ভারতীয় ফুটবলে বড় খবর! ইউরোপের বিখ্যাত সিটি ফুটবল গ্রুপ (সিএফজি) এ বার প্রবেশ করল ভারতে। হিরো আইএসএল-এর অন্যতম ক্লাব মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে হাত মেলাল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মালিক এই সংস্থা। মুম্বই সিটি এফসি-র অধিকাংশ মালিকানা এখন থেকে তাদেরই হাতে থাকবে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ছাড়াও এই সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি এফসি, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন সিটি এফসি, জাপানের ইওকোহামা এফ মেরিনোজ, উরুগুয়ের ক্লাব আতলেতিকো তোর্কে, স্পেনের গিরোনা এফসি ও চিনের সিচুয়ান জিউনিউ এফসি-রও মালিক।

এমন বিশ্বব্যাপি ফুটবল বাণিজ্যের বিস্তার যাদের, সে রকম এক আন্তর্জাতিক সংস্থার ভারতীয় ফুটবলে প্রবেশ এই প্রথম। এখন থেকে মুম্বই সিটি এফসি-র ৬৫ শতাংশ মালিকানা থাকবে সিএফজি-র হাতে। বাকি ৩৫ শতাংশ থাকবে বলিউড তারকা ও প্রযোজক রণবীর সিং ও বিমল পারেখের হাতে। যদিও এই সিদ্ধান্ত একাধিক ফুটবল প্রশাসক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সব কিছু ঠিকঠাক চললে এই সিদ্ধান্ত একশো শতাংশ পাকা হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা বলা যায়।

বৃহস্পতিবার মুম্বই সিটি এফসি-র সমর্থকদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সিএফজি-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার ফেরান সোরিয়ানো এবং ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ও রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন নীতা অম্বানি। এই চুক্তির ফলে বিশ্বখ্যাত এই ফুটবল প্রশাসক সংস্থার পেশাদারিত্বের ছোঁয়া লাগবে মুম্বই সিটি এফসি-তে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতিও ক্রমশ বেড়ে উঠবে তাদের।

বর্তমানে মুম্বই সিটি এফসি হিরো আইএসএল-এর লিগ তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এবং আন্ধেরি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আট হাজার দর্শকাসনবিশিষ্ট মুম্বই ফুটবল এরিনায় হোম ম্যাচ খেলে তারা। শনিবারই তারা কলকাতার দল এটিকে-র বিরুদ্ধে খেলতে নামবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। মুম্বই সিটি এফসি-কে নিয়ে এখন থেকে সারা বিশ্বে সিএফজি-র মালিকানাধীন মোট ক্লাবের সংখ্যা হবে আট। সারা বিশ্বে মোট ১৩টি দফতরের মাধ্যমে তারা তাদের বিশাল ফুটবল-কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।

২০১৩-য় পথ চলা শুরু যাদের, সেই সিএফজি-র অধীনে এখন প্রায় দু’হাজার কর্মী কাজ করেন ও তাদের অধীনস্থ ক্লাবগুলিতে প্রায় দেড় হাজার ফুটবলার রয়েছে, সারা বছর ধরে যারা প্রায় আড়াই হাজার ম্যাচ খেলে থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তাদের সিটিজেন্স গিভিং ক্যাম্পেনের মাধ্যমে সিএফজি ছটি দেশে সমাজসেবামূলক প্রকল্পেও যুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে ২০১৯-এ মুম্বইও ছিল।

এমন একটা সময়ে সিএফজি এই চুক্তি চূড়ান্ত করল, যখন তারা তাদের ফুটবল-বাণিজ্যে বেশ ব্যস্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছে। মুম্বই এফসি-র সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তারা প্রযুক্তি বিনিয়োগে বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্থা সিলভার লেক-এর কাছ থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতাও চূড়ান্ত করেছে। নতুন এই চুক্তির ফলে এই সংস্থার আর্থিক মূল্য দাঁড়াল প্রায় ৪ হাজার আটশো কোটি ডলার।

গত সপ্তাহে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তাদের যে বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে দেখা গিয়েছে গত বছরে নজিরবিহীন আয় হয়েছে তাদের। এই নিয়ে টানা পাঁচ বছর আর্থিক লাভ হল তাদের। এই বছরে ইপিএল ট্রফি নিয়ে তাদের বিশ্বসফরে ভারতও ছিল অন্যতম গন্তব্য।

সিএফজি-কে এ দেশের ফুটবল ও হিরো আইএসএল-এ স্বাগত জানিয়ে নীতা অম্বানি বলেন, “এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিকে যা স্বীকৃতি দিয়েছে ও দেশের ফুটবল নিয়ে আমাদের স্বপ্নপূরণের মুহূর্তকে যেন আরও কাছাকাছি এনে দিয়েছে। এই ঘটনা আমাদের ফুটবলের ইতিহাসকে যেমন সমৃদ্ধ করবে, তেমনই সারা দেশের ফুটবলার, ফুটবলপ্রেমী ও তাদের সংস্কৃতিকেও গর্বিত করবে। আমরা ফুটবলের উন্নতির জন্য যা করে চলেছি, এ তারই প্রতিদানস্বরূপ। আমাদের যুবসমাজে শক্তি ও প্রতিভার অভাব নেই। খেলাধুলার ক্ষেত্রে তো বটেই, সর্বক্ষেত্রেই। বিশ্বের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ”।

তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত সবার পক্ষ থেকে আমি সিটি ফুটবল গ্রুপকে স্বাগত জানাই। তারা যে এই দেশের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ও আস্থা দেখিয়েছেন, সে জন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ”।

নতুন এই চুক্তি ও ভারতীয় ফুটবলে নজির রাখার এই সুযোগ নিয়ে সিএফজি-র চেয়ারম্যান খালদুন আল মুবারক মন্তব্য করেছেন, “আমার বিশ্বাস, এই বিনিয়োগ মুম্বই সিটি এফসি-র পাশাপাশি সিটি ফুটবল গ্রুপ ও ভারতীয় ফুটবলকেও লাভবান করে তুলবে। আমাদের সংস্থা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ ও মুম্বই সিটি এফসি-র সম্ভাবনার প্রতি যথেষ্ট দায়বদ্ধ। মুম্বই সিটি এফসি-র সমর্থক ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কাজ করার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। ক্লাবের সহ-মালিকদের সঙ্গে নিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত ক্লাবের উন্নতির জন্য কাজ করব আমরা”।

এই ঘোষণার সঙ্গে সিএফজি তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট দামিয়ান উইলাফবিকে তাদের ভারতীয় শাখার সিইও-ও ঘোষণা করল। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিঙ্গাপুর থেকে মুম্বইয়ে এসে দায়িত্ব নেবেন তিনি।