এসসি ইস্টবেঙ্গলের অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিং-এর প্রথম কাজই হল এখন এক ঝাঁক হতাশ ও দিশাহারা ফুটবলারকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করা ও নতুন দিশা দেখানো। গত এক সপ্তাহ ধরে দলের ফুটবলারদের নিয়ে অনুশীলন করার পরে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কের ধারণা, তাঁর দলের ছেলেরা চাঙ্গাই রয়েছেন এবং ভাল ফুটবল খেলার জন্য তৈরি। মঙ্গলবার তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সুনীল ছেত্রীর দলের বিরুদ্ধে দল নামানোর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কী বললেন রেনেডি, জেনে নেওয়া যাক।

নতুন বছরে এসসি ইস্টবেঙ্গলে নতুন কী কী পরিবর্তন আসছে?

আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এর আগে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, সেই ম্যাচে খারাপ খেলিনি আমরা। পরের তিন-চারটে ম্যাচে আমি দলের দায়িত্বে থাকব। ছ’দিন সময় পেয়েছি ছেলেদের সঙ্গে কাজ করার জন্য। ওরা এই কদিনে খুবই পরিশ্রম করেছে। আমি সেজন্য খুশি। এটা ধরে রাখতে হবে এবং এই ম্যাচে লড়াই করতে হবে। গত পাঁচ-ছ’দিনে আমাদের ছেলেরা যা করেছে, কালকের ম্যাচে সেটাই করে দেখাতে হবে।

দলে কোনও চোট-আঘাত সমস্যা রয়েছে?

তিন বিদেশিকে পাব না। আন্তোনিও সাসপেন্ড হয়ে আছে। ফ্রানিও ও ড্যারেনর চোট। ওরাও খেলতে পারবে না। রাজু, জ্যাকিচন্দেও চোট এখনও সারেনি। ওর পায়ে চোট হয়। তবে যারা রয়েছে, তারা লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট তৈরি।

এই নতুন ভূমিকা পালন করার জন্য কী ভাবে নিজেকে তৈরি করছেন?

এটা করা সত্যিই কঠিন। এই ক্লাবের নীচে নেমে যাওয়াটা কেউ মেনে নিতে পারে না। আমার কাছে এটা বড় চ্যালেঞ্জ, কঠিনও। আমরা যে আরও ভাল খেলতে পারি, তার প্রমাণ দেওয়ার সবচেয়ে ভাল সময় এটা। আমাদের মাঠে স্বাভাবিক থেকে এর জবাব দিতে হবে। কঠিন। কিন্তু আমরা পারব।

খেলোয়াড়জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন কখনও?

১৯ বছরের ফুটবল জীবনে অনেক ওঠা পড়া দেখেছি। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এটা স্বাভাবিক। দলের সাপোর্ট স্টাফ, সদস্যরা এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে গেলে চলবে না। ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। দল হিসেবে পরিশ্রম করলে আমরা ভাল ফল করব, আশা করি।

দলে যেখানে ভারতীয় ফুটবলারের সংখ্যা বেশি, সেখানে ভারতীয় কোচ হিসেবে আপনার কাজটা কি কিছুটা হলেও সোজা হবে?

যে কোনও কোচের কাছেই দেশীয়, বিদেশি, সব ধরনের ফুটবলারই সমান হওয়া উচিত। তাদের ঠিকমতো গাইড করতে জানা চাই। সুতরাং কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দলকে কী করে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তুলছেন?

খেলোয়াড়রা হতাশ হয়ে পড়লে তাদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করা সোজা নয়। তবে গত ছ’দিন ধরে ছেলেদের মধ্যে যে স্বতস্ফূর্ত আচরণ দেখছি প্র্যাকটিসে, তাতে অভিযোগ করার জায়গা নেই। আমি চাই এই পরিশ্রমগুলো ওরা কালকের ম্যাচে করুক। একদিনে তো আর সব বদলে দেওয়া যায় না। সময় লাগে। তবে আমাদের এক থাকতে হবে, দল হিসেবে লড়তে হবে।

মারিও রিভেরার সঙ্গে কথা হয়েছে তোমার?

এখনও কথা হয়নি। তিন-চারটে ম্যাচে আমাকে দলের দায়িত্ব নিতে হবে। তার পরে মারিওর সঙ্গে কথা হবে।

অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে কৌশল ও টিম ফর্মেশনে কী কী পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন?

