ইন্ডিয়ান সুপার লিগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন স্প্যানিশ ফুটবল-গুরুরা
শুধু খেতাব জয়েই সীমাবদ্ধ নন তাঁরা, আইএসএলে খেলার ধরনও বদলে দিয়েছেন স্প্যানিশ কোচেরা। কী ভাবে এই জাদু দেখিয়েছেন তাঁরা?

লম্বা পাস থেকে লাইন ভাঙা পাস এবং সুপরিকল্পিত আক্রমণ— ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এর দীর্ঘ যাত্রায় এই রূপান্তরের নেপথ্যে মূলত যে দেশের প্রভাব পড়েছে, তা নিঃসন্দেহে স্পেন।":0,"335559740":256}"="">
গত এক দশকে, স্প্যানিশ প্রধান কোচেরা কেবল ট্রফি জেতেননি বরং ভারতে ফুটবলের ধরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিকেই বদলে দিয়েছেন। বল দখল নির্ভর খেলা হোক বা প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল, আইএসএলে কৌশলগত ধারায় স্প্যানিশ কোচেরা এনেছেন বৈচিত্র্য ও গভীরতা। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা এই অভিযানে সঙ্গী করেছেন ভারতীয় ফুটবলারদেরও। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের ওপর আস্থা রাখা ও তাদের আধুনিক ফুটবলার গড়ে তোলার কাজ করছেন তাঁরা, যাতে বিভিন্ন স্টাইলের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে ভারতীয় ফুটবলাররা। এ ভাবে লিগের সেরা দলগুলিকে গড়ে তুলছেন স্প্যানিশ কোচেরা।":0,"335559740":256}"="">
শুরু থেকেই সাফল্য":0,"335559740":256}"="">
অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কী ভাবে আইএসএলের প্রথম মরশুমেই সবার মনে ছাপ ফেলেছিলেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তাঁর এটিকে দল হয়তো বল দখলে বিশেষ পারদর্শী ছিল না। কিন্তু ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ, আক্রমণাত্মক ও প্রতিআক্রমণে মারাত্মক। বাস্তববাদী এই কোচ শুরুতেই সফল হন এবং এই সাফল্য ছিল একটি যুগের সূচনা। ":0,"335559740":256}"="">
২০১৬-য় আসেন হোসে মোলিনা। তিনিও এটিকে-র দায়িত্ব নেওয়ার জন্য স্পেন থেকে ভারতে আসেন। সময়টা দীর্ঘ না হলেও তিনিও ফের শিরোপা এনে দেন কলকাতার দলকে। তাঁর দর্শন হাবাসের চেয়ে আলাদা হলেও ফল ছিল ইতিবাচক।":0,"335559740":256}"="">
২০১৯-এ ফিরে আসেন হাবাস এবং ফের জেতেন আইএসএল কাপ— এই নিয়ে দ্বিতীয়বার, যা তাঁকে আইএসএল ইতিহাসের প্রথম কোচের মর্যাদা দেয়, যিনি দু’বার আইএসএল কাপ জেতেন। মোলিনাও পরে ফেরেন, ২০২৪-এ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হিসেবে এবং তিনিও ইতিহাস লেখেন— একই মরশুমে লিগ শিল্ড ও আইএসএল কাপ, অর্থাৎ জোড়া খেতাব জিতে, তাঁর আগে যে কীর্তি শুধু সের্খিও লোবেরা স্থাপন করতে পেরেছিলেন।":0,"335559740":256}"="">
লোবেরা ও ‘স্প্যানিশ স্টাইল’-এর জন্ম":0,"335559740":256}"="">
হাবাস ছিলেন বিজয়ী, আর লোবেরা ছিলেন শিল্পী। ২০১৭-য় এফসি গোয়ায় আসার পর, বার্সেলোনার পজিশন-ভিত্তিক খেলা, পিছন থেকে বিল্ড আপ এবং পরিকল্পিত পাসিং ফুটবলের আমদানি করেন তিনি। তখন থেকেই আইএসএলে এক বিপ্লব শুরু হয়।":0,"335559740":256}"="">
২০১৯-২০ মরশুমে লোবেরার এফসি গোয়া ছিল এক পরিকল্পিত আক্রমণের পাঠশালা। বলের গতি, একের পর এক নিখুঁত পাসে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে দেওয়া—এ সবই ছিল তাদের ম্যাচে নিয়মিত দৃশ্য। লোবেরা পরে মুম্বই সিটি এফসিতে যোগ দেন এবং ২০২০-২১ মরশুমে জোড়া খেতাব জয় নিশ্চিত করেন। এক মরশুমেই লীগ শিল্ড ও কাপ জেতা প্রথম কোচ ছিলেন তিনিই।":0,"335559740":256}"="">
তাঁর প্রভাব এখানেই শেষ নয়। এখনও স্প্যানিশ ফুটবল ঘরানার ছায়া দেখা যায় ওডিশা এফসি (তাঁর বর্তমান ক্লাব), মনোলো মার্কেজের এফসি গোয়া ও জেরার্ড জারাগোজার বেঙ্গালুরু এফসি দলে।":0,"335559740":256}"="">
