পিচ-সাইড প্রতিবেদক লিয়া মংলাদাসকে অনুসরণ করুন, কারণ তিনি চলতি  মরসুমের হিরো আই এস এল – এর পিছনে রয়েছেন। নতুন পোস্টগুলি প্রতি সপ্তাহে  কেবলমাত্র দেখতে পাবেন indiansuperleague.com এ।

ম্যাচ সপ্তাহ ৯:   একজন রেফারি হতে কি সত্যি পচ্ছন্দ হয়?   

গোটা বিশ্বে, সমস্ত লেভেলে, ফুটবল রেফারিদের কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। যদিও সেটা পাড়ার খেলা হোক কিমবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ, রেফারিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা এবং অপমানের সম্মুখীন হতে হয়।  

হিরো আইএসএল ফিক্সচার নিয়ে কোনও পচ্ছন্দ নেই, রেফারিদের শুধু দায়িত্ব পালন করতে হয়। ম্যাচ চলাকালীন যে কোনও খারাপ পরিস্থিতির সময় উত্তেজিত সমর্থক, ম্যানেজার, এবং প্লেয়ারদের রাগের সামনে তারাই প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু একজন টাচ লাইন সাংবাদিক হয়ে, আমি সামনে থেকে দেখেছি, একজন ম্যাচ অফিসিয়ালের কাজটা সত্যি খুবই ঝুকিপূর্ণ, এবং এই সপ্তাহে আমি আপনাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতাটাই ভাগ করে নেব।   

শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার খুব প্রয়োজন

কিছুক্ষণের জন্য আপনি নিজেকে ভাবুন, আপনি ৯০ মিনিটে ১০ কিলোমিটার দৌড়ে নিয়েছেন, তাঁর মধ্যে নানা মানুষ আপনার সামনে চিৎকার করছে এবং আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রমাগত সমালোচনা করছে, সেই অবস্থায় আপনাকে একটা সমালোচনামূলক পেশাগত সিদ্ধান্তের নিতে হবে।     

বিশ্বাস করুন, বিষয়টা এতোটা সহজ নয়।  

একজন রেফারির কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং খুব দ্রুততার সঙ্গে সর্বদাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যদিও আপনি শারীরিক প্রচেষ্টার সম্মুখীন খুব দ্রুত দৌড়াচ্ছেন, একই সঙ্গে ২২ জন শক্তিশালী মানুষ আপনার সঙ্গে দৌড়াচ্ছে, যারা ঘামছেন, তারাও আপনার সমানে আপনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে, তাদের সঙ্গে ডজনেরও বেশি উতপ্ত মানুষ ডাগআউটে বসে নিজেদের আবেগের সঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্ত জাহির করছেন।    

রেফারিদের শুধু অত্যন্ত মনোযোগী ও অনুভূতিহীন হলেই হবে না, এর পাশাপাশি তাদের অসাধারণ সুস্থ এবং প্রাণবন্ত হতে হবে। যারজন্য তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন। এবং তাদের কাজগুলি সাফল্য অর্জন ও সংরক্ষণের জন্য তাদের কঠোর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