আমরা সবচেয়ে খারাপ খেলি নর্থইস্টের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে খেলোয়াড়রা যে ভাবে হাল ছেড়ে দিয়েছিল, তা মোটেই পছন্দ হয়নি আমার। তবে পরে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা যে পরিপূর্ণ লড়াই দিয়েছিলাম, সেটা আমার খুবই ভাল লেগেছে। গত ছ’দিনে আমি সেই ম্যাচের কথা মাথায় রেখে তার চেয়েও ভাল খেলার দিকে জোর দিয়েছি। আক্রমণে বা রক্ষণের সময় মাঝমাঠ ফাঁকা রাখলে চলবে না। দেখা যাক পরের ম্যাচে ছেলেরা এই লড়াইটা করতে পারে কি না।

আপনার প্রাক্তন সতীর্থ সুনীল ছেত্রীর ফর্মে না থাকাটা কি আপনার দলের পক্ষে সুবিধাজনক হবে?

কোনও সুবিধা হবে না। সুনীল ছেত্রী কী করতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। সুনীল ছেত্রী যে কোনও মুহূর্তে ফর্মে ফিরে আসতে পারে। ওর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে এবং ওর প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেই হবে। তবে শুধু সুনীল নয়, পুরো দলটাকেই আটকাতে হবে।

জানুয়ারির দলবদলে কোন কোন জায়গায় নতুন ফুটবলার আনার কথা ভাবছেন আপনারা?

এই মুহূর্তে আমাদের সামনে যা আছে, তার ওপর মনোনিবেশ করছি। নিজেদের উন্নতির কথা ভাবছি, কী ভাবে কঠিন জায়গা থেকে নিজেদের বার করে নিয়ে আসা যায়, সেই চিন্তাই করছি। অনেকেই অনেক খেলোয়াড়ের সমালোচনা করছেন। তবে কোচেদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। আশা করি, কাল ওরা ভাল ফুটবল খেলবে।

ভাল খেলছে না এমন দলের বিরুদ্ধে খেলাটা কী বাড়তি চাপের?

আমার তা মনে হয় না। গত মরশুমেও আমাদের এ রকম হয়েছিল। এখন কোচদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমি তো বললামই এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং এই চ্যালেঞ্জটা আমি পছন্দ করি। শেষ পর্যন্ত লড়ব। তবে চ্যালেঞ্জ জিততে গেলে পুরো দলকেই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আশা করি ছেলেরা তৈরি আছে।

ওরা কেমন স্টাইলে খেলবে, তা ঠিক জানা নেই

বেঙ্গালুরু এফসি-র কোচ মার্কো পেজাউওলি প্রতিপক্ষকে কম গুরুত্ব দিতে একেবারেই নারাজ। কারণ, অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডির প্রশিক্ষণে এই দলকে খেলতে দেখেননি তিনি। তাই অনেকটা আন্দাজের ওপর ভর করে এই ম্যাচে এগোতে চান তিনি। গত ম্যাচে যে ভাবে চেন্নাইন এফসি-কে হারিয়েছিলেন, সে ভাবেই এই ম্যাচেো জিততে চান তিনি। সোমবার তাঁর সাংবাদিক বৈঠকের কিছু অংশ তুলে ধরা হল।

প্রতিপক্ষ এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গে

ওরা এখন নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তাই ওরা কেমন স্টাইলে খেলবে, তা ঠিক জানা নেই। নির্দিষ্ট ভাবে ওদের জন্য তৈরি হতে পারিনি আমরা। তবে বরাবরের মতো ভাল খেলার জন্য অনুশীলনে পরিশ্রম করছি।

দলের চোট-আঘাত সমস্যা নিয়ে

লিয়ন অগাস্টিন ও মুসাভু কিং চোটের জন্য এই ম্যাচে খেলতে পারবে না। ব্যক্তিগত কারণে সার্থক গলুইকেও পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ৪-২ জয় প্রসঙ্গে

সে দিন প্রতীক চৌধুরি ও উদান্ত সিং পরিবর্ত হিসেবে নেমে অনেকটা তফাৎ গড়ে দেয়। সাফল্য ফুটবলারদের শক্তি জোগায়। প্রথম দুটো পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম আমরা। কিন্তু শেষ দুটো পেনাল্টিতে সাফল্য পেয়েছি। এই ব্যাপারগুলোই তফাৎ গড়ে দেয়। কৌশলগত পরিবর্তন সে দিনের ম্যাচে কাজে লেগেছিল। প্রথমে চার ব্যাক থেকে যখন তিন ব্যাকে গেলাম, তখন বল পজেশন বাড়ে আমাদের। ফুটবলে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগোতে হয়। আমরাও ধাপে ধাপে এগোচ্ছি এবং তা পারফরম্যান্সেই নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে।