এই জয়ই পরবর্তী ডার্বিতে বাড়তি শক্তি জোগাবে, বলছেন, শুভাশিস, গ্রেগ, জেমিরা
‘লিগ টেবলের শীর্ষে ওঠার জন্য এই ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ঠিক করি, এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। দলের সবাই খুব ভাল খেলেছে। রক্ষণ থেকে আক্রমণে প্রত্যেকে সেরাটা দিয়েছে’।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইস্টবেঙ্গল এফসি শিবিরে একটাই কথা ঘোরাফেরা করছে— একটা জয়ই তাদের দলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। সেই জয়ের খোঁজ এখনও পায়নি তারা। কিন্তু সত্যিই যে একটা জয় একটা দলের ড্রেসিংরুমের চেহারা পাল্টে দিতে পারে, তা শনিবার রাতে মোহনবাগান এসজি শিবিরকে দেখেই বোঝা গেল।
গত মাসের শেষ সপ্তাহে বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে তিন গোলে হারার পর যখন মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে ডার্বিতে তাদের প্রিয় দল জয়ে ফিরতে পারবে কি না, এই আশঙ্কায় ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা, তখন অসাধারণ ও দাপুটে ফুটবল খেলে তিন গোল দিয়ে জয়ে ফিরে আসে সবুজ-মেরুন বাহিনী। শনিাবারের এই জয়ের পর থেকেই বাগান-শিবিরের ফুটবলারদের শরীরে ভাষাই বদলে গিয়েছে। তাঁদের কথাবার্তাতেও সেই আত্মবিশ্বাস ও খুশির স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
শনিবার মহমেডান এসসি-কে ৩-০-য় হারানোর পর দলের অধিনায়ক শুভাশিস বোস সাংবাদিকদের বলেন, “বেঙ্গালুরুতে হারের পর আমাদের মনে হয়েছিল, সব ম্যাচে হারতে পারি না আমরা। আর আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। এটাই আমাদের মোটিভেশন ছিল। আমাদের লিগ টেবলের শীর্ষে ওঠার জন্য এই ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ঠিক করি, এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। দলের সবাই খুব ভাল খেলেছে। রক্ষণ থেকে আক্রমণে সবাই প্রত্যেকের সেরাটা দিয়েছে। সে জন্যই তিন পয়েন্ট আনতে পেরেছি”।
গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের বোঝাপড়ায় মোহনবাগানের আক্রমণে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এই ম্যাচে। আট মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস বোস এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট। কিন্তু সারা ম্যাচে যে পরিমান গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে অনেক বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা।
দলের দুই বিদেশী সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ ও টম অ্যালড্রেজ একসঙ্গে খেলায় এ বারের আইএসএলে এই প্রথম নিজেদের গোল অক্ষত রাখতে পারল তারা। এর আগে চলতি মরশুমে টানা ছ’টি ম্যাচে ১৪ গোল খেয়েছে মোহনবাগান (ডুরান্ড কাপ ও আইএসএলে)। এত দিন পরে গোল অক্ষত রাখতে পেরে খুশি ও স্বস্তি দুটোই দেখা গেল বাগান শিবিরের বাঙালি ডিফেন্ডারের অভিব্যক্তিতে। এই প্রসঙ্গে শুভাশিস বলেন, “ক্লিন শিট রাখতে পারলে ডিফেন্ডার হিসেবে অবশ্যই ভাল লাগে। প্রতি ম্যাচেই সেই চেষ্টা থাকে। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ম্যাচ জেতা। যত আমরা কম গোল খাব, তত দলের ম্যাচ জিততে সুবিধা হবে। দল হিসেবে নিখুঁত খেলেছি আমরা। আমাদের খেলায় ভারসাম্য ছিল। সারা মরশুমে এ রকম খেলে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য”।