আপনি করলেও খারাপ, আপনি না করলেও খারাপ

রেফারি কোনও সন্দেহজনক সিদ্ধান্ত নিলে তাতে যদি কোনও দলের উপকার হয় তাহলে সে কোনও অভিযোগ করবেনা, কিন্তু যদি সিদ্ধান্ত বিপক্ষের পক্ষে যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে হয় তাহলে সিদ্ধান্ত ঠিক হোক বা ভুল প্রশ্ন তুলবে প্রত্যেকটা দল। তাই একজন রেফারিকে তাঁর অল্প সময়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দৃঢ় হতে হয়। সন্দেহের ছায়াতে থাকা সকল প্লেয়ার বা ম্যানেজারেরা তাদের মনে যে সন্দেহের বীজ তৈরি হয়, সেটা তারা প্রমান করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু রেফারিদেরও দারুন সতর্ক থাকতে হয় যাতে তাদের সিদ্ধান্তকে কোনও কিছুই যেন প্রভাবিত করতে না পারে, এমনকি পুরান অভিজ্ঞতাও যেন প্রভাব না ফেলতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন প্লেয়ার ডাইভ দেওয়ার মানে এই নয় যে তাঁর সঙ্গে কখনই সঠিক ফাউল করা হবে না, খারাপ ফাউলের স্বীকার হলে সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। প্রত্যেক ম্যাচই নতুন ম্যাচ এবং এটাকে একেবারে তাজা ম্যাচ হিসাবেই ভাবতে হবে।      

রেফারি চাইলে একটি ম্যাচের পথ পরিবর্তন করতে পারে- তাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় কারন তাঁরা সেটার দাবীদার, তাঁরা দারুন ভাবে দায়িত্ব এবং চাপ নিতে পারেন। এবং তাঁরা যেই কাজটা করেন সেটা সমস্তটাই প্রশংসাহীন কাজ।

ভারতীয় রেফারিদের একটা সুযোগ প্রাপ্য

ভারতীয় ফুটবলের মানদণ্ডের মতই, এখানেও রেফারির মান উন্নত হচ্ছে, কারণ তাঁরা উচ্চতর স্তরে তাদের খেলা পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে যারজন্য তাদের আরো বেশি সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এখন মাঠে প্রতিটা দলে ভারতীয় ফুটবলারের সংখ্যা বেড়েছে, ম্যাচের আগে ও পরে আরও বেশি ভারতীয় সঞ্চালককে দেখা যাচ্ছে, এবং আরও বেশি ভারতীয় কর্মী এখানে কাজ করছেন, এরই পাশাপাশি এই বছরে হিরো আইএসএল-এ বেশি সংখ্যক ভারতীয় রেফারি যুক্ত হয়েছেন।

একটা মূল্যবান কথা সকলকে মাথায় রাখতে হবে, আমরা যদি প্রত্যেকটা বিভাগে উপযুক্ত শিক্ষা না দিতে পারি তাহলে আমরা কখনই বিশ্বমানের স্থানিয় প্রতিভার একটা গুচ্ছ তৈরি করতে পারবনা।  

আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিদেশ থেকে আনা মানেই যে ভাল হতে হবে তাঁর কোনও যৌক্তিকতা নেই।

শুক্রবার নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড বনাম এটিকে-র ম্যাচে কর্তাদের সঙ্গে

দক্ষ অনুশীলনই আসল চাবিকাঠি

এরমানে এই যে, অবশ্যই যাদের নাম এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের কাছ থেকে শিখলে অনেক বেশি জানা যায় এবং নিজেকে সর্বোচ্চ বিশ্বমানের সমতুল্য করা যেতে পারে।   

রেফারির সঙ্গে দুই জন সহকারী রেফারি এবং একজন চতুর্থ অফিসিয়াল থাকেন, আইএসএল-এর প্রতিটা ম্যাচে রেফারির মূল্যায়নকারী কাজে এনারা যুক্ত থাকেন, প্রত্যেক ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তে সাহায্য করার পাশাপাশি তাদের মূল্যবান মত প্রকাশ করাই এনাদের কাজ।

বহু ম্যাচ কমিশনার(যাদের দায়িত্ব, নিশ্চিত করা যে ম্যাচটি সহজেই চলছে, নিরাপত্তার দিকটা তদারকি করা,ম্যাচের নিরাপত্তা দেখা,সততা,এবং মাঠের মান, সঙ্গে অবশ্যই ম্যাচের পরের রিপোর্ট জমা করা)এএফসি ম্যাচ কমিশনারের পরীক্ষা পাস করেছেন। আইএসএলও নিয়মিত রেফারিদের কোচদের সঙ্গে মিলিত হয়, যারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক লেভেলের ম্যাচে উপস্থিত থাকেন এবং রেফারিংয়ের মান নির্ণয় করে, যার নাম উপরে থাকে, রেফের কোচের দেওয়া তথ্যের উপর বিচার করে তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আসলে বর্তমানে প্রাক্তন প্রিমিয়ার লিগ রেফারি পল টেইলর ঠিক এই কাজটাই করছেন।

