সারা ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেও শেষ পর্যন্ত ওডিশা এফসি-কে হারাতে পারল না এটিকে মোহনবাগান। রবিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে কার্যত গোলশূন্য ড্র করে আটকে দেয় ওডিশার দল। সারা ম্যাচে অন্তত হাফ ডজন শট গোলে রাখলেও একটিও গোলে পরিণত করতে পারলেন না এটিকে মোহনবাগান ফরোয়ার্ডরা। বহু দিন পরে রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামস জুটিকে শুরু থেকে খেলতে দেখা গেলেও তাঁরা দলকে জেতাতে পারলেন না। এই ড্রয়ের ফলে লিগ টেবলে সাত নম্বরেই রয়ে গেল এটিকে মোহনবাগান এবং ওডিশাও ছয়েই রয়ে গেল।

এ দিন একাধিক সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে জয় হাতছাড়া করে কলকাতার দল (নীচের পরিসংখ্যান দেখুন)। সারা ম্যাচে ৬টি শট গোলমুখী ছিল তাদের। ওডিশার তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল। কিন্তু কোনওটিই গোলে পরিণত হয়নি। পরিসংখ্যানে সব দিক দিয়ে এগিয়েও এ দিন আসল কাজের কাজটি করে উঠতে পারেনি সবুজ-মেরুন শিবির।

যতক্ষণ রয় কৃষ্ণা মাঠে ছিলেন, ততক্ষণ এটিকে মোহনবাগান বিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঝড় তুলে দেয়। ওই সময়ে বিপক্ষকে যথেষ্ট চাপে রাখে তারা। ওডিশার ডিফেন্ডাররা, বিশেষ করে ভিক্টর মঙ্গিলের তৎপরতায় বারবার ব্যর্থ হন তাঁরা। কিন্তু ৬০ মিনিটের মাথায় অপ্রত্যাশিত ভাবে রয় কৃষ্ণাকে কোচ মাঠের বাইরে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই গতবারের রানার্স আপ দলের আক্রমণের ধার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।

  • ১৫ মিনিট: বক্সের বাঁদিক থেকে মনবীরের মাইনাসে গোলের সামনে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড। কিন্তু তাঁর গোলমুখী শট অসাধারণ দক্ষতায় ব্লক করে দেন ভিক্টর মঙ্গিল।
  • ২৭ মিনিট: বক্সের বাইরে বাঁ দিক থেকে রয় কৃষ্ণাকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন ডেভিড। কিন্তু সেই ভিক্টর মঙ্গিলের চাপে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন রয়।
  • ৩৮ মিনিট: পেনাল্টি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে কোলাসোর সরাসরি ফ্রি কিক গোলে ঢোকার মুখে অনেকটা লাফিয়ে অনবদ্য সেভ করেন অর্শদীপ।
  • ৫০ মিনিট: ডান দিক দিয়ে ওঠা আশুতোষ মেহতার সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে বল প্রায় ফাঁকা গোলের দিকে ঠেলে দেন তিনি। কিন্তু বল সোজা গিয়ে লাগে এগিয়ে আসা অর্শদীপের পেটে।
  • ৮২ মিনিট: বক্সের মধ্যে থেকে বল গোলে রাখলেও হাভিয়ে হার্নান্ডেজ অফসাইডে থাকায় সে গোল বাতিল হয়ে যায়।
  • ৮৯ মিনিট: মাঝমাঠ থেকে তৈরি হওয়া গোলের সুযোগের শেষে গোলের সামনে থেকে বারের ওপর দিয়ে শট নেন প্রবীর।

গত ১৭ দিন আগ্রাসী ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পরে এ দিন প্রায় পুরো দলই হাতে পেয়েছিলেন এটিকে মোহনবাগানের কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এমনকী শেষ ম্যাচে মাঠে চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কার্ল ম্যাকহিউকেও এ দিন প্রথম এগারোয় দেখা যায়। তবে কার্ড সমস্যায় থাকা হুগো বুমৌসকে না খেলতে পারায় দীর্ঘদিন পরে রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামসের জুটিকে রবিবার ফের দেখা যায় মাঠে।  ৪-২-৩-১-এ দল সাজান ফেরান্দো। ওডিশা এফসি-ও একেবারে ওই ছকেই দল সাজায় প্রাক্তন এটিকে মোহনবাগানী হাভিয়ে হার্নান্ডেজকে সবার সামনে রেখে।  

দুই দলের মধ্যেই এ দিন শুরুতে ঘন ঘন প্রতি আক্রমণে ওঠার প্রবণতা দেখা যায়। সাত মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণা বক্সের মধ্যে কঠিন কোণ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন। দশ মিনিটের মাথায় হাভিয়ে হার্নান্ডেজ একটু দূর থেকে সোজা গোলকিপারের হাতে শট মারেন। ১৪ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসোও একই ভাবে গোলকিপারের হাতে বল তুলে দেন।

