এক দল বিদেশী ফুটবলার তো রয়েছেনই। প্রথম হিরো আইএসএলে অংশ নিতে চলা এসসি ইস্টবেঙ্গল শিবিরে এ বার থাকছেন এক ঝাঁক প্রতিভাবান ভারতীয় ফুটবলারও। এঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন ভারতীয় দলের নিয়মিত ফরোয়ার্ড জেজে লালপেখলুয়া, তেমনই বলওয়ন্ত সিং, নারায়ণ দাস, ইউজিনসন লিংডো, মহম্মদ রফিকদের মতো উঠতি তারকারাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে ২২ জন ভারতীয় ফুটবল রয়েছেন লাল-হলুদ শিবিরে, মঙ্গলবার যাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করল ক্লাব। 

যিনি অতীতে তিন বছর সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলার পর এ বার যোগ দিয়েছেন লাল-হলুদ ব্রিগেডে, সেই মিজোরামের তারকা ফরোয়ার্ড জেজে লালপেখলুয়া বলছেন, “ভারতের প্রত্যেক ফুটবলার একদিন এসসি ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখে। হিরো আইএসএলে তাদের প্রথম মরশুমেই এমন এক প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারাটা আমার কাছে গর্বের ব্যাপার। গত মরশুমে না খেলতে পারায় এ বছর মাঠে নামার জন্য ছটফট করছি আমি। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠে নামার জন্য তর সইছে না। মাঠে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই”।

গত ছয় মরশুম জেজে ছিলেন চেন্নাইন এফসি-তে। গত মরশুমের শেষে সিদ্ধান্ত নেন তিনি দক্ষিণের ক্লাব ছাড়বেন। তখন থেকেই জল্পনা চলছিল জেজে-র সঙ্গে লাল-হলুদ শিবিরের কথাবার্তা নিয়ে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ঘোষণা এত দিনের সেই জল্পনার অবসান ঘটাল।

মোহনবাগানের হয়ে জেজে প্রথম খেলেন ২০১৪-১৫ মরশুমে। সে বার ১২টি ম্যাচ খেলে একটি গোল করেছিলেন। ২০১৬ ও ২০১৭-য় চেন্নাইন এফসি থেকে লিয়েনে তিনি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। ২০১৬-য় চারটি গোল করেন ১৪ ম্যাচে ও পরের বছর পাঁচটি গোল করেন ১৭টি ম্যাচে। চেন্নাইন এফসি-র হয়ে হিরো আইএসএলে মোট ৬৯টি ম্যাচ খেলে ২৩টি গোল করেছেন তিনি। দু’বার চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিলেন। ২০১৯-২০-তে চোটের জন্য অবশ্য পুরো আইএসএল মরশুমেই খেলতে পারেননি। গোটা একটা মরশুম খেলতে না পারায় এ বার সাফল্যের খিদে নিয়ে তিনি ফিরে আসছেন হিরো আইএসএলে।

গত দুই মরশুমে এটিকে এফসি-র হয়ে ২৩টি ম্যাচ খেলা ৩৩ বছর বয়সি বলওয়ন্ত সিং-ও এ বার এসসি ইস্টবেঙ্গলে। চার্চিল ব্রাদার্সকে ফেডারেশন কাপ জিতিয়ে ২০১৪-১৫-য় মোহনবাগানে যোগ দেন তিনি এবং ক্লাবকে আই লিগ খেতাব এনে দেন। হিরো আইএসএলে প্রথমে চেন্নাইন এফসি-তে দুই মরশুম কাটানোর পরে মুম্বই সিটি এফসি-তে যান। দু’বার আইএসএল জয়ী দলে ছিলেন, একবার চেন্নাইন এফসি-তে এবং গতবার এটিকে এফসি-র সঙ্গে। বলেছেন, “এসসি ইস্টবেঙ্গল যে কত বড় ক্লাব, সে আর আলাদা করে বলে বোঝাতে হবে না নিশ্চয়ই। এই ক্লাবের জার্সি পরার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত”।

এশিয়ান কাপে ভারতের হয়ে মাঠে নামা নারায়ণ দাস ওডিশা এফসি-র হয়ে গত মরশুমে সব ম্যাচেই খেলেছিলেন নারায়ণ দাস। তাঁর বক্তব্য, “লাল-হলুদ জার্সি পরে আগেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে বলে এর অনুভূতিটা কেমন হয়, তা জানি। ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে ছোট থেকে বড় হয়েছি। একশো বছরের একটা ক্লাবে যোগ দেওয়াটা বিরাট গর্বের। নিজের সেরাটাই দেব”।

লিংডো ২০১৭-১৮ মরশুমে এটিকে-তে সই করেছিলেন। কিন্তু বাঁ হাঁটুর লিগামেন্টে চোটের জন্য বেশির ভাগ ম্যাচেই খেলতে পারেননি মেঘালয়ের ৩৪ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার। গত মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি-তে ছিলেন তিনি। তার আগে বেঙ্গালুরুর দলের আইলিগ ও দু’টি ফেডারেশন কাপ জয়েও অবদান ছিল তাঁর। সেই লিংডো এ বার এসসি ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়ে বলেছেন, “একশো বছরের ক্লাবের ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারাটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার। আমি রোমাঞ্চিত”।

মহম্মদ রফিকের এ বার লাল-হলুদ ব্রিগেডে সই করার অর্থ এই ক্লাবে তাঁর প্রত্যাবর্তন। ২০১৪-য় তিনি ইস্টবেঙ্গলে সই করেছিলেন এবং এখান থেকেই এটিকে তাঁকে লিয়েনে নিয়েছিল হিরো আইএসএলে খেলানোর জন্য। গত মরশুমে তিনি ছিলেন মুম্বই সিটি এফসি-তে। লাল-হলুদ জার্সিতে আগেও খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে রফিক বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার অনুভূতির কোনও তুলনা হয় না। বিশেষ করে সমর্থকদের উন্মাদনা। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার”।

এসসি ইস্টবেঙ্গলের ভারতীয় ফুটবলাররা:

গোলকিপার: শঙ্কর রায়, দেবজিৎ মজুমদার, মহম্মদ রফিক আলি সর্দার, মিরশাদ কুটাপুন্না

ডিফেন্ডার: গুরতেজ সিং, নারায়ণ দাস, সামাদ আলি মল্লিক, লালরাম চুলোভা, মহম্মদ ইরশাদ, এন রোহেন সিং, অবিষেক অম্বেকর, রাণা ঘরামি

মিডফিল্ডার: শেহনাজ সিং, বিকাশ জায়রু, ইউজিনসন লিংডো, ওয়াই গোপী সিং, ওয়াহেংবাম আনগুসানা, মহম্মদ রফিক, মইরাংথেম লোকেন মেতেই, সুরচন্দ্র সিং চন্দম

ফরোয়ার্ড: জেজে লালপেখলুয়া, বলওয়ন্ত সিং