এটিকে মোহনবাগানের দ্বিতীয় হলেও শনিবার চতুর্থ হিরো আইএসএল ফাইনাল খেলতে নামছেন তিনি। এর আগের তিনটির মধ্যে দুটিতেই হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছেন। তখন অন্য জার্সি পরতেন। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ট্রফি হাতে তোলা হয়নি প্রীতম কোটালের। শনিবার সেই সুযোগ আরও একবার এসেছে তাঁর সামনে। এ বার আর তা হাতছাড়া করতে চান না এটিকে মোহনবাগানের অধিনায়ক।

শনিবার সন্ধ্যায় ফতোরদার পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে চলতি হিরো আইএসএল ফাইনালে মুকোমুখি হতে চলেছে এটিকে মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি। এই খেতাবী লড়াইয়ে নামার আগে indiansuperleague.com কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরপাড়ার প্রীতম কোটাল বললেন, “এর আগে তিনটে আইএসএল ফাইনালে খেলে দুটোতে জিতেছি। এটা চার নম্বর ফাইনাল। তিন নম্বর আইএসএল ট্রফিটা ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করব”।

হিরো আইএসএলে ১৪২টি ম্যাচ খেলা সবুজ-মেরুন অধিনায়কের মতে, তাঁদের দলের যা শক্তি, সেই অনুযায়ী খেলতে পারলে এ বার তাঁদেরই চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত। বলেন, “ফাইনাল ম্যাচটা আমাদের ক্লাবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুটো ভাল দল ফাইনালে উঠেছে। ভাল খেলা হবে। আমাদের একশো শতাংশ চেষ্টা থাকবে যাতে ট্রফি নিয়ে আমরা কলকাতায় ফিরতে পারি। ফাইনালে তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই নামব। আমাদের দলের যে শক্তি আছে, সেই অনুযায়ী যদি আমরা খেলতে পারি এবং দল হিসেবে খেলতে পারি, তা হলে আশা করি, ভাল ফল করেই মাঠ ছাড়তে পারব”। 

হিরো আইএসএলের অভিষেক মরসুমেই ফাইনালে উঠেছিল এটিকে মোহনবাগান। ২০২০-২১ মরশুমের সেই ফাইনালে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-১ থাকার পরে স্টপেজ টাইমে বিপিন সিংয়ের দেওয়া গোলে তাদের হারিয়ে খেতাব জিতে নেয় মুম্বই সিটি এফসি। এ বার আর সেই ভুল করবেন না, এমন সংকল্প নিয়েই মাঠে নামবেন প্রীতমরা।

সে বারের তুলনায় এ বার তাদের রক্ষণ অনেক শক্তিশালী এবং গোছানো। ফাইনালে নামার আগে ১২টি ম্যাচে গোল খায়নি এটিকে মোহনবাগান। এ জন্য গোল্ডেন গ্লাভজয়ী গোলকিপার বিশাল কয়েথের যেমন কৃতিত্ব রয়েছে, তেমনই তাঁর সতীর্থ ডিফেন্ডারদের অবদানও কম নয়। রক্ষণের অন্যতম প্রধান ভরসা প্রীতম নিজেদের রক্ষণ নিয়ে বললেন, “যে ভাবে আমাদের রক্ষণকে এখন গুছিয়ে নিতে পারছি আমরা, তাতে আশা করি, ফাইনালেও ক্লিন শিট রাখতে পারব। এ জন্য বিশালেরও কৃতিত্ব রয়েছে। যে ভাবে আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে কমিউনিকেট করে ও, তার প্রশংসা করতেই হবে। এই ম্যাচে ও গোল না খেলে একটা নজির তৈরি করবে। ও যাতে এই গৌরব অর্জন করতে পারে, ডিফেন্ডার হিসেবে সেই চেষ্টা তো অবশ্যই থাকবে”।     

প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু এফসি টানা এগারোটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে নামছে। একসময় তারা লিগ টেবলের দশ নম্বরে ছিল। সেখান থেকে উঠে এসে ফাইনাল খেলছে তারা। সুনীল ছেত্রীর দলের প্রশংসা করেন প্রীতম। তবে নিজেদের ‘টিমগেম’ নিয়েও গর্বিত তিনি। বলেন, “বেঙ্গালুরুর কাউন্টার অ্যাটাক খুব ভাল। এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা দুটো উইং দিয়ে যে গতিতে উঠি, সেটা আমাদের বজায় রাখতে হবে। পাসিং ফুটবল খেলে জায়গায় তৈরি করে আমরা যে আক্রমণে উঠি, সেটা আমাদের প্লাস পয়েন্ট। আক্রমণে লিস্টন, মনবীর, আশিকদের নেতৃত্ব দেয় দিমি। রক্ষণও আমাদের যথেষ্ট ভাল। এই টিমগেমই আমরা গত কয়েকটা ম্যাচে খেলে আসছি এবং এটাই আমাদের সফল হতে সাহায্য করে। সবাই একসঙ্গে লড়ব। জিতলে একসঙ্গে জিতব, হারলেও একসঙ্গেই হারব”।

বেঙ্গালুরু শিবিরে একাধিক ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা গত মরশুম পর্যন্ত প্রীতমদের সতীর্থ ছিলেন। রয় কৃষ্ণা, সন্দেশ ঝিঙ্গন, প্রবীর দাসদের পাশাপাশি হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, জয়েশ রানেও একসময়ে প্রীতমের সতীর্থ ছিলেন। সেই প্রাক্তন সতীর্থরাই এ বার ফাইনালে শত্রুপক্ষে থাকছেন ও বেঙ্গালুরুর ভরসা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। শনিবার মাঠে নেমে অবশ্য সেইসব দিনগুলোর কথা ভুলে যেতে চান প্রীতম। বলেন, “ফুটবলাররা তো দলবদল করেই। প্রবীররা আমাদের ভাল বন্ধু আগেও ছিল এখনও আছে। কিন্তু মাঠে যখন খেলা শুরু হয়ে যাবে, তখন কেউ কারও বন্ধু না। ওরাও চাইবে ওদের দলের জন্য সেরাটা দিতে, আমরাও তা-ই চাইব। খেলা শেষ হয়ে গেলে মাঠের বাইরে সবাই আমার বন্ধু”।

শনিবারের ফাইনালে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত সমর্থকদের পাশে চান প্রীতম। তিনি মনে করেন সমর্থকদের শুভেচ্ছাই তাঁদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমর্থকদের অনুরোধ করব, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন, আমরা যেন ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারি এবং আপনারাও আমাদের আশীর্ব্বাদ করুন যেন ভাল খেলতে পারি। আপনাদের সমর্থন ছাড়া আমরা কিছুই না। এই সমর্থন যেন শনিবার ফাইনালে ভরপুর পাই আমরা। বাংলার ফুটবলের সন্মানের জন্য এই ট্রফিটা খুবই জরুরি”।