এত দিন সেরা ছয়ে থাকার দৌড়ে টিকে থাকার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু গত তিনটি ম্যাচে টানা হারের পর আপাতত তাদের লক্ষ্য শেষ ছয়ের মধ্যে যথাসম্ভব ওপরে থেকে লিগ শেষ করা। যাতে অন্তত গত দু’বারের মতো একেবারে নীচে থেকে শেষ করতে না হয়। 

দলের ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন বলেই রেখেছেন, এখন দলটা তিনি তৈরি করছেন, যাতে পরের মরশুমে  তারা ভাল খেলে ও প্রথম ছয়ে থাকতে পারে। কিন্তু গত দুই মরশুমে লিগ টেবলের একেবারে নীচে থাকার জ্বালা সহ্য করা সমর্থকদের আর কোনও ভাবেই সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছে না। আবার যেটা বাস্তব, সেটা মেনে নিতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। 

চলতি হিরো আইএসএলে গত ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতেই হারা লাল-হলুদ বাহিনীর এখন আর কিছু হারানোর নেই। তাই প্রজাতন্ত্র দিবসের সন্ধ্যায় এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তারা কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

ভারসাম্যের সমস্যা লাল-হলুদ শিবিরে 

গত ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে দু’গোলা হার তাদের সব আশা শেষ করে দিয়েছে। সে দিন হারলেও তারা কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। ক্লেটন সিলভা দুটো সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া না করলে ছবিটাই অন্যরকম হত। সারা ম্যাচে অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। আক্রমণেও খামতি ছিল না তাদের। কিন্তু বারবার গোলের মুখে গিয়ে আটকে যান তাঁরা। তবে কমলজিৎ সিং তাদের গোলে না থাকলে হায়দরাবাদ আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত। পাঁচটি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দলকে আরও বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচান তিনি। 

দেখা যাচ্ছে আক্রমণে যতটা শক্তিশালী এবং তৎপর ইস্টবেঙ্গল এফসি, রক্ষণে ততটাই দুর্বল তারা। এবং এর জন্য বারবার মাশুল দিতে হয়েছে তাদের। ম্যাচের পর ম্যাচ এগিয়ে গিয়েও একাধিক গোল খেয়ে হারতে হয়েছে তাদের। দলের মধ্যে যে একেবারেই ভারসাম্য নেই, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।   

গত তিন ম্যাচে না হারলে স্টিফেন কনস্টান্টাইনের দল হয়তো সেরা ছয়ের দিকে আরও দু’কদম এগোতে পারত। কিন্তু এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরপর তিনটি  ম্যাচে হেরে বসে তারা। প্রথমে পাঁচ নম্বরে থাকা ওডিশা এফসি (১-৩), নিজেদের চেয়ে এক ধাপ নীচে থাকা জামশেদপুর এফসি (১-২) এবং গত ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে হার। এই তিন হার তাদের প্রথম ছয় থেকে এতটাই দূরে সরিয়ে দিয়েছে যে, এখন তাদের আর সে দিকে তাকিয়ে খুব একটা লাভ নেই। একমাত্র পরপর একঝাঁক অঘটনই তাদের সেরা ছয়ে নিয়ে যেতে পারে। 

পরের দুই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে এফসি গোয়া ও কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, যারা সবাই এখন প্রথম ছয়ে রয়েছে। তাই অঙ্ক যাই বলুক, লাল-হলুদ বাহিনীর সেরা ছয়ে থেকে লিগ শেষ করার বাস্তব সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। 

ঘরের মাঠে রাজা 

এফসি গোয়া টানা চারটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে নিজেদের মাঠে ৩-১-এ হারিয়ে জয়ের রাস্তায় ফিরেছে। এই জয়ের পরেই তারা প্রথম ছয়ে ঢুকে পড়ে। এখন তাদের কাজ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আর সামনে ইস্টবেঙ্গলের মতো দল পেলে যে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে তারা মরিয়া হয়ে উঠবেই, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 

ঘরের মাঠে বেশ ভাল পারফরম্যান্স গোয়ার দলের। সাতটি হোম ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টিতে হেরেছে তারা। কেরালা ব্লাস্টার্সকেও ঘরের মাঠেই হারিয়েছে তারা। এ বার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয় না পেলে, সেটা হবে বড় অঘটন। মাঝমাঠে যেখানে ইকার গুয়ারেতজেনার মতো তারকা রয়েছেন, সেখানে অবশ্য তাদের চিন্তা করার কথা নয়। এ পর্যন্ত সাতটি গোল করে ফেলেছেন এই স্প্যানিশ তারকা। তাঁর সামনে নোয়া সাদাউই ও আলভারো ভাসকেজের মতো ফরোয়ার্ডরা খেলেন। তাই দলটার গোল করা নিয়ে কোনও সমস্যাই নেই। ইস্টবেঙ্গলের দুর্বল রক্ষণকে ছত্রাকার করতে তাদের বোধহয় খুব বেশি সময় লাগবে না। 

গত ম্যাচে জয়ের আগে তারা চারটি ম্যাচ থেকে দু’পয়েন্ট পেয়েছিল। সেই দুঃসময় থেকে দলটা বেরিয়ে আসার পরে আর সেই সময়ে ফিরে যেতে চাইবে বলে মনে হয় না। তাই এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র চ্যালেঞ্জ বেশ কঠিন।   

দ্বৈরথের ইতিহাস

হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে পাঁচবার। গোয়া জিতেছে দু’বার। ইস্টবেঙ্গল একবার। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে। দু’বারই ড্র হয় ১-১-এ, ২০২০-২১ মরশুমে। গত মরশুমে প্রথম লেগে এফসি গোয়া ৪-৩-এ জেতে এবং ফিরতি লেগে ২-১ জিতে তার বদলা নিয়ে নেয় ইস্টবেঙ্গল। চলতি মরশুমের প্রথম সাক্ষাতে ২-১-এ জেতে এফসি গোয়া।   

ইস্টবেঙ্গল স্কোয়াড: গোলকিপার- পবন কুমার, কমলজিৎ সিং; ডিফেন্ডার- সার্থক গলুই, মহম্মদ রফিক, ইভান গঞ্জালেজ, চারালাম্বোস কিরিয়াকু, অঙ্কিত মুখার্জি, লালচুঙনুঙ্গা, জেরি লালরিনজুয়ালা, প্রীতম কুমার সিং, নবি হুসেন খান; মিডফিল্ডার- অমরজিৎ সিং কিয়াম, তুহীন দাস, আঙ্গুসানা ওয়াহেংবাম, অ্যালেক্স লিমা, শৌভিক চক্রবর্তী, জর্ডান ও’ডোহার্টি, মহেশ সিং নাওরেম, মোবাশির রহমান, সুমিত পাসি, হিমাংশু জাঙরা; ফরোয়ার্ড- এলিয়ান্দ্রো, ক্লেটন সিলভা, সেম্বয় হাওকিপ, ভিপি সুহের।   

কিক অফ- ২৬ জানুয়ারি, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়, মারগাঁওয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। 

সম্প্রচার- স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক, হটস্টার ও জিও টিভিতে।