ফোকাস: চেন্নাইয়ে লিস্টনদের কাজ আরও কঠিন করে তুলতে পারেন প্রীতম!
গত মরশুমে কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দেওয়ার পর আইএসএলে ১৯টি ম্যাচ খেলেন প্রীতম। এ মরশুমে ১৪টি। গতবার চারটি ম্যাচে গোল অক্ষত রেখেছিলেন। কিন্তু এ মরশুমে একটিও ক্লিন শিট রাখতে পারেননি।

এক সময় তিনি ছিলেন মোহনবাগানের দলনেতা। সবুজ-মেরুন রক্ষণে তিনি ছিলেন অন্যতম স্তম্ভ। মোহনবাগানের ‘ঘরের ছেলে’-দের তালিকায় তিনি অবশ্যই থাকবেন। সেই প্রীতম কোটাল এখন বাংলার বাইরে। ছিলেন কেরালা ব্লাস্টার্সে। সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন চেন্নাইন এফসি-তে, মঙ্গলবার যাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে মোহনবাগান। চেন্নাইন এফসি-র জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচেই তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন প্রীতম, মঙ্গলবারের ম্যাচে অবশ্যই এটি হতে চলেছে একটি বিশেষ ঘটনা এবং এই ঘটনার দিকে নজর থাকবেই ফুটবল মহলের।
এত দিন চেন্নাইন এফসি-র রক্ষণ যে তেমন শক্তিশালী ছিল না, তারা যে রক্ষণের দুর্বলতার কারণে অনেক গোল খেয়েছেন, সোমবার তা স্বীকারই করে নেন তাদের সহকারী কোচ নোয়েল উইলসন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা এত দিন পূর্ণ শক্তির চার ব্যাক নিয়ে খেলতে পারিনি। যার ফলে প্রায়ই ম্যাচের শেষ দিকে অনেক গোল খেয়েছি। গত দুই ম্যাচে শেষ দিকে গোল খাওয়ার জন্যই আমরা দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ড্র করি। সে জন্যই আমরা প্রীতমের মতো একজন অভিজ্ঞ ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন ডিফেন্ডারকে নিয়েছি, যে রক্ষণে আমাদের ভরসা জোগাতে পারবে। আশা করি, প্রীতম মাঠে নামলে আমাদের রক্ষণ ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করতে পারবে, যা আমাদের এখন খুবই দরকার”।
গত মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ছেড়ে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-তে যোগ দেওয়ার পর আইএসএলে ১৯টি ম্যাচ খেলেন প্রীতম। এ মরশুমে তাদের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেন বাংলার এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। গতবার চারটি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ মরশুমে এখন পর্যন্ত একটিও ক্লিন শিট রাখতে পারেননি তিনি। চেন্নাইনে রায়ান এডওয়ার্ডস, লালদিনপুইয়া, লালদিনলিয়ানা রেন্থলেই, অঙ্কিত মুখার্জিদের সঙ্গে তিনি কত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবেন, সেটাই দেখার।
মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা তাঁর দলের বিরুদ্ধে প্রীতমের খেলা নিয়ে বলেছেন, “এটিকে-তে প্রীতম আমার দলে ছিল। ভাল খেলোয়াড় ছিল ও। আমাদের বিরুদ্ধে চেন্নাইন ওকে খেলাবে কি না, তা তো বলতে পারব না। তবে আমাদের বিরুদ্ধে ও খেললে ভাল। তবে আশা করব, ও যেন আমাদের বিরুদ্ধে না খেলতে পারে। যদিও খেলে, যেন ভাল না খেলতে পারে”। পরিসংখ্যান বলছে তাদের ম্যাচগুলির শেষ ১৫ মিনিটে চেন্নাইন এফসি এ পর্যন্ত ১১টি গোল খেয়েছে। আর কোনও দল শেষ কোয়ার্টারে এত গোল খায়নি। প্রীতমকে সই করিয়ে এই সমস্যাই দূর করতে চায় চেন্নাইন। তবে মোহনবাগানের ধারালো আক্রমণ সামলানো তাঁর পক্ষে যে মোটেই সহজ হবে না, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আইএসএলে মোহনবাগানের হয়ে ৬৮টি ম্যাচ খেলেছেন প্রীতম। এর মধ্যে দু’টি গোল করেছেন ও দু’টি করিয়েছেন। ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন ২৭টি ম্যাচে। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তাঁর ক্লিয়ারেন্সের সংখ্যা ১৯৪। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৮৫টি করে ক্লিয়ারেন্স করেছেন। ব্লক করেছেন ৩৮ বার। কলকাতার দলের হয়ে ১৪৩টি ইন্টারসেপশন করেছেন, যার গড় ২.১০। ট্যাকলে সাফল্যের হার ৬৩.৬৪ শতাংশ।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি আইএসএল ম্যাচ খেলেছেন উত্তরপাড়া থেকে উঠে আসা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। তবে একটিও ক্লিন শিট রাখতে পারেননি। গত মরশুমে ব্লাস্টার্সের হয়ে মাঠে নেমে মোহনবাগানকে ১-০-য় হারিয়েছিলেন। ফিরতি লিগে ৩-৪ গোলে হেরে যান। এ বার ২-৩ গোলে হারেন। প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে এই তিন ম্যাচে তাঁর আটটি ক্লিয়ারেন্স, চারটি ইন্টারসেপশন ও ৭৫ শতাংশ সফল ট্যাকল রয়েছে। সব মিলিয়ে দারুন কিছু না হলেও খারাপও কিছু না।
এ বার নতুন জার্সিতে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে রোখার চেষ্টা শুরু করবেন প্রীতম। ফের একবার লিস্টন, মনবীর, ম্যাকলারেন, কামিংস, পেট্রাটসদের আটকানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নামতে চলেছেন তিনি। সতীর্থদের সঙ্গে তাঁর গড়া প্রতিরোধ কতটা শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে, তা তো ম্যাচেই বোঝা যাবে। কিন্তু এ বার যে মোহনবাগানকে আটকানো তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। উল্টোদিকে প্রীতম ও তাঁর সতীর্থদের তৈরি রক্ষণে ফাটল ধরিয়ে তাদের জালে বল জড়ানো হতে চলেছে মোলিনার দলের কাছে বড় পরীক্ষা।