যে কোনও খেলায় ধারাবাহিকতাই একজন খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যারা প্রতি মরশুমেই ভাল পারফরম্যান্স দেখান, তাঁরা যেকোনও দলেরই সম্পদ হয়ে ওঠেন। সেই ধারাবাহিকতার কঠিন পরীক্ষা নেয় দলবদল। নতুন জার্সির সঙ্গে আসে নতুন প্রত্যাশা, অজানা পরিবেশ এবং ভিন্ন কৌশলগত চাপ।

একটি নতুন দলে যোগ দেওয়া মানে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, যা খেলোয়াড়ের আত্মবিশ্বাস ও ছন্দে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই সে জন্য হোঁচট খান। ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন না। কিন্তু কিছু খেলোয়াড় নিজেদের পারফরম্যান্স ঠিকই ধরে রাখেন।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যারা দল বদলের পরেও নিজেদের ফর্ম ধরে রাখতে পেরেছেন, প্রমাণ করেছেন পরিচিত পরিবেশই সব কিছু নয়। এই প্রতিবেদনে তেমনই কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন ক্লাবে খেলেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে গিয়েছেন।

হোসে লুই এস্পিনোসা অ্যারোয়ো (তিরি)

ক্লাব: এটিকে এফসি → জামশেদপুর এফসি → মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট → মুম্বই সিটি এফসি
শিরোপা: ২টি আইএসএল কাপ (এটিকে এফসি ২০১৬, মুম্বই সিটি এফসি ২০২৩–২৪)

আইএসএল-এর অন্যতম অভিজ্ঞ এবং পেশাদার ডিফেন্ডার তিরি, চারটি ভিন্ন ক্লাবে খেলে তাঁর মান ধরে রেখেছেন। এটিকে-র হয়ে দুর্দান্ত শুরু করার পর জামশেদপুরের সঙ্গে নিজেকে তৈরি করেছেন, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছেন এবং মুম্বই সিটিতে তাঁর অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখা দিয়েছে—সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক।

বারথোলোমিউ ওগবেচে

ক্লাব: নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি → কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি → মুম্বই সিটি এফসি → হায়দরাবাদ এফসি
শিরোপা: ২টি আইএসএল কাপ, ১টি আইএসএল শিল্ড

আইএসএল-এর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ওগবেচে যে ক্লাবেই খেলেছেন, গোল করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কেরালা ব্লাস্টার্সে প্লে-অফে যেতে না পারলেও ১৬ ম্যাচে ১৬টি গোল ও অ্যাসিস্টের অবদান রেখেছেন। বাকি তিনটি ক্লাবকেই প্লে-অফে তুলেছেন এবং জিতেছেন ট্রফিও। তাঁর আইএসএল যাত্রা শেষ হয় ৯৮ ম্যাচে ৭২টি গোল অবদানের অসাধারণ রেকর্ড নিয়ে।

রাহুল ভেকে

ক্লাব: কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি → পুনে সিটি → বেঙ্গালুরু এফসি → মুম্বই সিটি এফসি → বেঙ্গালুরু এফসি
শিরোপা: ২টি আইএসএল কাপ, ১টি আইএসএল শিল্ড

আইএসএল-এর এক বিশ্বস্ত সৈনিক রাহুল ভেকে। কখনও ফুল-ব্যাক, কখনও সেন্টার-ব্যাক— যে ভূমিকাতেই খেলেছেন, সব সময়ে স্থির ও পেশাদার থেকেছেন। ২০১৮–১৯ মরশুমে এফসি গোয়ার বিপক্ষে ফাইনালের জয়সূচক গোলটি তাঁকে আইএসএল ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।

হুগো বুমৌস

ক্লাব: এফসি গোয়া → মুম্বই সিটি এফসি → মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট → ওড়িশা এফসি
শিরোপা: ৩টি আইএসএল শিল্ড, ২টি আইএসএল কাপ

এফসি গোয়ায় শুরু করে বুমৌস মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুম্বই সিটিতে এসে জিতেছেন ডাবল। মোহনবাগানেও নিজের ফর্ম ধরে রেখেছেন। ওড়িশায় এসে আগের কোচ লোবেরার অধীনে খেলে ফের চিনিয়েছেন তাঁর জাত।

আহমেদ জাহু

ক্লাব: এফসি গোয়া → মুম্বই সিটি এফসি → ওড়িশা এফসি
শিরোপা: ৩টি আইএসএল শিল্ড, ১টি আইএসএল কাপ

মরক্কোর এই মিডফিল্ডার যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই পাসিং ও প্লেমেকিংয়ের মাধ্যমে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন। ১৫০টি আইএসএল ম্যাচে ৯টি গোল ও ২৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই তাঁকে এই তালিকার ওপরের দিকে রেখেছে।

মুর্তাদা ফল

ক্লাব: এফসি গোয়া → মুম্বই সিটি এফসি → ওড়িশা এফসি
শিরোপা: ৩টি আইএসএল শিল্ড, ১টি আইএসএল কাপ

সেনেগালের এই ডিফেন্ডার তাঁর উচ্চতা ও শক্তি দিয়ে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি সেট-পিস থেকে গোল করায় বিশেষজ্ঞ। সেই কারণেই ব্যতিক্রমী ডিফেন্ডার হিসেবে উঠে এসেছেন ফল। ২৫টি গোল করে আইএসএল-এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা ডিফেন্ডার তিনিই।

হাভিয়ে হার্নান্ডেজ

ক্লাব: এটিকে এফসি → মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট → ওড়িশা এফসি → বেঙ্গালুরু এফসি → জামশেদপুর এফসি
শিরোপা: ১টি আইএসএল কাপ (এটিকে এফসি ২০১৯–২০)

হাভি হার্নান্ডেজ এক নিখুঁত মিডফিল্ডার যিনি টেম্পো নিয়ন্ত্রণ, পাসিং এবং সেট-পিসে দক্ষতার জন্য পরিচিত। জামশেদপুরে সাম্প্রতিক মরশুমে তিনি দলের মাঝমাঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন এবং দলকে সেমিফাইনালে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

আপুইয়া

ক্লাব: নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি → মুম্বই সিটি এফসি → মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
শিরোপা: ২টি আইএসএল শিল্ড, ২টি আইএসএল কাপ

পেশাদার ফুটবল জীবনের শুরুতেই সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের খেতাব জয় করার পর আপুইয়া মুম্বইয়ে যোগ দিয়ে নিজের ফর্ম ধরে রাখেন। পরে মোহনবাগানে এসে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্লাবকে জোড়া খেতাব জেতান।

তালিকা এখানেই শেষ করা যাবে না। কারণ, আরও কয়েকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে, যাদের ছাড়া এই তালিকা অসম্পুর্ণই থেকে যাবে। তাঁদের নাম নীচে দেওয়া হল।

রয় কৃষ্ণা

অমরিন্দর সিং

আলবার্তো নগুয়েরা

এই ফুটবলাররা প্রমাণ করেছেন, দক্ষতা আর মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যে কোনও ক্লাবেই ফর্ম বজায় রাখা সম্ভব। আইএসএল-এ তাঁদের যাত্রা ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা।