আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য দীর্ঘ অবকাশের পর শনিবার ফের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অভিযান শুরু করতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। শনিবার যাদের মুখোমুখি হতে চলেছে তারা, সেই চেন্নাইনের সঙ্গে নিজেদের অবস্থার তুলনা করে লাল-হলুদ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত বোঝাতে চাইলেন, তাঁরাও ঠিক জয়ে ফিরবেন। হয়তো এই ম্যাচেই, নয় পরের কোনও ম্যাচে।

চলতি লিগে এ পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতে লাল-হলুদ শিবির এখন লিগ তালিকার দশ নম্বরে। শেষ ম্যাচে তারা ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে। কেরালার দল সেই ম্যাচে জেতে ২-১-এ। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৮৫ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্লেটন সিলভা। যদিও তিনি স্টপেজ টাইমের একেবারে শেষ দিকে ফের পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি গোল শোধ করেন, কিন্তু ততক্ষণে আরও এক গোল খেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলে কলকাতায় যে ১৪টি ম্যাচ খেলেছে তারা। তার মধ্যে ন’টিতেই হেরেছে। এ পর্যন্ত ঘরের মাঠে তারা মাত্র তিনটি জয় পেয়েছে। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে।

শনিবার অবশ্য ঘরের মাঠে ম্যাচ নয় লাল-হলুদ বাহিনীর। চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে নামতে হবে তাদের। প্রায় সপ্তাহ দুয়েকের ছুটিতে দলকে আরও কিছুটা তৈরি করে নিয়েছেন বলে দাবি জানান কোচ কুয়াদ্রাত। কিন্তু এই অনুশীলনের মাঝেই চোট পেয়ে শনিবারের ম্যাচে অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন দলের স্প্যানিশ তারকা বোরহা হেরেরা। শনিবারের ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না কোচ। শুধু বললেন, “বোরহার সমস্যা রয়েছে। তবে ওকে অনুশীলনে দেখতে হবে, তার পরে সিদ্ধান্ত নেব”।

প্রায় দু’সপ্তাহের ছুটিকে কী ভাবে কাজে লাগালেন, তা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের কোচ বলেন, “এই সময়টাকে আমরা ভাল ভাবে কাজে লাগিয়েছি। অন্য দলগুলোর চেয়েও বেশি। দলকে আরও শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করেছি। গত ম্যাচের ফল হতাশাজনক হয়েছিল। আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। গত দুই ম্যাচে আমরা অযথা গোল খেয়েছি, যার ফলে পয়েন্ট খোয়াতে হয়েছে। এই ম্যাচে আমরা (লালচুঙ) নুঙ্গাকে পাব। কয়েকদিন আগেই ওর জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে। মহেশও যোগ দিয়েছে। বাকিরা সবাই মিলে আমরা পরিশ্রম করেছি। আই লিগ দলের বিরুদ্ধে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচও খেলেছি। আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে, একটা নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি আমরা। নতুন কম্বিনেশন তৈরি করা শুরু করেছি। দলটাকে একটা ভাল জায়গায় পৌঁছতে কিছুটা সময় তো দিতেই হবে। তবে এই কদিনের প্রস্তুতিতে আমি খুশি। আশা করি পরের ম্যাচে সাফল্য আসবে”।

অতীতে বেঙ্গালুরু এফসি-কে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করা কোচ ইস্টবেঙ্গলের লড়াইয়ে ফেরা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “আগেও বলেছি, অজুহাত খোঁজা আমাদের কাজ নয়। ফল পাওয়ার জন্য কাজ করব। মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপে আমরা ভাল খেলেছি। ড্র দিয়ে শুরু করে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ভাল জয় পেয়েছিলাম। তখন আমরা টানা চারটে ম্যাচে জিতেছিলাম। দলের মধ্যে সেই গতিশীলতা ছিল, কিন্তু একটা হারেই সেটা নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের সেই গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে”।

এই প্রসঙ্গে তিনি চেন্নাইনের উদাহরণ টেনে এনে বলেন, “চেন্নাইনের দিকে যদি দেখেন, ওরাও কিন্তু হার দিয়েই শুরু করেছিল। টানা কয়েকটা ম্যাচ হারার পর দলের গতিশীলতায় পরিবর্তন আনে এবং টানা দুটো ম্যাচ জিতে ছ’পয়েন্ট অর্জন করে। এ রকম সব দলের ক্ষেত্রেই ঘটে। দল যখন ছন্দে থাকে না, তখন পরপর দুবার পেনাল্টিও মিস হয়, যেমন আমাদের গত ম্যাচে হয়েছে। এই ভুলগুলো আমরা শোধরানোর চেষ্টা করছি। দলকে আমরা সবাই ভালবাসি। এখন আমাদের কাজ ছন্দে ফেরা। মানসিক ভাবেও নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। তা হলে আবার পয়েন্ট আসবে”।