কয়েকদিন আগে দলের স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্ট দলের এই ধারাবাহিক ভাবে গোল হজম করা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। এতদিন পরে দল গোল না খাওয়ায় খুশি তিনিও। ম্যাচের পর যুবভারতীর মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “গত ম্যাচে হারের পর আমাদের আজ প্রমাণ করার ছিল, আমরা কতটা ভাল খেলতে পারি। সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে। আলবার্তো (রড্রিগেজ) ফিরে আসায় আমাদের রক্ষণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দলের ছেলেরা সবাই নিজেদের নিরাপদ মনে করে খেলতে পারছে। পরের ম্যাচগুলোতেও আশা করি আমরা এ রকমই মানসিক শক্তি নিয়ে খেলতে পারব”।
স্টুয়ার্ট জানান, তাঁর সঙ্গে জেমি ম্যাকলারেনের ভাল বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। বলেন, “আমরা এর আগেও একসঙ্গে খেলেছি। আমাদের স্কটিশ যোগও রয়েছে। তাই আমরা মাঠে ও মাঠের বাইরে পরষ্পরের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পারছি। গত ম্যাচে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। তাই সমর্থকদের জন্য এই ম্যাচে ভাল খেলাটা খুবই দরকার ছিল। সমর্থকদের কাছে ডার্বির গুরুত্ব কতটা, তা তো আমরা জানি। তাই এই ম্যাচে তাদের জয় উপহার দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে”।
শনিবার যুবভারতীর ম্যাচের প্রথম গোলদাতা অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম গোল করার অনুভূতি নিয়ে বলেন, “মোহনবাগানের হয়ে নেমে প্রথম গোল করার অনুভূতিটা অবশ্যই দুর্দান্ত। অসাধারণ একটা ম্যাচ খেললাম আমরা। খুবই উপভোগ করেছি এই ম্যাচ এবং স্টেডিয়ামের পরিবেশ। এ মরশুমে এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের খেলা সেরা ম্যাচ। গত ম্যাচে হারার পর জয়ে ফেরাটা খুবই জরুরি ছিল। দলের প্রত্যেকেই ভাল খেলেছে। এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের রক্ষণ ভাল হলে, আক্রমণও জোরদার হয়। এ ভাবেই সারা মরশুম খেলে যেতে হবে”।
দলের রক্ষণ নিয়ে খুশি অধিনায়ক শুভাশিস। তিনি বলেন, “আজ আমাদের রক্ষণে আলবার্তো আর টম দুজনেই ভাল খেলেছে। ওদের পারফরম্যান্সের জন্য দলের অনেক উপকার হয়েছে। দীপ্পেন্দুও রক্ষণে ভাল খেলেছে। ওর কম বয়স, যত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে, তত নিজেকে আরও উন্নত করে তুলবে। আমাদের স্কোয়াডে যত খেলোয়াড় আছে, প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ”।
শনিবারের ম্যাচের প্রতিপক্ষ মহমেডান তাদের প্রথম তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স এই ম্যাচে তুলে ধরতে না পারলেও, তাদের কম শক্তিশালী মনে করতে নারাজ শুভাশিস। তিনি বলেন, “মহমেডান মোটেই দুর্বল দল নয়। গত তিন ম্যাচে ওদের পারফরম্যান্সই তা বুঝিয়ে দিয়েছে। একটা ম্যাচে ওরা একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়েছে। একটা ম্যাচে জিতেছে। ওরা শক্তিশালী দল। ওদের বিরুদ্ধে আমরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়েছি এবং দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলতে পেরেছে বলেই আমরা ওদের হারাতে পেরেছি”।
আন্তর্জাতিক অবকাশের পর যখন ফের আইএসএল শুরু হবে, তখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল একে অপরের মুখোমুখি হবে ১৯ অক্টোবর। বাগান শিবির এখন সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। তবে ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাল না। যা মনে করিয়ে দিতে শুভাশিস বলেন, “এর কোনও প্রভাব ইস্টবেঙ্গলের ওপর পড়বে না। ডার্বি পুরো অন্য রকম একটা ম্যাচ। পুরো মরশুমে সব ম্যাচে হারলেও ডার্বিতে জেতার জন্য তারা অন্য রকমের উদ্যম নিয়ে মাঠে নামবে। যে দল পরপর অনেকগুলো ম্যাচ হেরেছে, তারা জয়ে ফিরতে চাইবেই। বেঙ্গালুরুর ম্যাচের কথা ভুলে গিয়ে আমরা মহমেডান ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এই জয়টা দলকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ১৯ তারিখ ডার্বির আগে এই জয় আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবে”।