ডার্বি জিতে খুশি হোসে মোলিনা, দলের লড়াইয়ে গর্বিত অস্কার ব্রুজোন
‘আজ হয়তো আমাদের সেরা দিন ছিল না, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আরও তিন পয়েন্ট টেবলে যোগ হল। আমাদের মূল লক্ষ্য তো শিল্ড জেতা’।

শনিবার আইএসএলের ফিরতি মোহন-ইস্ট ডার্বিতে তাঁর দল যা খেলেছে, তাতে যে খুব খুশি মোহনবাগান এসজি-র কোচ হোসে মোলিনা, তা তাঁর কথা শুনে মনে হওয়ার কোনও উপায় নেই। এ দিন গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তাদের ১-০-য় জয়কে সঠিক ফলাফলই বলছেন সবুজ-মেরুন কোচ। ম্যাচের দু’মিনিটের মাথায় এই গোলটি করেন তাদের অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন।
ম্যাচের পর সাংবাদিকদের মোলিনা বলেন, “আমার মনে হয়, ঠিক ফলই হয়েছে। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। ভাল ফল পেতে হলে তো গোল করতে হয়। আমরা আরও গোল করার মতো জায়গায় ছিলাম না। তবে আমরা খুশি। কারণ, আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি। খুব গুরুত্বপূর্ণ তিনটে পয়েন্ট। যদি আরও গোল করতে পারতাম, তবে হয়তো আরও বেশি খুশি হতাম। কারণ সুযোগ ছিল। আজ হয়তো আমাদের সেরা দিন ছিল না, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আরও তিন পয়েন্ট টেবলে যোগ হল। আমাদের মূল লক্ষ্য তো শিল্ড জেতা। তার আরও কাছে পৌঁছলাম”।
দলের পারফরম্যান্স সম্পর্কে মোলিনা বলেন, “যখন ইস্টবেঙ্গল এফসি লাল কার্ড দেখে, তার পর থেকেই আমরা খারাপ খেলতে শুরু করি। একজন বাড়তি খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও আমাদের পারফরম্যান্সের স্তর নেমে যায় এবং আমরা ভাল খেলতে পারিনি। তবুও, আমাদের কিছু কাউন্টার-অ্যাটাক এবং ভাল কিছু সুযোগ ছিল, যেখানে আমরা আরও গোল করতে পারতাম, তবে ফাইনাল থার্ডে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি আমরা। শেষ দিকে আমরা কিছুটা চাপে পড়ে যাই, কারণ ওরা বক্সে ক্রস দিচ্ছিল। তবে আমাদের দুই সেন্টার-ব্যাক, ফুল-ব্যাক এবং গোলকিপার চমৎকার খেলেছে। সত্যি বলতে, ইস্টবেঙ্গল গোল করার বা ম্যাচ ড্র করার তেমন বড় সুযোগ পায়নি। এই ব্যাপারটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি”।
আইএসএলে দশ নম্বর ডার্বি হয়ে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত প্রথম জয়ের সন্ধান পেল না ইস্টবেঙ্গল। তা সত্ত্বেও শনিবারের ম্যাচে দলের লড়াই নিয়ে খুশি ও গর্বিত তাদের কোচ অস্কার ব্রুজোন। তিনি বলেন, “আজ আমাদের ম্যাচের পরিকল্পনা প্রায় নিখুঁতভাবে কাজ করেছে। তবে শেষেরটুকু বাদে, যখন খেলা ওপেন হয়ে যায়। আমরা ওদের প্রত্যেক জায়গায় আটকেছি। সমস্ত ফাঁকা জায়গাগুলো বন্ধ করতে পেরেছি, বিশেষত উইংয়ে, যা মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসোদের কাজ কঠিন করে তোলে। তিন সেন্টার-ব্যাক ও তিন মিডফিল্ডার নিয়েও মাঝমাঠে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি মোহনবাগান। বড় কোনও সুযোগও ওরা তৈরি করতে পারেনি। তাই আমি আবারও বলছি, আমরা সঠিক পথ ধরেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি”।
দলের খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে অস্কার বলেন, “যে ফল হয়েছে, তা প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু আমাদের দলের ছেলেদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতেই হবে। তারা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে এবং ১০ জন নিয়ে খেলার পরও আমরা সুযোগ তৈরি করেছি, বিশেষত শেষ দিকে সেট-পিস থেকে। আগেও বলেছি, যখন আমরা জিতি, আমরা একসঙ্গে জিতি। যখন হারি, একসঙ্গেই হারি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভুল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়, কারণ আমরা এর সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না এবং একই ভুল বারবার করছি। আজ সেই একই ভুল হয়েছে, যা আমাদের মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে হারিয়েছে”।
নন্দকুমারকে বেঞ্চে রেখে ডেভিড লালনসাঙ্গাকে শুরু থেকে খেলানো নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অস্কার বলেন, “ডেভিড আজ দুর্দান্ত খেলেছে। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। ও মোহনবাগানের সেন্টার-ব্যাকদের চাপে ফেলে দেয় এবং ক্লেটন ও জিকসনকে মাঝমাঠেও সাহায্য করে। তাই, প্রথম একাদশ এবং সিস্টেম নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিকই ছিল বলে মনে হয়”।
লাল-হলুদ কোচ মনে করেন, “শেষ পনেরো মিনিটে, দশজন নিয়েও আমরা মাঠে সেরা দল ছিলাম এবং গোল করতে পারতাম। আমরা ঝুঁকি নিই এবং শেষ ১৫ মিনিটে যে কোনও দলই গোল করে দিতে পারত। মোহনবাগানও তখন দু-তিনটে বিপজ্জনক কাউন্টার-অ্যাটাক করেছিল। আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করেছি এবং শেষ পর্যন্ত যে গোল করতে পারিনি, এটাই খারাপ”।
হোম ম্যাচ হলেও নিজেদের শহরের সমর্থকদের সঙ্গে না পেয়ে হতাশ মোহনবাগান কোচ মোলিনা বলেন, “সমর্থকদের খুব মিস করেছি। কলকাতায় প্রথম ডার্বির পরিবেশ ছিল অবিশ্বাস্য। সেই পরিবেশের প্রভাবও খেলোয়াড়দের ওপর দারুন ভাবে পড়েছিল। খালি স্টেডিয়ামে খেলা কখনওই একই রকম হয় না। খুব বেশি সমর্থক ছিল না। আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম, কলকাতায় বসে অনেক মানুষ আমাদের সমর্থন করছে। তাদের জন্য আমাদের জিততেই হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের কাজ করতে পেরেছি। আশা করি, তারা এই জয় উপভোগ করেছে। পরের ম্যাচে তাদের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় আছি”।