শুধু শ্রমিকই নয়, প্রধান চরিত্রও!":0,"335559740":256}"="">
স্প্যানিশ কোচেরা শুধু কৌশল নয়, ফুটবলারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও এনেছেন। আগে ভারতীয় খেলোয়াড়রা শুধুই ‘ওয়ার্কহর্স’ হিসেবে মাঠে নামতেন, প্রাণপাত করে ফুটবল খেলতেন। এখন তাঁরা বল নিয়ন্ত্রণে দক্ষ রক্ষক, সৃজনশীল মিডফিল্ডার এবং ধারালো ফরোয়ার্ড। যেমন সন্দেশ ঝিঙ্গন, রাহুল ভেকে, চিঙলেনসানা সিং-এর মতো ডিফেন্ডাররা, যাঁরা স্প্যানিশ কোচেদের তত্ত্বাবধানে খেলে এসেছেন, তাঁরা রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার কাজও করেন। কৌশলগত উন্নতির সঙ্গে শৃঙ্খলাতেও তাঁরা ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। ":0,"335559740":256}"="">
মিডফিল্ডারদের খেলাতেও এসেছে পরিবর্তন। তাঁরা এখন জটিল পজিশনাল পদ্ধতিতে খেলছেন, যেখানে বুদ্ধি, দুরদৃষ্টি এবং কার্যকারিতা প্রয়োজন। স্প্যানিশ কোচেরা এই সব দায়িত্ব বিদেশিদের সঙ্গে ভারতীয়দের ওপরও দিচ্ছেন এবং তাতেই ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের চেহারা পাল্টে গিয়েছে।":0,"335559740":256}"="">
স্প্যানিশ ফুটবলের অন্য দিক":0,"335559740":256}"="">
লোবেরা ভারতের ক্লাব ফুটবলে ‘সুন্দর খেলা’ এনেছেন। তবে হাবাস দেখিয়েছেন—বল দখল ছাড়াও কী ভাবে মাঠে আধিপত্য বিস্তার করা যায়। তাঁর স্টাইলে ছিল পরিকল্পনা, শৃঙ্খলা ও দ্রত ওঠানামা। এই বাস্তববাদী কৌশলেরই ধারক, বাহক হলেন হুয়ান পেদ্রো বেনালি। ২০২৪-২৫ মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেড পাসিংয়ে সাফল্য কম পাওয়া সত্ত্বেও সবচেয়ে বেশি গোল পাওয়া দলের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল। দ্রুত আক্রমণ, তীব্র প্রেসিং আর সুপরিকল্পিত ভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে তারা। বেনালিও দেখিয়ে দেন, শুধু গোল করা নয়, সাফল্য অর্জনের আরও নানা উপায় আছে। স্প্যানিশ কোচেরা সকলে এমনই বিশ্বাস করেন। ":0,"335559740":256}"="">
গোলের উৎসব":0,"335559740":256}"="">
স্প্যানিশ কোচদের দল মানেই যে গোল ও বিনোদনের পসরা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ২০২২-২৩ মরশুমে ডেস বাকিংহামের মুম্বই সিটি এফসি ছাড়া গত আটটি মরশুমে লিগ পর্বে সর্বোচ্চ গোল করা প্রতিটি দলের কোচ ছিলেন স্প্যানিশ। লোবেরার গোয়া হোক বা মার্কেজের হায়দরাবাদ, গোলের ধারাবাহিকতা ছিল অব্যহত।":0,"335559740":256}"="">
২০১৭-১৮-তে আলবার্ট রোকার বেঙ্গালুরু এফসি ১৮ ম্যাচে ৩৫ গোল করে ৪০ পয়েন্ট অর্জন করে। পরবর্তী সময়ে তাঁর সহকারী কার্লস কুয়াদ্রাত দলের সেই আক্রমণের ধারা এগিয়ে নিয়ে যান। লোবেরার এফসি গোয়া ২০১৭-১৮-তে প্রথম দল হিসেবে লিগ পর্বে ৪০-এরও বেশি গোল করে এবং ২০১৯-২০-তে সেই সংখ্যাটা ৪৬-এ নিয়ে যায়।":0,"335559740":256}"="">
২০২০-২১-এ মুম্বই সিটি এফসি ও হাবাসের মোহনবাগান শিরোপার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। তবে জোড়া ট্রফি জেতে মুম্বই। ২০২১-২২-এ হায়দরাবাদ এফসি-র বারথোলোমিউ ওগবেচে আক্রমণে আগুন ঝরান ও দলকে কাপ জিততে দারুন ভাবে সাহায্য করেন।":0,"335559740":256}"="">
২০২২-২৩-এ হুয়ান ফেরান্দো মরশুমের প্রায় মাঝখানে দায়িত্ব নিয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে কাপ জেতান। পরের মরশুমে হাবাস রক্ষণ নয়, আক্রমণই বেশি করেন— ৪৭ গোল, যা ছিল তাঁর কেরিয়ারে সেরা। ২০২৪-২৫-এ মোলিনা সেই নজির ছুঁয়ে মোহনবাগানকে জোড়া খেতাব জেতান। ":0,"335559740":256}"="">
