ফলে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল — দুটোই জিতে নেন তিনি। কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালির দ্রুতগামী ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের কৌশল পুরো মরশুম জুড়ে যথেষ্ট কার্যকরী হয়ে ওঠে। তাদের খেলা ছিল দ্রুত পজিশন ট্রানজিশন এবং চতুর মুভমেন্টে ভরা। আলাদিনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সঙ্গে নেস্টর আলবিয়াখ, জিথিন এমএস এবং গিলেরমো ফার্নান্ডেজ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল করে দলকে এক আক্রমণাত্মক শক্তিতে রূপান্তরিত করেন।

এফসি গোয়া — ৪৫ গোল

ধারাবাহিকতার অপর নাম বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তবে অবশ্যই তা এফসি গোয়া। মানোলো মার্কেজের দল টানা ২৩টি ম্যাচে গোল করে, যা আইএসএল ইতিহাসে এক নতুন নজির। আর্মান্দো সাদিকু, ইকের গুয়ারৎজেনা ও বোরহা হেরেরা — যাঁরা শুধু গোল করতেই নয়, সুযোগ তৈরি করতেও পারদর্শী — তাঁদের নিয়ে একটি ভারসাম্যে ভরা দল গড়ে তোলেন মার্কেজ। গোয়ার আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা সারা মাঠ জুড়ে খেলেছেন এবং পরিণত ও পরিকল্পিত আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় তারা।

ওডিশা এফসি — ৪৪ গোল

স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরার অধীনে এই প্রথম কোনও দল আইএসএল প্লে অফে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সেই দল ওডিশা এফসি, যা বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল। তবুও তারা ২০২৪-২৫ মরশুমে গোল করার দিক থেকে সেরা পাঁচ দলের মধ্যে জায়গা করে নেয়। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিও ন’টি গোল করে দলের আক্রমণ বিভাগকে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে দুর্দান্ত সঙ্গ দেন হুগো বুমৌস, মুর্তাদা ফল এবং জেরি মাওমিংথাঙ্গা, যাঁরা প্রত্যেকে ৫টি করে গোল করেন। যদিও শেষে হতাশ করে তারা। তবে ওডিশা তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয় এ বারের আইএএসএলে।