সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে এ বার হিরো আইএসএলের আসরে খেলতে দেখা যাবে পোগবাকে। তবে ইনি ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য পল পোগবা নন, তাঁর দাদা ফ্লোরেন্তিন পোগবা, যিনি এখন ফ্রান্সের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব সোশোতে খেলেন। ৩২ বছর বয়সি এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে দু’বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন।

দলের রক্ষণ নিয়ে গত কয়েক মরশুম নিয়েই নানা অভিযোগ শুনতে হয়েছে এটিকে মোহনবাগান শিবিরকে। একাধিক ম্যাচে খারাপ ফলের জন্য দায়ী করা হয়েছে রক্ষণকেই। গত হিরো আইএসএল মরশুমে এটিকে মোহনবাগান লিগ পর্বে ২৬টি গোল খেয়েছিল, যা সেমিফাইনালে ওঠা চারটি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেমিফাইনালে হায়দরাবাদ এফসি-র কাছে প্রথম লেগে ১-৩ হারের পরেও খুশি ছিলেন না কোচ, কর্তা, সমর্থকেরা। তাই এ বার দলবদলের শুরু থেকেই রক্ষণ মজবুত করার দিকে জোর দিচ্ছেন দলের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো।

এর আগে হায়দরাবাদ এফসি শিবির থেকে ডিফেন্ডার আশিস রাইকে নিয়ে এসেছে তারা। অস্ট্রেলিয়া থেকে যে উড়িয়ে আনা হচ্ছে ২৯ বছর বয়সি ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিলকে, তাও ঘোষণা করা হয়েছে। এ বার ফ্লোরেন্তিন পোগবাকে সই করিয়ে আখেরে রক্ষণ মজবুত করার দিকে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে রইল ২০২০-২১ মরশুমের ফাইনালিস্টরা।

সোশোতে সই করার আগে তিনি লিগ ওয়ানের ক্লাব স্যাঁ এতিয়েনে খেলতেন। সেখানে ছ’বছর ছিলেন তিনি। গত দুই মরশুমে সোশোর হয়ে ৬৩টি ম্যাচ খেলেছেন এই পোগবা। ২০২৮-য় তুরস্কের ক্লাব লিগে খেলতে যান ফ্লোরেন্তিন। পরে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারেও খেলেন আটলান্টা ইউনাইটেডের হয়ে। তাদের ইউএস ওপেন কাপ ও ক্যাম্পিওনেস কাপ জয়ী দলে ছিলেন তিনি। ফ্রান্সের সোশোতে এক বছরের চুক্তি বাকি ছিল তাঁর। সেখান থেকেই দু’বছরের চুক্তিতে কলকাতার ক্লাবে যোগ দিচ্ছেন ফ্লোরেন্তিন পোগবা।

দাদার ভারত অভিযানের খবর নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তারকা পল পোগবা, যাঁর জুভেন্তাসে ফেরা নাকি প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। পল ফ্রান্সের জাতীয় দলের হয়ে খেললেও তাঁর দাদা খেলেন গিনির জাতীয় দলের হয়ে। ২০১০ থেকে সে দেশের হয়ে ৩০টি ম্যাচ খেলেছেন ফ্লোরেন্তিন। তাঁর জমজ ভাই ম্যাথিয়াসও গিনির হয়েই খেলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে।

ক্লাবসূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু হিরো আইএসএল নয়, ডুরান্ড কাপ এবং এএফসি কাপের সেমিফাইনালেও দলের হয়ে মাঠে নামবেন তিনি। ভারতের এক ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন জেনে রোমাঞ্চিত পোগবা বলেন, “এটিকে মোহনবাগানের মতো বিশাল সমর্থক-সমৃদ্ধ ক্লাবের হয়ে খেলব, এটা ভেবেই আমি রোমাঞ্চিত। এটা গর্বের ব্যাপার। এই ক্লাবের জার্সির ঐতিহ্যই আলাদা। সেই জার্সি পরে মাঠে নামার দিনটার অপেক্ষায় রয়েছি”।

ভারতে খেলে যাওয়া নিকোলাস আনেলকা ও রবার্ট পিরেসের কাছ থেকেই এখানকার ফুটবল সম্পর্কে শুনেছিলেন বলে এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে জানিয়েছেন পোগবা। তাঁদের কথা শুনেই ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান তিনি। বলেন, “ইন্ডিয়ান সুপার লিগ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে আমার। তবে আনেলকা, পিরেসদের কাছ থেকে এখানকার ফুটবল লিগ সম্পর্কে যা যা শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে, এখানকার ফুটবল যথেষ্ট জনপ্রিয়। নতুন একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভারতে আসছি। এটা আমার কাছে নতুন দেশ এবং নতুন প্রতিযোগিতা। তাই অনেকগুলো ক্লাবকে নতুন করে চেনার সুযোগ করে দেবে। শুধু ভারতের নয়, এশিয়ারও একটি নামী ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের হয়ে নামতে পারা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি”।

ফ্রান্স, তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যে তিনি সবুজ-মেরুন শিবিরকে সাফল্য এনে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোগবা বলেন, “বিভিন্ন দেশে খেলার অভিজ্ঞতা আমাকে সতীর্থদের নিয়ে সফল হতে শিখিয়েছে। চেষ্টা করব এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ও নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে ট্রফি এনে দিতে”।

এটিকে মোহনবাগানের কয়েক লক্ষ সমর্থককে নিয়ে পোগবা বলেন, “সমর্থকেরা হলেন ক্লাবের হৃদয়। ওদের নিয়েই এগিয়ে যাব আমরা। ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে সবসময়ই ভালবাসি আমি। এখানেও তা পাব জেনে ভাল লাগছে। কবে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সামনে খেলতে নামব, সেই অপেক্ষায় আছি। মেরিনার্স হিসেবে আমি গর্বিত। কথা দিচ্ছি, নিজের সেরাটা দিয়ে সবার সঙ্গে ট্রফি জিতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাব”।

স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোও খুশি ফ্লোরেন্তিন পোগবার মতো একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দলে পেয়ে। তিনি বলেছেন, “পোগবার লক্ষ্য স্থীর। ও সব সময় সেরাটা দিতে চায়। কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করে। রক্ষণ থেকে আক্রমণ তৈরি করতে পারে যেমন, তেমনই ফরোয়ার্ডদের গোল করার জন্য ভাল পাসও দিতে পারে। প্রতিপক্ষের আক্রমণ যেমন সহজেই বুঝতে পারে, তেমনই আটকাতেও পারে”।