ভুলে গেলে চলবে না জেরার্ড জোরাগোজার বেঙ্গালুরু এফসি-র কথা। গতবারের ব্যর্থতার (লিগ টেবলে দশম) পর এ বার তিনি দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেন। গত মরশুমের মাঝখানে দলের দায়িত্ব নেওয়া এই কোচের তত্ত্বাবধানে দল এ মরশুমে ৪০ গোল করে, যা ছিল আইএসএলের এক মরশুমে ক্লাবের সবচেয়ে বেশি গোলের নজির। ৪০ বছর বয়সেও সুনীল ছেত্রীকে এমন ভাবে কাজে লাগান তিনি, যার ফলে আইএসএলে এক মরশুমে তাঁর সর্বোচ্চ গোলের নজিরও ছুঁয়ে ফেলেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। ":0,"335559740":256}"="">
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ":0,"335559740":256}"="">
বর্তমানে আইএসএলে সাতজন স্প্যানিশ প্রধান কোচ আছেন:":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="1" data-aria-level="1">হোসে মোলিনা (মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="2" data-aria-level="1">মানোলো মার্কেজ (এফসি গোয়া)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="3" data-aria-level="1">জেরার্ড জারাগোজা (বেঙ্গালুরু এফসি)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="4" data-aria-level="1">সের্খিও লোবেরা (ওডিশা এফসি)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="5" data-aria-level="1">হুয়ান পেদ্রো বেনালি (নর্থইস্ট ইউনাইটেড)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="6" data-aria-level="1">ডেভিড কাতালা (কেরালা ব্লাস্টার্স)":0,"335559740":256}"="">
- ":1,"335559685":720,"335559991":360,"469769226":"symbol","469769242":[8226],"469777803":"left","469777804":"","469777815":"multilevel"}"="" aria-setsize="-1" data-aria-posinset="7" data-aria-level="1">অস্কার ব্রুজোন (ইস্টবেঙ্গল এফসি)":0,"335559740":256}"="">
প্রত্যেকেরই নিজস্ব দর্শন আছে—কেউ বল দখলের ওপর বেশি জোর দেন, কেউ কার্যকারিতাকে বেশি গুরুত্ব দেন। কিন্তু সবার লক্ষ্য একটাই, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামো ও আক্রমণের মনোভাব বজায় রাখো।":0,"335559740":256}"="">
পড়ছে স্থায়ী প্রভাব":0,"335559740":256}"="">
যদি প্রশ্ন করেন, স্প্যানিশ কোচেদের সবচেয়ে বড় সাফল্য কী? তা হলে উত্তরটা অবশ্যই হবে ট্রফি নয়, ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে একটি পরিবর্তন। স্প্যানিশ কোচেরা লিগের কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়েছেন, প্রতিযোগীদের উন্নত হতে বাধ্য করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় খেলোয়াড়দের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন যে তারাও আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ":0,"335559740":256}"="">
আজ ভারতীয়রা রক্ষণ থেকে খেলা শুরু করতে জানে, দ্রুত প্রতিআক্রমণে উঠতে পারে এবং জটিল কৌশলের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। স্প্যানিশ কোচেরা এ দেশের ক্লাব ফুটবলে শুধু স্টাইল নয়, পরিকাঠামো, সাফল্য ও ভরপুর আত্মবিশ্বাস এনেছেন। তাই আপনি যদি ধৈর্যশীল বিল্ড-আপের ফুটবল পছন্দ করেন। যদি বিদ্যুৎ গতির কাউন্টার অ্যাটাক দেখার জন্য ছটফট করেন, তা হলে একটা কথাই সত্যি— স্প্যানিশ কোচ মানেই নিজের চেয়ারে সমানে বসে থেকে খেলা দেখে যাওয়া কঠিন। প্রায়ই উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে আপনাকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়তেই হবে। ":0,"335559740":256}"="">