সবুজ-মেরুন বাহিনীর সঙ্গে আইএসএলে জোড়া খেতাব জেতা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা: সুহেল
‘যখন ভাবি, দলের সঙ্গে কত পরিশ্রম করেছি, হারার পরেও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, তখন খুব ভাল লাগে। শিল্ড আর কাপ একসঙ্গে জেতার যে অনুভূতি, তা এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়’।

একসময় তিনি বল বয় হিসেবে নিয়মিত মাঠে থাকতেন। সেখান থেকে ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামার অভিযান যে বেশ রোমাঞ্চকর, তা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলে দিতে হবে না। ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে সম্প্রতি মাঠে নেমেছিলেন কাশ্মীর থেকে উঠে আসা তরুণ ফরোয়ার্ড সুহেল ভাট। কিন্তু তার আগে ফুটবলের যে তালিম পেয়েছেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবিরে, যে সাফল্য তিনি পেয়েছেন কলকাতার ক্লাবের সঙ্গে, তা কি জীবনেও কখনও ভুলতে পারবেন? বোধহয় না।
সবুজ-মেরুন বাহিনীর এই তরুণ ফুটবলার এখন ক্লাবের সঙ্গে তার স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটছেন। গত মরশুমে তিনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ঐতিহাসিক আইএসএল ডাবল জয়ী দলে ছিলেন। তাঁর প্রথম মরশুমেই, অর্থাৎ ২০২৩-২৪-এ, তিনি ক্লাবের হয়ে ডুরান্ড কাপ ও লিগ শিল্ড জিতেছিলেন।
মোহনবাগানের হয়ে খেলতে পারায় গর্বিত সুহেল তাঁর ফুটবল জীবনের এই সুবর্ণ অধ্যায় নিয়ে বলেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যখন পেছনে ফিরে তাকাই, তখন অবিশ্বাস্য মনে হয়। মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছি। সত্যিই এটা যেন স্বপ্নের মত এক মরশুম”। এমবিএসজি টিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি কথাগুলি বলেন সুহেল।
Suhail recounts a dream season with MBSG TV! 🥹#MBSG #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন pic.twitter.com/gMYjWWgWIo
— Mohun Bagan Super Giant (@mohunbagansg) June 15, 2025
শ্রীনগরের বেমিনা অঞ্চল থেকে উঠে আসা সুহেল তার কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ইন্ডিয়ান অ্যারোজ থেকে। পরে তিনি মোহনবাগানের রিজার্ভ দলে যোগ দেন এবং তাঁর গোল করার ক্ষমতা অনেকেরই নজর কাড়ে, যা ক্রমশ তাঁর সামনে সিনিয়র দলের দরজা খুলে দেয়। সেই ভারতসেরা ক্লাবের সিনিয়র দলের সঙ্গে এতগুলি খেতাব জয়ের কথা বলতে গিয়ে শিহরণ জাগে তাঁর শরীরে।
বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না, আমরা এতগুলো ট্রফি জিতেছি। যখন ভাবি, দলের সঙ্গে কত পরিশ্রম করেছি, হারার পরেও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, তখন খুব ভাল লাগে। শিল্ড আর কাপ একসঙ্গে জেতার যে অনুভূতি, তা এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়”।
সবুজ-মেরুন বাহিনীতে ডাক পাওয়ার স্মৃতি হাতড়ে সুহেল বলেন, "আমি তখন অ্যারোজে খেলতাম, আর যখন আমরা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ শেষ করলাম, আমার এজেন্ট আমাকে ফোন করে বলল, ‘মোহন বাগান তোমায় নিতে চায়।’ আমি তখনই বলে দিই, ‘ওরা যত টাকাই দিক, আমি ওখানেই যাচ্ছি।’ শুরু থেকেই আমার মনে হয়েছিল আমি মোহনবাগানে খেলতে চাই”।
“কলকাতায় এসে রিজার্ভ দলে খেলতে শুরু করি। রিজার্ভ দলে আমাদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া ছিল, আর সেই কারণেই আমি বেশি গোল করতে পেরেছিলাম। আমি কলকাতা ফুটবল লিগ (CFL) এবং রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগে গোল করেছিলাম। অভিষেক ম্যাচেই আমি মহমেডানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করি। এটাই আমার জীবনের সেরা অভিষেক। সেখান থেকেই আমার কেরিয়ার শুরু হয়। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাইনি—আরও বেশি করে পরিশ্রম করে গিয়েছি”।
আইএসএলে গত মরশুমে ১২৭ মিনিট ও তার আগের মরশুমে ৭০ মিনিট মাঠে ছিলেন সুহেল। এ বছর কলিঙ্গ সুপার কাপে সুহেল তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখান, দু’টি গোল করে এবং এর পরেই তিনি জাতীয় দলে ডাক পান। মানোলো মার্কেজের কোচিংয়ে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে দেশের হয়ে অভিষেকও হয় তাঁর।
ভারতীয় ফুটবল দলে এর আগেও খেলেছেন কাশ্মীরের একাধিক ফুটবলার। ১৯৮০-র দশকে আবদুল মজিদ কাকরু এবং মুশির আহমেদের পরে, ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু এবং ২০২২ সালে দানিশ ফারুক ভাটও খেলেছেন দেশের হয়ে। কাশ্মীর থেকে জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের তালিকায় পঞ্চম খেলোয়াড় সুহেল আহমেদ ভাট।
এর আগে অনূর্ধ্ব ১৬, ১৯, ২৩ ভারতীয় দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। এ বার সিনিয়র দলের হয়ে খেলারও সুযোগ পেলেন। ২০২২-এ সারা বিশ্বের সেরা ৬০জন উদীয়মান ফুটবলারের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল ‘গার্ডিয়ান’, তাতে জায়গা করে নিয়েছিলেন সুহেল।
২০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড জাতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামতে পেরে দারুন খুশি। সুনীল ছেত্রী ও অন্যান্য সিনিয়রদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, “যখন থেকে ফুটবল খেলছি, তখন থেকেই অনূর্ধ্ব-১৬, তারপর অনূর্ধ্ব-১৯, তারপর এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাই পর্বে খেলেছি। প্রতিবার আমার লক্ষ্য ছিল শুধুই সিনিয়র দলে জায়গা পাওয়া এবং দেশের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
যখন প্রথমবার সিনিয়র দলে ডাক পেলাম, তখন তা ছিল স্বপ্নের মতো। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না। সুনীল ছেত্রী ভাই এবং অন্যান্য সিনিয়রদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা— তাঁরা আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। তাঁরা সব সময় বলেন, ‘চেষ্টা করে যাও।’ ভারতীয় শিবিরে থাকা এক অসাধারণ অনুভুতি”।