ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনাল: ফুটবলপ্রেমীদের দুই শহরে দুই জমজমাট ম্যাচের অপেক্ষা
দুই ম্যাচেই হতে চলেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দুই ফুটবল পাগল শহরের মানুষও তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে সেমিফাইনালের দুই লড়াই দেখার জন্য।

একদিকে নর্থইস্ট ডার্বি, অন্যদিকে কলকাতার দুই অন্যতম সেরা ক্লাবের দ্বৈরথ। ১৩৪তম ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালে ফুটবল যুদ্ধের উত্তেজনা উঠতে চলেছে চরমে। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বেও যে ভাবে ফুটবলপ্রেমীরা ভরপুর আনন্দ পেয়েছেন, সেমিফাইনালেও তেমনই আনন্দ পাওয়ার সম্ভাবনা ভরপুর।
মঙ্গলবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে শিলং লাজং এফসি এবং গতবারের চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। পরের দিন, বুধবার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হবে সদ্য কলকাতা ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবকে হারিয়ে আসা ইস্টবেঙ্গল এফসি এবং জামশেদপুরের মাঠে তাদের হারিয়ে আসা নবাগত ডায়মন্ড হারবার এফসি। দুই ম্যাচেই হতে চলেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দুই ফুটবল পাগল শহরের মানুষও তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে ফাইনালে ওঠার এই দুই লড়াই দেখার জন্য।
সেমিফাইনাল ১- শিলং লাজং এফসি বনাম নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, ১৯ অগাস্ট, শিলং, সন্ধ্যা ৭.০০
দুই ক্লাবই একই গ্রুপ থেকে উঠে এসেছে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসিএবং শিলং লাজং এফসি ‘ই’ গ্রুপের এক ও দু’নম্বর দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। দুই দলই দু’টি করে ম্যাচ জেতে। নর্থইস্ট যেহেতু অপর ম্যাচে ড্র করে এবং শিলং লাজং এফসি তাদের কাছে হেরে যায়, তাই এক পয়েন্ট বেশি পেয়ে এক নম্বর দল হিসেবে নক আউট পর্বে পা রাখে আলাদিন আজারেইরা।
তবে গ্রুপ পর্বে নর্থইস্টের চেয়ে বেশি গোল করে শিলং। তিন ম্যাচে যেখানে দশ গোল করে তারা, সেখানে নর্থইস্ট ইউনাইটেড সাত গোল করে। শিলং লাজং মালয়েশিয়ান আর্মড ফোর্সকে ৬-০-য় হারায় এবং রাঙদাজিদ ইউনাইটেডকে ৩-১-এ হারায়। নর্থইস্টের কাছে তারা ১-২-এ হেরে যায়। অন্যদিকে নর্থইস্ট মালয়েশিয়ার দলকে ৩-১-এ ও রাঙদাজিদের সঙ্গে ২-২ ড্র করে। কোয়ার্টার ফাইনালে নর্থইস্ট বোড়োল্যান্ড এফসি-কে হারায় ৪-০-য়। আজারেই একাই দু’গোল করেন। অন্যদিকে, কোয়ার্টার ফাইনালে শিলং ২-১-এ হারায় ইন্ডিয়ান নেভি বা নৌসেনার দলকে।
মঙ্গলবারের ম্যাচে সবার নজর থাকবে একজনের দিকেই, তিনি মরক্কোর ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই। গত আইএসএল মাতানোর পরে এ বার ডুরান্ড কাপেও তাঁর জাদুতে মাতিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে। এ পর্যন্ত চারটি ম্যাচে সাত গোল করেছেন তিনি। একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন। আইএসএলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তিনি। তাঁকে রোখাই হবে শিলং লাজং এফসি-র ডিফেন্ডারদের অন্যতম প্রধান কাজ।
সেমিফাইনাল ২- ডায়মন্ড হারবার এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি, ২০ অগাস্ট, কলকাতা, সন্ধ্যা ৭.০০
কলকাতার ফুটবলের নবাগত প্রধান শক্তি, যারা এ বারেই আই লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, সেই ডায়মন্ড হারবার এফসি-ই হয়ে উঠতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ডুরান্ড ফাইনালে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এ বার টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলে আসছে দুই দলই। তাই বুধবার এদের মধ্যে লড়াই রীতিমতো জমে উঠবে।
চলতি টুর্নামেন্টে ইস্টবেঙ্গল এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হারেনি। তার ওপর চার ম্যাচে ১৪ গোল করেছে তারা। গ্রুপ পর্বে বেঙ্গালুরুর সাউথ ইউনাইটেডকে ৫-০-য় ও এয়ার ফোর্সকে ৬-১-এ হারায় তারা। লাল-হলুদ বাহিনীর মতো অপরাজিত না হলেও ডায়মন্ড হারবার এফসি-ও বেশ বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে শেষ আটে পৌঁছয়। বিএসএফ-কে তারা হারায় ৮-১-এর ব্যবধানে। মহমেডান এসসি-কেও ২-১-এ হারায়। তবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ৫-১-এ হেরে যায়।
গ্রুপে দু’নম্বরে ছিল তারা, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পরে। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলগুলির মধ্যে সেরা দুইয়ে থাকার ফলে শেষ আটে জায়গা পাকা করে ফেলে তারা। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে রুয়াতকিমার জোড়া গোলে ইস্পাতনগরীর দলকে হারিয়ে শেষ আটে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হতে চলেছে তারা, যা এক কঠিন পরীক্ষা।
ইস্টবেঙ্গলের পক্ষেও এই পরীক্ষা সোজা হবে না। লুকা মাজেন-এর মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ খেলোয়াড় রয়েছে যে দলে, তাদের বিরুদ্ধে জেতা মোটেই সোজা হবে না। তবে সদ্য মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো দলকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠায় আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে তারা। তাই এই ম্যাচে এগিয়ে থাকবে লাল-হলুদ ব্রিগেডই।