বছরের শেষে ঘরের মাঠে প্রথম জয় পেয়ে আনন্দে প্রায় আত্মহারা ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। দলের ছেলেদের চেষ্টা তাঁকে মুগ্ধ করেছে বলে সাংবাদিকদের জানালেন তিনি। বছরের শেষে এমন একটা ‘রিচার্জ’ পেয়ে যাওয়ার পর এ বার তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী, আসন্ন দ্বিতীয় লেগে নিজেদের আরও ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন, যা হিরো আইএসএলের ইতিহাসে হবে ক্লাবের সেরা ফল। অন্য দিকে, কিংবদন্তি পেলের মৃত্যুদিনে দু’টি অসাধারণ গোল করতে পেরে যেমন খুশি ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা, তেমনই তিনি মনে করেন, এই জয়ের পরে দলের ছেলেরা আরও আত্মবিশ্বাস পাবে ও ভাল খেলবে।

শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে জয় পেলেন আপনারা। কী বলবেন?

স্টিফেন: প্রথমত, দলের ছেলেদের অভিনন্দন জানাতে চাই তাদের ৯০ মিনিট ধরে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য। গত দশটি ম্যাচেও ওরা একই কাজ করেছে। কিন্তু ফল পায়নি। আজ দলের সাপোর্ট স্টাফ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা পর্যন্ত সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। সমর্থকদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, পাশে থাকার জন্য। এখন আমাদের পয়েন্ট ১২। এ বার আমাদের পরের ম্যাচের দিকে এগোতে হবে।

আপনার কি মনে হয় না, ক্লেটন সিলভা ও নাওরেম মহেশের ওপর আপনারা একটু বেশিই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। দলে তো অন্যান্য ফুটবলাররাও আছেন।

স্টিফেন: সে জন্যই তো ওকে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় (হাসি)। সারা মরশুমে যদি দশটা গোলের জন্যও ওর ওপর নির্ভর করতে হয়, তা হলে তা করতে রাজি আছি। মানসিকতাই একজন পেশাদার ফুটবলকে সাফল্য এনে দেয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৌড় শেষ করেনি ও। পেলের জীবনাবসানের দিনে ওর এই গোল এক জন ব্রাজিলীয় হিসেবে যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য। সে জন্য ওকে ধন্যবাদ।

আপনার জোড়া গোল কি প্রয়াত কিংবদন্তি পেলেকে উৎসর্গ করতে চান?

ক্লেটন: অবশ্যই। ম্যাচের আগে সুহেরকে বলেছিলাম, আজ গোল করতে পারলে ‘৭০-এ পেলে যে ভাবে সেলিব্রেট করেছিলেন, সে ভাবেই করব। আমার মনে হয়, পেলের কখনও মৃত্যু হতে পারে না। উনি চিরকাল আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন।

আপনার কি মনে হয়, আজকের ম্যাচে আপনাদের ভুল কম হওয়ায় এই সাফল্য এল?

ক্লেটন: ফুটবলে ভুলভ্রান্তি হয়ই। যত কম ভুল করব আমরা, তত তিন পয়েন্ট করে পাব আমরা। এখনও কিছু সমস্যার সমাধান করা বাকি আছে। তবে আমরা পরিশ্রম করেছি। ম্যাচের শেষ দিকেও আমরা একাধিক সুযোগ তৈরি করেছি। শেষ দশ মিনিটে তো দু-তিনটে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। নিজেদের প্রতি আস্থা আছে আমাদের। আমরা ভাল দল। এখনও বিশ্বাস করি, আমরা সেরা ছয়ের মধ্যে থাকতে পারি।

স্টিফেন: আমি এর সঙ্গে যোগ করতে চাই যে, যখন বেঙ্গালুরু সমতা আনল, আমি ভেবেছিলাম, আগের ম্যাচগুলির মত না দলের ছেলেরা নেতিয়ে পড়ে। কিন্তু দেখলাম, তার পরেও ওরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ফোকাস বজায় রেখেছে এবং শেষ মুহূর্তে যে ফ্রিকিকে গোল হল, তা অবিশ্বাস্য।

ক্লেটন, শেষ মুহূর্তে ওই ফ্রিকিক নেওয়ার সময় আপনার মাথায় ঠিক কী চলছিল, যদি বলেন।

ক্লেটন: আমি ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি। এর আগেও ফ্রি কিক থেকে গোল করেছি আমি। ডুরান্ড কাপেও ফ্রি কিক থেকে গোল পেয়েছি। যখনই ফ্রি কিক মারতে যাই, আমি ইতিবাচক থাকি।

প্রাক্তন দল বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে গোল করা কি পছন্দ করেন আপনি? প্রথম লিগের ম্যাচেও ওদের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন।

ক্লেটন: সুযোগ পেলেই গোল করি। বিপক্ষে কে রয়েছে, তা দেখিনা কখনও।

এখন পর্যন্ত এ বারের হিরো আইএসএলেই ইস্টবেঙ্গল সবচেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। পরবর্তী দু’মাসে যে ন’টি ম্যাচ খেলবেন আপনারা, সেই সময়টাকে কী ভাবে দেখছেন?

স্টিফেন: মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে ১৪ দিন ফাঁকা পেয়েছিলাম আমরা। এই সময়টা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে আমার। আমি চাই পরপর ম্যাচ খেলি আমরা। মাঝে কয়েকটা দিন প্রস্তুতি নিই, আবার মাঠে নামি। এ ভাবেই যথাসম্ভব বেশি ম্যাচ জিততে চাই।

এই প্রথম ঘরের মাঠে জিতলেন আপনারা। সমর্থকদেরও উল্লসিত হতে দেখলেন, কেমন লাগল?

ক্লেটন: খুবই ভাল লেগেছে সমর্থকদের দেখে। অনেক সমর্থক মাঠে ছিলেন আজ। ম্যাচের পরেও ওরা আমাদের যে ভাবে সন্মান প্রদর্শন করেছেন. তা সত্যিই অসাধারণ।

স্টিফেন: আমি তো আওয়াজ শুনে ভেবেছিলাম, আজ মাঠে হাজার ষাটেক লোক হবে কিন্তু পরে শুনলাম সংখ্যটা মাত্র ন’হাজার। কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় গোলের পর আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ রয়েছে গ্যালারিতে।