সমর্থকেরাই মনে করায়, আমাদের ক্লাব সাধারণ নয়: অনিরুদ্ধ থাপা
‘তখন প্রত্যেকে আলাদাভাবে অনুভব করেছিল, ‘এটা আমাদের আসল খেলা না, এর চেয়েও ভাল খেলতে পারি আমরা’। সেখান থেকেই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করি’।

দলগত সংহতি এবং কঠোর সংগ্রামের কারণেই যে প্রথমবার তাঁদের পক্ষে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে জোড়া খেতাব জয় সম্ভব হয়েছে, এই ব্যাপারে একমত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা ফুটবলার অনিরুদ্ধ থাপা। এই কৃতিত্বের দাবিদার যে ক্লাবের সমর্থকেরাও, তাও মানতে দ্বিধা নেই তাঁর।
২০২৪-২৫ মরশুমে দুর্দান্ত ও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৫৬ পয়েন্ট অর্জন করে লিগ শিল্ড এবং কাপ দুটোই জয় করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। পাশাপাশি একই মরশুমে সর্বোচ্চ ১৬টি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখে তারা, যা আইএসএল ইতিহাসে এক অনন্য নজির।
তবে এই জোড়া সাফল্যের অভিযান যতটা সহজে হয়েছে বলে অনেকের মনে হয়েছে, বাস্তবে তা নয় বলেই জানান থাপা। ডুরান্ড কাপ ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির বিপক্ষে পেনাল্টিতে হতাশাজনক হারের পর আইএসএল মরশুমের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসির কাছে ০-৩ ব্যবধানে পরাজয়— এমন শুরুর পর মোহনবাগানকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে গতি ফিরিয়ে আনতে।
লড়াইয়ের সেই গল্পই সম্প্রতি শুনিয়েছেন মাঝমাঠের তারকা অনিরুদ্ধ থাপা। “আমি যে প্রথম বড় মুহূর্তটি মনে করতে পারছি, তা হল, ডুরান্ড কাপের ফাইনাল। কারণ, আমরা ভাল খেলে ফাইনালে উঠেছিলাম। ফাইনালেও আমরা ভাল খেলেছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পেনাল্টিতে হেরে যাই,” সম্প্রতি এমবিএসজি টিভি-কে তিনি এই কথা বলেন।
আইএসএলের শুরুতেও ছন্দে ফিরতে না পারা নিয়ে তিনি বলেন, “মরশুম ফের শুরু হলে কিছুটা ধীর গতিতে এগোই আমরা— কয়েকটা ড্র, একটা জয়। তার পর বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে হার। তখনই বোধহয় আমরা সবাই একসাথে বুঝেছিলাম, এই অনুভূতি যেন আর ফিরে না আসে। তখন প্রত্যেকে আলাদাভাবে অনুভব করেছিল, ‘এটা আমাদের আসল খেলা না, এর চেয়েও ভাল খেলতে পারি আমরা’। সেখান থেকেই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করি, জিততে শুরু করি এবং ক্লিন শিটও রাখতে শুরু করি। রেকর্ডও ভাঙতে লাগলাম — একটার পর একটা চলতেই থাকল”।
সেই পরাজয়ের পর মেরিনার্সরা টানা আটটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল, যার মধ্যে সাতটিতে জয় পায় হোসে মোলিনার দল। তবে গোয়ায় গিয়ে তাদের সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে — যা ছিল তাদের আর একটি বাস্তব শিক্ষা।
সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে থাপা জানান, “এফসি গোয়ার বিপক্ষে হেরে যাই আমরা। তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট — প্রথমে শিল্ড জয়, তার পর কাপ, যেটা আমরা গতবার করতে পারিনি। ওই সময় আমাদের দল আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, আমাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। কারণ, তখন সব খেলোয়াড়ের মানসিকতাই দৃঢ় হয়ে উঠেছিল”।
উত্তরাখণ্ড থেকে উঠে আসা এই তারকা মিডফিল্ডার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করতে ভোলেননি। সমর্থকদের কথা। সেই কঠিন সময়ে সমর্থকদের উপস্থিতি ও উৎসাহ দলের পক্ষে টনিকের মতো কাজ দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সমর্থক গোষ্ঠী ছোটখাটো নয়, ১০০ বছরের পুরনো, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এর ইতিহাস। আর সমর্থকেরাই খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেন। তাঁরাই আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, এটা কোনও সাধারণ ক্লাব নয়”।
সমর্থকদের প্রসঙ্গে থাপা আরও বলেন, “যখন সমর্থকেরা প্রতিটি ম্যাচে হাজির হন, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন, সমর্থন করেন, তখন একটা শক্তি তৈরি হয়। এর একটা বিশেষ আবহ আছে। তাঁরা যে পরিবেশ তৈরি করেন, তাতে খেলাটা অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে”।
তবে এই বেনজির সমর্থনের সঙ্গে সঙ্গে আসে অত্যাধিক প্রত্যাশাও, যা খেলোয়াড়দের যথেষ্ট চাপে ফেলে দেয়। ঠিক তখনই দলের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা কাজে আসে। গত মরশুমে এই অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সঠিক মিশ্রণেই হোসে মোলিনা’র দল খুঁজে পেয়েছিল সঠিক ভারসাম্য, যা তাদের জোড়া সাফল্য এনে দিতে সাহায্য করে।
দলের সতীর্থদের কৃতিত্ব দিয়ে থাপা বলেন, “আমাদের খেলোয়াড়রা খুবই নম্র, সে বিদেশি হোক বা ভারতীয়, জুনিয়র হোক বা সিনিয়র। সবাই জানে আমরা এখানে কেন এসেছি — ফুটবল খেলতে। তাই কারও মধ্যে অহংকার বা ‘আমি অনেক বড় খেলোয়াড়’ ধরনের মানসিকতা নেই। বিদেশিরাও বড় বড় ক্লাব থেকে এসেছে এবং তাদের অনেক বছরের অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যখন তারা ড্রেসিংরুমে বসে আমাদের বা জুনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে, তখন তারাও আমাদের কাছ থেকেও কিছু শেখার আনন্দ পায়”।