কিন্তু ১৫ মিনিটের মাথায় যে সুযোগটি পান ডেভিড উইলিয়ামস, তা কাজে লাগাতে পারলে অবধারিত গোল ছিল। বক্সের বাঁদিক থেকে মনবীরের মাইনাসে গোলের সামনে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড। কিন্তু তাঁর গোলমুখী শট অসাধারণ দক্ষতায় ব্লক করে দেন ভিক্টর মঙ্গিল। ২০ মিনিটের মাথায় ফের ডেভিড উইলিয়ামসের গোলমুখী শট বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে সেভ করেন ওডিশার গোলকিপার অর্শদীপ সিং।

লিস্টন কোলাসো যেমন এর আগে কোণাকুনি শটে একাধিক দর্শনীয় গোল করেছেন, তেমনই এ দিনও ২৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে বল ভাসিয়ে দেন। কিন্তু অল্পের জন্য বল ডিপ না করে বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

২৭ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে বাঁ দিক থেকে রয় কৃষ্ণাকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন ডেভিড। কিন্তু সেই ভিক্টর মঙ্গিলের চাপে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন রয়। এর দু’মিনিট পরে লিস্টন কোলাসো আবার ছ’গজের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে কোণাকুনি শটে গোলে বল রাখতে ব্যর্থ হন। প্রথমার্ধেই দুই দলের ছ-ছ’টি শট গোলমুখী ছিল। এটিকে মোহনবাগানের চারটি ও ওডিশার দু’টি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই একেই বলে।

৩৮ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সুবর্ণ সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান। বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে তাঁর সরাসরি ফ্রি কিক গোলে ঢোকার মুখে অনেকটা লাফিয়ে অনবদ্য সেভ করেন অর্শদীপ। এ দিন সবুজ-মেরুন শিবিরের আক্রমণ বিভাগকে যতটা তৎপর দেখা যায়, ততটা তৎপর বোধহয় আর তাদের কোনও ম্যাচেই দেখা যায়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ডেভিড। ৫০ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা আশুতোষ মেহতার সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে বল প্রায় ফাঁকা গোলের দিকে ঠেলে দেন তিনি। কিন্তু বল সোজা গিয়ে লাগে এগিয়ে আসা অর্শদীপের পেটে। 

৬০ মিনিটের মাথায় হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে রয় কৃষ্ণাকে তুলে নিয়ে প্রবীর দাসকে নামান ফেরান্দো। এই পরিবর্তনের পর থেকেই আক্রমণের ধার কমে যায় এটিকে মোহনবাগানের। এর দশ মিনিট পরে দীপক টাঙরির জায়গায় আসেন লেনি রড্রিগেজ। দুই দলেরই রক্ষণ এই সময় যথেষ্ট তৎপর ছিল বলে মাঝমাঠ থেকে খেলা দুই পক্ষের গোল এরিয়ায় কমই যায়। তবে ৮২ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে থেকে বল গোলে রাখলেও হাভিয়ে হার্নান্ডেজ অফসাইডে থাকায় সে গোল বাতিল হয়ে যায়।

রয় বসে যাওয়ার পরে কোলাসোই আক্রমণের মূল দায়িত্বে ছিলেন। একাধিকবার বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে উঠে আক্রমণ তৈরি করার চেষ্টা করেন কোলাসো। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই ওডিশা ডিফেন্ডারদের তৎপরতায় তিনি আটকে যান। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেন প্রবীর। মাঝমাঠ থেকে তৈরি হওয়া গোলের সুযোগের শেষে গোলের সামনে থেকে বারের ওপর দিয়ে শট মারেন তিনি।

চার মিনিটের স্টপেজ টাইমে ওডিশা দু’টি ফ্রি কিক ও দু’টি কর্নার অর্জন করে নেয় ওডিশা। কিন্তু কোনওটিই তারা কাজে লাগাতে পারেনি।    

এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল (অধি), তিরি, শুভাশিস বোস, কার্ল ম্যাকহিউ, দীপক টাঙরি (লেনি রড্রিগেজ), মনবীর সিং, রয় কৃষ্ণা (প্রবীর দাস), লিস্টন কোলাসো, ডেভিড উইলিয়ামস।

পরিসংখ্যানে ম্যাচ

বল পজেশন: এটিকে মোহনবাগান ৫৪% - ওডিশা এফসি ৪৬%

সফল পাস: ৩৬৫/৪৬০ (৭৯%) - ২৭৭/৩৬৪ (৭৬%), গোলে শট: ৬-৩, ফাউল: ১২-৭, ইন্টারসেপশন: ১৫-২২, কর্নার: ৭-৬, হলুদ কার্ড: ২-২, ম্যাচের সেরা: থৈবা সিং