গত তিনটি ম্যাচে পরপর হারলেও কুয়াদ্রাত মানতে রাজি নন যে, তাঁর দল খারাপ খেলছে। তাঁর দাবি, “আমরা বিভিন্ন সিস্টেম ও কৌশল কার্যকর করে দেখছি, কোনটা কোন ম্যাচে আমাদের পক্ষে ভাল হতে পারে। তাই বিভিন্ন ম্যাচে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। এফসি গোয়া, বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে আমরাই ভাল খেলেছি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৫০-৫০ ছিল। পেনাল্টি থেকে গোলটা করতে পারলে ফল ১-১ হত। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা না করতে পারলে পয়েন্ট আসবে কী করে”?

সমর্থকদের সাফল্যে ফেরার আশ্বাস দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “আমার মনে হয়, যখন আমরা পয়েন্ট পেতে শুরু করব, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি চিন্তিত নই, কারণ, অনুশীলনে দেখেছি আমরা কী করতে পারি, কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি। আমি দলের ছেলেদের কাছে কী চাই, তা ওরা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছে। তাই আমার ধারণা, আমরা জয়ে ফিরব, হয়তো পরের ম্যাচেই অথবা তার পরের ম্যাচে। একবার সব ঠিক হতে শুরু করলে, তা হতেই থাকবে”।

শনিবার তাঁদের প্রতিপক্ষ চেন্নাইন, যারা ছয় ম্যাচে দুটি জয় নিয়ে ছয় পয়েন্ট পেয়ে লিগ তালিকার সাত নম্বরে রয়েছে। শুরুতে তিনটি ম্যাচে পরপর হেরে টানা দুটি ম্যাচে জেতে তারা। গত ম্যাচে অবশ্য ফের হেরেছে স্কটিশ কোচ আওয়েন কোইলের দল। কোইলের প্রশংসা করে কুয়াদ্রাত বলেন, “যখনই উনি চেন্নাইনে কাজ করেছেন, তার সুপ্রভাব দলের ওপর পড়েছে। দলটাকে ফাইনালে তোলার পরেই উনি জামশেদপুরে চলে যান এবং সম্পুর্ণ নতুন একটা প্রকল্প হাতে নেন। গোটা দলটাকে দারুন ভাবে তৈরি করে নেন। প্রথম মরশুমে প্লে অফে উঠতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয় মরশুমে দারুন খেলেছে ওঁর দল। এখন আবার উনি চেন্নাইনে এসে আবার নতুন প্রকল্পে কাজ শুরু করেছেন। কাজটা যে মোটেই সোজা নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। নতুন দল নিয়ে কোইল প্রথম তিনটে ম্যাচেই হারেন। পরের দুটো ম্যাচে ওরা জেতে। শেষ ম্যাচে গোয়ার কাছে হেরেছে”।

চেন্নাইনের মতো অবস্থা এখন তাঁদেরও বলে মনে করেন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ। তিনি বলেন, “ওদের মতো মরশুমের শুরুতে আমরাও ধারাবাহিকতা পাওয়ার চেষ্টা করছি। তাই আমাদের এই দুই দল যখন মুখোমুখি হবে, তখন লড়াইটা বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। চেন্নাইন সম্পর্কে যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। কারণ, ওরা বরাবরই শক্তিশালী দল। কোচ কোইলকেও আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। কারণ, উনি দেখিয়ে দিয়েছেন একটা টিমকে কী ভাবে গড়ে তুলতে হয়”।

সদ্য ভারতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলে আসা ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় দলের হয়ে বেশিক্ষণ খেলার সুযোগ পাইনি আমি। তাই ওই স্তরের প্রতিযোগিতা ঠিক কী রকম, তা ঠিক বলতে পারব না। তবে যে অনুশীলন ওখানে করেছি এবং যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, তা আইএসএলে আমার খুব কাজে লাগবে”।
জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে চুঙনুঙ্গা বলেন, “গত মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আমি নিয়মিত প্রথম এগারোয় খেলার সুযোগ পেয়েছি বলেই জাতীয় দলে ডাক পাই। কোচ আমাকে প্রতিদিন উৎসাহ দেন, যাতে আমি রোজ আরও উন্নতি করতে পারি। উনি খুব কড়া কোচ। আমি নিশ্চিত, উনি দায়িত্বে থাকায় আমরা লাভবান হব”।