প্রযুক্তির ভূমিকা

আমি গত কয়েক সপ্তাহ থেকে রেফারিদের আরও কাছ থেকে দেখা শুরু করার পরে আমি তাদের থেকে জানলাম, VAR অথবা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ইংল্যান্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হচ্ছে। এবং আকর্ষণীয়ভাবে, VAR –এর প্রতিক্রিয়া সর্বত্রই সম্পূর্ণরূপে ইতিবাচক হচ্ছেনা।

ফুটবল কখনই ক্রিকেট নয়, যেখানে খেলোয়াড়দের সত্যতা প্রমান করতে রিপ্লেতে সঠিক কোন ও অ্যাঙ্গেল দেখাতে সক্ষম হয়। ফুটবলে তা হ্য়না, ফুটবল হল আরও দ্রুত এবং অত্যন্ত শারীরিক খেলা, ফুটবলের ব্যাখাটা কি, কিমবা ফাউলের ব্যাখটাই বা কি, এখানে এই দুটো বিষয়ের পার্থক্যটা যে খুবই ছোট এমনকি অলীক। 

এখানে প্রায় সব আলোচনাতেই ছিল প্রযুক্তি দ্বারা রেফারির নির্ভুলতা কিভাবে উপকৃত হবে, এটা অনুমান করা হয় যে VAR সেরা রেফারীর ত্রুটিগুলির মাত্র ২% হ্রাস করতে সক্ষম হবে। সমালোচকরাও সবটা বজায় রেখে জানিয়েছেন যে ফুটবলার বদলের জন্য স্টপেজ টাইম বারে এরপর পরামর্শ করার জন্য সময় অতিবাহিত হলে খুব খারাপ হবে, খেলার গতিকে প্রভাবিত করবে।  

মেশিন কি সত্যি মানুষের থেকে ভাল কাজ করতে পারবে, আমার কাছে এটা একটা বড় এবং জটিল প্রশ্ন যেটার উত্তর অবশ্য এখনও মানুষের পক্ষেই রয়েছে।   

আমরা সবাই মানুষ

সবাই বলে, রেফারি কিছু সিদ্ধান্ত ভুল নিয়েছেন। ঠিক যেমন কখনও কখনও সেরা স্ট্রাইকাররাও গোল খুঁজে পাননা, এবং ঠিক যেমন কখনও কখনও সেরা গোলরক্ষকরাও অতি সহজ গোল হজম করেন, ঠিক যেমন অভিজ্ঞ ম্যানেজারদেরও একটি দলকে চালনা করতে বেগ পেতে হয়।

রেফারিরা খেলোয়াড়দের মতো, ম্যানেজার, দলের মালিক এবং সমর্থকের মতো এবং সবার উপর মানুষের মতো। এমনকি তীব্র মন এবং শারীরিক অতি সক্ষম মানুষেরও ভুল হয়, সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতিমান মানুষেরও ভুল হয়ে থাকে।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তাঁরা তাহলে কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেলা দেখেন? শরীর, মন, আবেগ, অহংকার, মাঠের মধ্যের উদ্দীপনা সবটাই বাস্তব এই সব দিয়ে তাঁরা খেলা পরিচালনা করেন এবং এরপরে তাঁরা ভুল করতেই পারেন, আপনার আমার মতো।আমরা সবাই মানুষ।   

আমার সঙ্গে যুক্ত থাকুন Instagram এবং Twitter @leezamangaldas এর মাধ্যমে  .