হোসে মানুয়েল দিয়াজ দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে এতদিন এসসি ইস্টবেঙ্গলকে সামলেছেন রেনেডি সিং। দলে উন্নতিও এনেছেন তিনি। কিন্তু তা শুধু রক্ষণে। নতুন স্প্যানিশ হেড কোচ মারিও রিভেরা শুধু রক্ষণ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান না। আক্রমণেও সমান  ভাবে উন্নতি করতে চান। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ফিরতি লিগে নামার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফুটবলে রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য জরুরি। তাই আক্রমণেও সমান ভাল খেলাও জরুরি এবং তিনি দলকে সেই জায়গাতেই আনতে চান। দলের অনেকেরই যে চোট, আইসোলেশন চলছে, তা স্বীকার করে নিয়ে মারিও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দলের সবাইকে বুধবারের ম্যাচে পাবেন না তিনি।

আপনার প্রথম হিরো আইএসএল ম্যাচ এটা। কী চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোবেন?

এই পরিস্থিতিতে দলের মেজাজ বদলানোটা হবে আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। দলের অবস্থা যখন ভাল নয়, তখন মরশুমের মাঝখানে দলের হাল ধরাটা কঠিন। আমাকে দলের খেলোয়াড়দের মানসিকতা বদলাতে হবে। সব দিক থেকেই একটা ভাল জায়গায় আনতে হবে দলকে।

এই দলটা নিয়ে কী বলবেন? দলে কী কী পরিবর্তন চান আপনি?  

লিগ টেবলে যে জায়গায় আছে এই দল, তার তুলনায় কিন্তু ভাল দল এসসি ইস্টবেঙ্গল। আসলে পরিস্থিতি ও আবহাওয়া দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। এখন আমাদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স একত্র করে লিগ টেবলে নিজেদের ওপরে তুলে নিয়ে আসতে হবে। মোটামুটি সবাই জানে যে, আমি টোটাল ফুটবল খেলাতে ভালবাসি, আক্রমণ নির্ভর ফুটবল ভালবাসি। দলের ওঠা-নামা যাতে ঠিকমতো হয়, সে দিকটা জোর দিই। পা থেকে বল খোয়া গেলে কী ভাবে তা আবার ফেরত আনতে হবে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তার পরে আমাদের আক্রমণে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।

কাল চূড়ান্ত এগারো বাছাইয়ের জন্য কি আপনার দলের সবাইকে পাবেন?

না, অসম্ভব। আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড়ের চোট রয়েছে। কয়েকজন আইসোলেশনে রয়েছে। সবাই ভাল আছে। কিন্তু কিছু (কোভিড) পজিটিভ কেস আছে। তাই পুরো দল হাতে পাব বলে মনে হয় না।

গতবার আই লিগে যে ভাবে ইস্টবেঙ্গলের হাল ধরেছিলেন, সেই তুলনায় এ বারে দলকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন?

একই রকমের মানসিকতা নিয়ে হাল ধরতে হবে। পরিস্থিতি প্রায় একই রকমের। তবে আই লিগের খেলোয়াড়দের চেয়ে এখানে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অনেক ভাল। এখন আমাদের দলের মেজাজ বদলাতে হবে। খেলাটাকে উপভোগ করতে হবে। শুধু রক্ষণে জমাটবদ্ধ হলে চলবে না, আক্রমণেও দানা বাঁধতে হবে।

মরশুমের মাঝখানে একটা দলের দায়িত্ব নেওয়া কতটা কঠিন?

সত্যিই কঠিন। কারণ, এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের জানতে ও বুঝধতে হয় খুব দ্রুত। খুব কম সময়ে অনেক কিছু করতে হয়। সবচেয়ে কঠিন অনেক খেলোয়াড় খেলার অবস্থায় না থাকা সত্ত্বেও একটা ভাল দল তৈরি করে। কোয়ারান্টাইনের পরে আমরা একদিনও অনুশীলন করতে পারিনি। এখন যে কজনকে হাতে পেয়েছি, তাদের নিয়েই অনুশীলন করতে হচ্ছে ও দলের উন্নতি করতে হচ্ছে।

এই দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে রেনেডি সিংয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আপনার?

