চলতি মরশুমে আর কোনও আশা নেই তাদের। এখন শুধুই সন্মানের জন্য লড়াই করা। তবে পরবর্তী মরশুমে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে এর চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে চান তাদের ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। এখন থেকেই সেই লক্ষ্যে এগোনো শুরু করে দিয়েছেন বলে জানিয়ে রাখলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার গোয়ায় সেখানকার দলের বিরুদ্ধে তাদের ফিরতি লিগের ম্যাচ। প্রথম লিগে ঘরের মাঠে শেষ মুহূর্তে এডু বেদিয়ার ফ্রি কিক থেকে করা এক অভাবনীয় গোলে ম্যাচ হেরে গিয়েছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এ বার সেই হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ তাদের সামনে। কিন্তু বদলা নেওয়ার মতো অবস্থাতে নেই বললেই চলে। চলতি হিরো আইএসএলে গত ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হারা লাল-হলুদ বাহিনীর পক্ষে এখন অঘটন ঘটানো বেশ কঠিন। 

বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে স্টিফেন কনস্টান্টাইনের গলাতেও তেমন আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেল না। বললেন, “গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম লিগের ম্যাচে শেষ মিনিটে এক ফ্রি কিক থেকে হাস্যকর ভাবে গোল খেয়ে হেরেছিলাম আমরা। জেতা ম্যাচটা হেরেছিলাম। এরকম অনেক ম্যাচেই আমরা জেতার জায়গায় গিয়েও জিততে পারিনি। ছেলেরা ম্যাচে, অনুশীলনে সব উজাড় করে দিয়েছে। তাদের দোষ দেওয়ার কোনও জায়গাই নেই। কিন্তু প্রাক মরশুম প্রস্তুতির অভাব, হায়দরাবাদ, এটিকে মোহনবাগান, মুম্বইয়ের মতো ধারাবাহিকতার অভাবে আমরা এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি”।

ক্লাবের প্রশাসনিক সমস্যায় আটকে রয়েছে জানুয়ারির দলবদলে নতুন খেলোয়াড় নেওয়ার রাস্তা। সেই প্রসঙ্গ তুলে কোচ বলেন, “ক্লাব একসঙ্গে তিন-চারজন নতুন খেলোয়াড়কে নিতে চায় না, যাতে দলের মধ্যে কোনও সমস্যা না হয়। এমনকী যাকে দরকার, তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। যা খুবই হতাশাজনক। মরশুমের শেষ দিকে যদি কতগুলো ভাল ফল পাওয়া যায়, তা হলে ভাল। পরের মরশুমের জন্য দল গড়ছি আমরা। আশা করি, চলতি মরশুমে এর চেয়ে ভাল জায়গায় থেকে শেষ করতে পারব। পরের মরশুমে আমাদের দলকে একেবারে অন্য চেহারায় দেখতে পাবেন। সেই দলের ধারাবাহিকতা থাকবে”।

এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম লিগের ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ম্যাচে তা কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন না লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “ওই ম্যাচটা সম্ভবত আমাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ম্যাচ ছিল। তার পরে আরও ১১-১২টা ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। ওরাও ১৫টা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। ওরা অনেক উন্নতি করেছে, নিজেদের অনেকে বদলেছে, সেরা ছয়ে থাকার জন্য অনেক লড়াই করেছে। আমরা এখন সন্মান রক্ষার জন্য লড়ছি। ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই কঠিন হবে। যদিও সব ম্যাচই কঠিন। তবে আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামি, হারার জন্য নয়। এই ম্যাচেও জয়ের উদ্দেশ্য নিয়েই নামব”। 

গত ম্যাচে যে তাদের পারফরম্যান্স ভাল হয়নি, তা স্বীকার করে নিয়ে কনস্টান্টাইন বলেন, “আমাদের পারফরম্যান্সে আগ্রাসন ছিল না। আমাদের যে রকম খেলা উচিত ছিল, তা আমরা পারিনি। আমাদের ধারাবাহিকতা নেই। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা যে দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলেছি, তারা সবাই আমাদের চেয়ে ভাল। তবু আমরা ভাল খেলেছি। লড়াই করেছি”।    

দল টানা ব্যর্থ হলেও দলের ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা সমানে গোল করে চলেছেন। এ পর্যন্ত মোট ন’টি গোল করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যুগ্মভাবে শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ক্লেটনের ওপর দল যে খুব বেশি রকম নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তা স্বীকার করে নিয়ে স্টিফেন বলেন, “ক্লেটনের কাজই হল গোল করা। এর জন্য ও মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পায়। কিন্তু ওকে সাহায্য করার জন্য আমি আর একজন ফুটবলারকে সই করাতে চেয়েছিলাম। ক্লেটন মাঠে ও মাঠের বাইরেও অসাধারণ। আশা করি, ও আমাদের সঙ্গে থাকবে। হ্যাঁ, ওর ওপর আমরা বেশিই নির্ভর করি। তবু ও কিন্তু গোল করেই চলেছে। ন’টা গোল করে ও সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। গত ম্যাচেই ওর গোলের সংখ্যা ১০-১১ হয়ে যেত। তিন পয়েন্টও এনে দিতে পারত দলকে। কিন্তু সেই ম্যাচে ও ভাল খেলতে পারেনি”।

সিনিয়র ডিফেন্ডার ইভান গঞ্জালেসকে নিয়েও যে খুশি ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ, তাও তাঁর কথা শুনে মনে হল না। বলেন, “আসলে ইভান যখন এফসি গোয়ায় খেলত, তখন দলটা ছিল বেশ গোছানো। তখন জৈব সুরক্ষা বলয়ে খেলা হত। গ্যালারিতে সমর্থকেরা থাকত না। কোনও চাপ ছিল না। হোটেলবন্দী হয়ে থাকাটা খুবই কষ্টকর, সেটা মানছি। তবে ইস্টবেঙ্গলে এসে সমর্থকদের সামনে, বিভিন্ন শহরে এত লম্বা লম্বা সফর করে চাপটা বেড়ে গিয়েছে। তবে প্রথম দিকে ও ভালই খেলছিল। ভুল সবাই করে, ইভানও করেছে। ভুল থেকেই আমরা শিক্ষা নিই। কিন্তু একই ভুল বারবার করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। তবে ও খারাপ নয়। ও যদি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলে, তা হলে ও দিনের সেরা”।   

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন গোলকিপার কমলজিৎ সিং-ও যিনি এ পর্যন্ত ৩৭টি সেভ করে দলকে বহু ম্যাচে হারের মুখ থেকে একা হাতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, “এই প্রথম আমরা দল হিসেবে একসঙ্গে খেলছি। সব কিছুই সময়সাপেক্ষ। আমরা ইতিবাচক ফল পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করছি। দেখা যাক মরশুমের শেষে আমরা কোথায় পৌঁছতে পারি। মাঠে যথেষ্ট পরিশ্রম করছি। মাঠের বাইরে কোচও অসাধারণ কাজ করছেন। এটা একটা প্রক্রিয়া। সময় তো লাগবেই”।

গত ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে হার নিয়ে কমলজিৎ বলেন, “দ্বিতীয় গোল খাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা খুব ভাল ফুটবল খেলেছি। আমরা লড়াকু। মাঠে নিজেদের উজাড় করে দিই। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেও আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব। চেষ্টা করব যাতে একটা ইতিবাচক ফল পেতে পারি”।