আইএসএল ২০২৪-২৫-এর সেরা ছয় গোল-সহায়ক
সদ্য শেষ হওয়া মরশুমে ফরোয়ার্ড থ্রু, ক্রস এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ফাটল ধরানো তাঁদের কাছে যেন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০২৪-২৫ মরশুম ছিল নাটক, চোখ ধাঁধানো গোল এবং উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভরপুর। এই রোমাঞ্চকর ফুটবল সফরের মধ্যে কয়েকজন ফুটবলার নিঃশব্দে তাদের কাজ করে গিয়েছেন, নির্ভুল পাস, দুর্দান্ত আন্দাজক্ষমতা এবং প্রতিপক্ষের এলাকায় গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষমতা ব্যবহার করে।
ফু’বলে গোলদাতারাই হয়তো শিরোনামে জায়গা পান। কিন্তু গোলের আগের শেষ পাসই প্রায়শই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। আর এই প্রতিবেদনে আলোচিত খেলোয়াড়রা সারা মরশুম জুড়ে সেই ‘ফাইনাল বল’ দিয়ে দলের সাফল্যে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। ফরোয়ার্ড থ্রু, ক্রস এবং প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ফাটল ধরানো তাঁদের কাছে যেন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
দেখে নেওয়া যাক সেই সেরা অ্যাসিস্ট প্রদানকারী বা গোল-সহায়কদের, যাঁরা তাঁদের দলের বহু গোলে হয়ে ওঠেন নেপথ্য নায়ক।

কোনর শিল্ডস – ৮টি অ্যাসিস্ট
চেন্নাইন এফসি খুব একটা ধারাবাহিক মরশুম না কাটালেও কোনর শিল্ডস ছিলেন তাদের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। আটটি গোলে সহায়তা দিয়ে এই স্কটিশ ফরোয়ার্ড লিগের শীর্ষে ছিলেন এবং তা করেছেন দুর্দান্ত স্টাইলে। ১,৮৫২ মিনিট মাঠে থেকে ডান প্রান্তে তাঁর লিঙ্ক-আপ খেলা ছিল প্রতিনিয়ত বিপজ্জনক। তাঁর বল ডেলিভারি ছিল ধারালো, টাইমিংও ছিল নিখুঁত। ৭৬% পাসিং অ্যাকিউরেসি আর একটি গোলও করেছেন নিজে। তাই চেন্নাইন এফসি যে লিগের সবচেয়ে বেশি ক্রস দেওয়া দলের অন্যতম ছিল, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। আর ডান দিক দিয়ে শিল্ডসের আক্রমণ ছিল মরশুমজুড়ে তাদের প্রধান অস্ত্র।
হুগো বুমৌস – ৭টি অ্যাসিস্ট
বল পায়ে তিনি যেন জাদুকর। জুলাইয়ে ওডিশা এফসিতে যোগ দিয়েই দ্রুত মানিয়ে নিয়ে শুরু করে দেন জাদু দেখানো। সাতটি অ্যাসিস্টের সঙ্গে করেন ছ’টি গোলও। ৪৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন এবং ৮৩% নিখুঁত পাস দেন—এটাই বুমৌসের খেলা। প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে সঠিক পাস দেওয়ার দক্ষতাও তাঁর অনন্য। যদিও ওডিশা প্লে-অফে উঠতে পারেনি। তবে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজর কাড়া।

আলাদিন আজারেই – ৭টি অ্যাসিস্ট
লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার শিরোনামে আসাই স্বাভাবিক। তবে ২৩ গোল করার পাশাপাশি সাতটি অ্যাসিস্টও করেছেন আলাদিন। তাঁর ২২% গোল কনভার্শন রেট প্রমাণ করে খুব বেশি সুযোগ প্রয়োজন হয় না তাঁর। আর যখন গোল করেন না, তখন তিনি নিজেই সতীর্থদের গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন। হাইল্যান্ডার্সের আক্রমণে আলাদিন একাই ছিলেন প্রায় একশো। ডিফেন্ডারদের বিপাকে ফেলে দলকে সামনে টেনে নিয়ে গিয়েছেন প্রায় প্রতি ম্যাচে।

জেসন কামিংস – ৬টি অ্যাসিস্ট
শুরু থেকে খেলুন বা বেঞ্চ থেকে নামুন, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস বেশির ভাগ সময়ই সমর্থকদের মনে ছাপ রেখে মাঠ ছেড়েছেন। সাতটি গোল ও ছয়টি অ্যাসিস্ট-সহ অসাধারণ মরশুম কেটেছে তাঁর। সেট-পিস ডেলিভারি, অফ-দ্য-বল মুভমেন্ট ও দ্রুত পাসিংয়ে প্রতিপক্ষের কাছে সব সময়ই ছিলেন ত্রাস। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শান্ত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর বহুমুখিতা বাগান-বাহিনীকে দিয়েছে আরও এক শক্তিশালী অস্ত্র, যা তাদের জোড়া খেতাব পেতে সাহায্য করে।

দিয়েগো মরিসিও – ৬টি অ্যাসিস্ট
বয়স শুধুই সংখ্যা। ৩৩ বছর বয়সে দিয়েগো মরিসিও ওডিশা এফসির জার্সি গায়ে কাঁপিয়ে দিয়েছেন—ছ’টি অ্যাসিস্ট ও ন’টি গোল করে। ১,৪০০ মিনিটেরও বেশি সময় মাঠে ছিলেন এই ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড এবং ছিলেন দলের আক্রমণ বিভাগের কেন্দ্রবিন্দু। বল ধরে রাখা, লিঙ্ক-আপ খেলা কিংবা মারণ পাস—সব ক্ষেত্রেই ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ।
আদ্রিয়ান লুনা – ৬টি অ্যাসিস্ট
কেরালা ব্লাস্টার্সের জন্য এ মরশুম ভালয়-মন্দয় মেশানো থাকলেও আদ্রিয়ান লুনা ফের একবার প্রমাণ করে দেন, কেন তিনি তাদের দলের হৃদযন্ত্র। এ মরশুমে তাঁর প্রত্যাশার স্তরে পৌঁছতে না পারলেও ছ’টি অ্যাসিস্ট দিয়ে তিনি ছিলেন সেরা তারকাদের একজন। প্রতিবার গোল করার আগে, যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ান—তিনি লুনা। বক্সে হয়তো তিনিই শেষ ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেননি, কিন্তু শুরুটা প্রায়শই তিনিই করেছেন।