হ্যাঁ, আমি যখন কোয়ারান্টাইনে ছিলাম, তখন কথা হয়েছে। তবে বেশি কথা হয়নি। তবে যতটা কথা বলতে চেয়েছিলাম, তা পারিনি। অল্প স্বল্প কথা হয়েছে ওর সঙ্গে।

গত দুই ম্যাচে খুবই উজ্জীবিত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কোন দর্শন নিয়ে দলকে এগোবেন ও দলের উন্নতি করবেন?

শেষ তিন ম্যাচে খুবই উজ্জীবিত ফুটবল খেলেছে আমাদের ছেলেরা। লড়াই করেছে, প্রচুর দৌড়েছেও। রক্ষণে ওরা শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ফুটবল হল রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। দলকে আরও উন্নতি করতে হবে ডিফেন্সের সঙ্গে অ্যাটাককেও উন্নত করতে হবে।

শেষ প্রশ্ন, মার্সেলোকে (সদ্য যোগ দেওয়া ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড) কি আমরা এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দেখতে পাব?

না এখনই নয়। ও এখনও মাঠে নামার জন্য তৈরি নয়।

ওদের চেয়ে নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত আমি

অন্য দিকে, এফসি গোয়ার কোচ ডেরেক পেরেইরা এসসি ইস্টবেঙ্গলকে কম গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তবে নিজেদের নিয়ে ভাবনাতেই বেশি ব্যস্ত। তবে খুশি যে এই পরিস্থিতির মধ্যেই তাঁর দল ভাল খেলতে পারছে। তাঁর সাংবাদিক বৈঠকের কিছু অংশ তুলে ধরা হল।

আপনাদের বিদেশিদের মধ্যে কজন কোভিড আক্রান্ত?

বিদেশিদের মধ্যে মাত্র একজন আপাতত নেই। বাকিরা সবাই কাল খেলতে পারে।

এসসি ইস্টবেঙ্গল সম্প্রতি খুব ভাল ফর্মে আছে। কালকের ম্যাচ কি আপনাদের কাছে কঠিন হয়ে উঠতে পারে?

গত তিন ম্যাচে ওরা খুব ভাল ডিফেন্স করেছে। রীতিমতো লড়াকু মনোভাব নিয়ে খেলেছে ওদের রক্ষণ বিভাগ। তবে ওদের চেয়ে আমরা নিজেদের নিয়ে বেশি মনোনিবেশ করছি। আমরা ওদের চেয়ে কোথায় কোথায় ভাল করতে পারি। ওদের রক্ষণ কী ভাবে ভাঙতে পারি। ওদের আক্রমণ কী ভাবে রুখতে পারি এবং প্রতি আক্রমণে উঠতে পারি। অন্য যে কোনও ম্যাচে যেগুলো নিয়ে ভাবি, দল হিসেবে আক্রমণে ওঠা ও ডিফেন্স করা নিয়ে বেশি ভাবছি, যাতে ভাল ফল পাওয়া যায়।

এই পরিস্থিতিতে, যখন ম্যাচের আগের দিনও বুঝতে পারছেন না কোন খেলোয়াড়কে পাবেন আর কাকে পাবেন না, এমন একটা সময়ে দলকে প্রস্তুত করা কতটা কঠিন?

নিজের পুরো দল নিয়ে আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও খুশি। বিশেষ করে এই কোভিড-সমস্যার পরে। গত ম্যাচে যারা খেলতে পেরেছিল, তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট ভাল খেলেছে। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেও আমাদের ছেলেরা ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। আক্রমণে আর একটু ধার থাকলে আমরা হয়তো লিগ টেবলে ভাল জায়গায় থাকতাম।

গত দুই ম্যাচে তিন ব্যাকে খেলছে আপনার দল, যেখানে চার ব্যাকে খেলতে অভ্যস্ত আপনারা। এটা কি কৌশলগত কারণে, না কোভিড পরিস্থিতির জন্য?

এই সিস্টেমটা আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই চালু হয়েছে। আমি এসে আর এটা বদলাতে চাইনি। এই সিস্টেমটার সঙ্গে আমরা ক্রমশ মানিয়ে নিচ্ছিলাম। যেহেতু আমাদের ডিফেন্স ভাল, তাই এই সিস্টেমে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। দল হিসেবে ভাল খেলছি আমরা। গত কয়েকটা ম্যাচে আমরা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছি, যেটা শুরুর দিকে পারছিলাম না। সে জন্যই এই সিস্টেমই চলছে।