সপ্তাহ খানেকও বাকি নেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ শুরু হতে। ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ ভুবনেশ্বরে এই টুর্নামেন্টে ট্রফি জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁর মতে, এই টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষরা তেমন শক্তিশালী না হলেও তাঁর দলের ছেলেরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, তা যথেষ্ট মূল্যবান হতে চলেছে।

৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ দিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের অভিযান শুরু করবে ভারত। কাতারে আগামী বছর যে এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে ভারত, তারই প্রস্তুতি হিসেবে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।

আরও দুটি দেশ ভানুয়াতু ও লেবানন অংশ নেবে এই প্রতিযোগিতায়। লেবানন-ও এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে। ভারত দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ভানুয়াতুর বিরুদ্ধে ১২ জুন, সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায়। তাদের শেষ ম্যাচ লেবাননের বিরুদ্ধে, ১৫ জুন সন্ধ্যায়। সেরা দু’টি দল ১৮ জুন সন্ধ্যায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে। ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের স্থান ১০১-এ। লেবানন রয়েছে ৯৯-এ। ভানুয়াতু ১৬৪ ও মঙ্গোলিয়া ১৮৩।

আসন্ন টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য ম্যাচ নিয়ে স্টিমাচ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “অনেকগুলো টুর্নামেন্ট রয়েছে আমাদের সামনে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। মাস খানেকের মধ্যে সম্ভবত ন’টা ম্যাচ খেলব আমরা। গত বারো মাসে আটটা ম্যাচ খেলেছি। সেই তুলনায় অনেক বেশি ম্যাচ পাব আমরা। এ ভাবে আমাদের প্রস্তুতি এই প্রথম হচ্ছে আমাদের। এ ভাবে চললে আমরা নিশ্চয়ই ভাল ফল পাব”।

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতীয় দল তাইল্যান্ডে কিংস কাপে অংশ নেবে। ওই মাসেই অনূর্ধ্ব ২৩ জাতীয় দল চিনে যাবে এএফসি অনূর্ধ্ব ২৩ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে খেলতে। তার পরে এশিয়ান গেমসে। অক্টোবরে সিনিয়র দল যাবে মালয়েশিয়ায় মারডেকা কাপে অংশ নিতে। এর পরে, নভেম্বরে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ ও এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাই পর্বের দুটি ম্যাচ খেলবে তারা। এ ভাবে ভারতীয় ফুটবল দলকে টানা ম্যাচ খেলতে গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি।

এই প্রসঙ্গে ভারতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ স্টিমাচ বলেন, “সারা বছর ধরে আমরা প্রস্তুতি নেব ঠিকই। কিন্তু এশিয়ান কাপের আসল প্রস্তুতি হবে ডিসেম্বরে। ফুটবল এমন একটা খেলা, যেখানে রোজই কিছু না কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। এখন যে বা যারা ভাল খেলছে, তারা যে ডিসেম্বরেও একই রকম ভাল খেলবে, তার কোনও মানে নেই। এশিয়ান কাপ পর্যন্ত নিজেদের ছন্দ ও ফিটনেস ধরে রাখাটাই খেলোয়াড়দের বড় পরীক্ষা হতে চলেছে”।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের পরেই ভারতীয় দল উড়ে যাবে বেঙ্গালুরুতে, সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে। এই টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপে তারা থাকছে কুয়েত ও নেপালের সঙ্গে। আগামী ২১ জুন থেকে ৪ জুলাই এই টুর্নামেন্টে প্রথম দিনই মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। তাদের গ্রুপে ভারতই ফিফা ক্রমতালিকায় সবচেয়ে উঁচুতে থাকা দল। ভারত যেখানে ১০১ নম্বরে, সেখানে কুয়েত ১৪৩, নেপাল ১৭৪ ও পাকিস্তান ১৯৫-এ রয়েছে। গ্রুপ ‘বি’-তে রয়েছে লেবানন (ফিফা তালিকায় ৯৯), ভুটান (১৮৫), বাংলাদেশ (১৯২) ও মলদ্বীপ (১৫৪)।

এই উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় টানা ম্যাচ থাকায় কোনও নির্দিষ্ট একাদশ মাঠে নামানোর কথা ভাবছেন না স্টিমাচ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এত গরমে ও আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রতি ম্যাচে একই একাদশ নামানো সম্ভব হবে না। সেই জন্যই ২৬ জনকে দলে রাখা হয়েছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ম্যাচ খেলাতে চাই। কিছু গবেষণা করে দেখতে হবে। প্রতি ম্যাচে তরতাজা খেলোয়াড়দেরও খেলিয়ে দেখে নিতে হবে”।

চলতি প্রস্তুতি শিবিরে কী হচ্ছে, তা জানতে চাইলে স্টিমাচ বলেন, “পাসিং ও ফিনিশিং নিয়ে আরও কাজ করেছি আমরা। ফাইনাল থার্ডে আমাদের পারফরম্যান্সে আরও উন্নতির চেষ্টা করছি”। বিভিন্ন পজিশনে একাধিক বিকল্প তৈরি করে রাখতে চান স্টিমাচ। তবে এখনও এই কাজ পুরো হয়নি বলে জানান তিনি। বলেন, “ফুলব্যাক পজিশন এখনও কার্যত ফাঁকা আমাদের। এই পজিশনগুলোতে আরও ফিটনেস, বোঝাপড়া ও কঠিন মানসিকতা প্রয়োজন। যখন কোনও ভাল দলের উইঙ্গারদের সামলাতে হয়, তখন আমাদের ফুলব্যাকরা সমস্যায় পড়ে”।

ভারতীয় দলে সদ্যনিযুক্ত মনোবিদ শায়ামল বল্লভজির প্রসঙ্গে হেড কোচ বলেন, “সারা বিশ্বে বিভিন্ন খেলার বিভিন্ন খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ওর। খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তি বাড়ানোয় সাহায্য করছে। ছুটির দিনে মনসংযোগ ও মানসিকতায় উন্নতি করার বিষয়ে ছেলেদের পাঠ দিচ্ছে। এতে দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে অনেক উন্নতি হবে, আশা করি”।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ক্রীড়াসূচী: ৯ জুন ২০২৩- লেবানন বনাম ভানুয়াতু (বিকেল ৪.৩০), ভারত বনাম মঙ্গোলিয়া (সন্ধ্যা ৭.৩০); ১২ জুন- মঙ্গোলিয়া বনাম লেবানন (৪.৩০), ভানুয়াতু বনাম ভারত (৭.৩০); ১৫ জুন- ভানুয়াতু বনাম মঙ্গোলিয়া (৪.৩০), ভারত বনাম লেবানন (৭.৩০); ১৮ জুন- ফাইনাল (৭.৩০)।